দিন গুলো খারাপ যাচ্ছে ।পাশের জন ছিল তারাই দূরে সরে যাচ্ছে,আর যাদের পাশে পাব ভেবেছিলাম তারাও দূরে ঠেলে দিচ্ছে।তবে এই দুঃসময়ে আমার পাশে নিভৃতে সঙ্গ দিচ্ছে কয়েকটা বই ।যাদের আমি ভুলেই গেছিলাম গত ১৫ বছর ।নিজেকে মানষিক ভাবে বিপর্যুস্ত মনে হচ্ছিলো খুব ।ভালো একজন মনোবিজ্ঞানীর সাথে আলাপ করতে ভালো হতো ।রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্যাম্পে ,রিফিউজিদের জন্য মানষিক রোগ নিরাময় কেন্দ্র আছে ।যাই হোক ,একদিন সময় করে ,মানুষিক রোগ নিরাময় কেন্দ্রে নিজের নিরাময়ের জন্য উপস্থিত হলাম ।বাশের বেড়া দিয়ে সুন্দর করে তৈরী করা নিরাময় কেন্দ্র।বাশ ছাড়া আর কোন কিছুই ব্যবহার করা হয় নি ।তিতুমীরের বাশের কেল্লা দেখেনী ,মনে হচ্ছে তীতুমীরের বাশের কেল্লার আদলে তৈরী করা হয়েছে এই স্থাপনাটি।যার সামনে বসে রয়েছি ,ভদ্র লোকের বয়স বেশী না ,বড় জোর ৩৫ হবে।গোল গাল চেহারার ভদ্রলোক স্মোক করে বোঝা যাচ্ছে ।বিশেষ কোন ব্রান্ডের সিগারেট খান ,কিছু ক্ষন আগে সিগারেট খেয়ে আসছেন বুঝা যাচ্ছে ।বেনসন সুইচ এর গন্ধ পাচ্ছি।তারমানে বেনসন সুইচ খান ভদ্র লোক।হাতের ব্লেড দিয়ে কাটা অনেক গুলো দাগ ।মনে হচ্ছে বাল্যকালের প্রেমে ব্যর্থ ।সামনের কাগজে যে লেখার স্টাইল তাতে মনে হচ্ছে ভদ্র লোক বা হাতি ,উল্টা দিক থেকে টান দেওয়া ।চোখের নিচে কালো দাগ ,তারমানে ইনসোমেনিয়াতে আক্রান্ত ।কথায় ভিতর টান আছে ,খুলনা ও এর আশেপাশে বাড়ি মনে হচ্ছে।যাই হোক ,ভদ্র লোক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,কেমন আছে ?
আমি হাসিমুখে বললাম,ভালো আছি,কিন্ত মানষিক সমস্যার ভিতর আছি।আচ্ছা ভাই ,আপনার বাড়ি কি খুলনার দিকে ।
ভদ্রলোক হাসলেন,বললেন ,ভাষার টান দেখে বুঝেছেন তাই না?
আমি মৃদ্যু হেসে বললাম ,ঠিক ধরেছেন ।বেনসন সুইচ খান ,ছোট বেলায় প্রেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন বুঝা যাচ্ছে।আপনি বাহাতি ?
ভদ্রলোক খুব শীতল হাসি দিয়ে বললেন ,মার্টিন সাহেব শুনেন? এইগুলো আমাকে দেখে যে কেউ বলতে পারবে ।শার্লক হোমস অনেক পড়েছেন বুঝা যাচ্ছে।আর্থার কোনান ডয়েল আপনি যে শুধু একা পড়েছেন,তা কিন্ত নয় আরো অনেকে পড়েছে ।আমার হাতকাটা ,ব্লেড দিয়ে ।দাগগুলো পুরানো তাতে বুঝা যায় টিন এজ বয়সে কাটা ,ওই বয়সে প্রেমের জন্য ছাওয়াল পাওয়াল এই রকম করে,মুখ থেকে ম্যান্থনের গন্ধ পাচ্ছেন তাই ধরে নিয়েছেন ,বেনসন সুইচ খাই ।ঠিক বলেছিলা মার্টিন সাহেব।
আমি বললাম ,হুম ১০০% সঠিক ।কিন্ত ঘুমাচ্ছেন না কিছু দিন ,সেটাও কিন্ত বুঝা যাচ্ছে?
ভদ্রলোক বললেন,চোখের নীচে কালো হয়ে গেছে,চোখের নিচে ফুলা ।ইনসোমেনিয়া ।এটাও ঠিক বলেছেন?আচ্ছা ,আপনি কি আমার ট্রিট্মেন্ট করতে এসেছেন না,কি আমি আপনার ?
আমি হেসে বললাম,ভাই কি রাগ করছেন আমার উপর ?
ভদ্রলোক বললেন,রাগ করা মনোবিজ্ঞানীদের মানায় না?আপনি আপনার সমস্যার কথা বলুন?
আমি বললাম ,আমার রাতে ঘুম হয় না।ঘুমের ঔষুধ খেতে হয় ?
ভদ্রলোক ওয়েট পেপার টা ঘুরিয়ে বললেন ,প্রেম ছিল কত বছরের?
আমি বললাম ,মানে?
আপনার চোখের নিচে কালো দাগ ।মারাত্নক ভাবে বুঝা যাচ্ছে? এই দাগ দুই এক বছরে হয় না ।দশ ,বারো বছর লেগে যায়? ধারনা করছি দশ বারো বছর আগে কারো সাথে প্রেম ছিল আপনার ?যার সাথে আপনি সারারাত কথা বলতেন ?
রীতিমত মুগ্ধ হয়ে গেলাম ,বললাম ,আপনি ঠিকিই বলেছেন ? প্রায় আড়াই বছর সাড়া রাত কথা বললাতাম.২০১১ সালের জানুয়ারীর ১১ তারিখে ওর বিয়ে হয়ে যায় ?
হুম তারিখ সহ কারে সাল পর্যন্ত মনে রাখছেন,মানে বেশ গভীর প্রেম ছিল আপনার ,ভদ্রলোক বললেন ।
আমি বললাম ,গভির কিনা সেটা আমি জানি না ।তবে পাগলের মত ভালোবাসতাম ।।এর পর থেকে ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমাতে হয় আমার।
ভদ্রলোক আমার দিকে বেনসনের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললেন,চলে আপনার ? আমি না শুচক মাথা নাড়ালাম ।যাই হোক ,অফিসে এভাবে সিগারেট ধরানোর নিয়ম নেই ,যেহেতু উনি ধরিয়েছেন ,বুঝা যাচ্ছে ,ভালো ক্ষমতাবান ।সিগারেট ধরিয়ে বললেন ,আপনার যে রোগ আপনার এই রোগের ট্রিটম্যান্ট আমার কাছে নেই ।এখন আপনি বলতে পারেন ,কেন?সত্যি কথা বলতে কি ,আমি আপনার ট্রিট্ম্যান্ট করতে চাচ্ছি না। আপনার চেহারা ,বডি ল্যাংগুয়েজ ,আই কন্ট্রাকে বুঝতে পারছি আপনিও ভালোই মানুষকে রিড করতে পারেন ।সিগমুন্ড ফ্রয়েড পরেছেন ,বুঝা যাচ্ছে ?জন্ম কি জুলাই আগষ্টে নাকি?
এই প্রথম আমি একটু চমকালাম ,এটা আমি বলি নি উনাকে ,গেজ করাও কঠিন।বললাম ,কেমনে বললেন ? জুলাই মাসের এক তারিখে আমার জন্ম ।
আপনার হাতের আগুলের এক সাইডে ফোসকা পরার মত অবস্থা ,আমাকে নিয়ে অনেক কিছু ভেবে ফেলেছেন পাচ মিনিটে ।কথা বলছেন ভয় ডর হীন ভাবে ,ধরে নিলাম কর্কট রাশী আপনি ।তাই বললাম ,জুলাই মাসে আপনার জন্ম।লেখালেখি করেন ,বুঝা যাচ্ছে ।মার্টিন সাহেব ,আমারাও অনেক কিছু জানি ।
আমি চমকালেও বুঝতে দিলাম না।বললাম ,চোর পুলিশ খেলা হচ্ছে মনে হচ্ছে ।আমি কিন্তু আরো অনেক কিছু বলতে পারি ,আপনি আরো চমকে যাবেন ?
উনি বললেন,আপনি আর কিছু বলতে পারবেন না।সেটা আর আপনার পক্ষে সম্ভব না ।আমার বৈশিষ্ট্য যা ছিল তা আপনি জেনে ফেলেছেন ,আর কিছু বলাটা কঠিন ?
আমি মৃদ্যু হাসলাম,বললাম,আচ্ছা আপনি বাঙ্গালী হয়ে রোহিংগা মেয়ের সাথে প্রেমে কেন জড়ালেন ? আপনি জানেন না ,এটা আমাদের জন্য নিষিদ্ধ ?
এই প্রথম ভদ্র লোক চমকালেন ।আরেক টা সিগারেট ধরালেন।মনে হচ্ছে উনার হাত কাপছে ।বললেন ,এটা কিভাবে জানেনে? আন্দাজে গুলি ছুড়লেন নাকি?
আমি চুপ করে থাকি ।কিভাবে বলছি সেটা বলতে মন চাচ্ছে না । কিছু কিছু মানুষ মুখোশের আড়ালে পৌশাচিক হয়।উনাকে আমার তেমন ই মনে হচ্ছে।
উনি সিগারেটের ধোয়া ছেড়ে বললেন ,মার্টিন সাহেব ,আমি রোহিঙ্গা মেয়ের সাথে প্রেমে জড়িয়েছি সেটা কিভাবে বুঝলেন ?
আমি বললাম,আপনি অনেক বার ফোন কেটে দিচ্ছিলেন । রোহিঙ্গা ভাষায় টেক্সট করছিলেন ।তারমানে কোন একটা প্রবলেমে জরিয়ে গেছেন ?এইগুলা বলার জন্য এত কিছু ভাবার দরকার হয় না ।একটু বুদ্ধি খাটাইলেই হয়।তবে মেয়েটাকে পেগন্যান্ট করাটা আপনার ঠিক হয়নি ।আপনি হিউম্যান্টরিয়ান কাজ করেন ,এদের দুর্বলতা কে পুজি করে ফিজিক্যাল রিলেশন করা কোন ভালো লোকের কাজ হতে পারে না ।।.
এই প্রথম লোকটার মুখের পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম ।পিশাচ শ্রেনীর লোকটার ,হাসিটাও পৌশাচিক ।লোকটা হাসছে ।মার্টিন ,আপনি গভীর জলের মাছ ।কেউ আপনাকে হয়ত পাঠাইছে ,আমাকে ইনভেস্টিকেট করার জন্য ? তাই না?
সিগারেটের প্যাকেট টা টেবিলে ছিল ।জীবনে কখনো সিগারেট খাই নাই ,খুব খোরের মত সিগারেট ধরালাম,বললাম ,আপনি ভুল বলছেন ? কেউ আমাকে আপনার কাছে পাঠায় নি ? আপনার পিছনের যে ,আয়না আছে ,সেখানে অনেক কিছু দেখাচ্ছে ।এই মানুষিক সেন্টারে কোন এক ভলেন্টিয়ার এর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করার আগে আপনার ভাবা দরকার ছিল ?
আমরা মুখিমুখি ছিলাম ,ভদ্রলোক একটু উঠে দাড়ালেন ।দেখলেন ,একটা বোরখা পরা মেয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।কিছুটা জিম ধরে রইলেন ।
আমি বললাম ,কি নাম মেয়েটার?
ভদ্রলোক কিছুটা স ময় নিয়ে বললেন ,নিশি।
আমি কিছুটা অবাক হলাম ।রোহিঙগা ক্যাম্পে কোন মেয়ের নাম সাধারনত নিশি হয় না ,এদের কয়েকটা নাম সিলেক্ট করা থাকে ,তাতেই সবার নাম হয়ে যায় ।নিশি নামটা ক্যাম্প লেভেলে অনেক আনকমন একটা নাম ।আমি বললাম,মেয়ে দেখছি বাংগালী।আসল নাম কি নিশি নাকি ,অন্য কোন নাম আছে ?
ভদ্রলোক আসলেন ,বললেন ,মার্টিন সাহেব আমাকে কি মনে হয় আপনার ।ভালো মানুষ নাকি অন্য কিছু ?
আমি কিছুটা এগিয়ে এসে উনার চোখে চোখ রেখেই বললাম ,আপনি খুব পিশাচ শ্রেনীর একজন মানুষ।এত পিশাচ মানুষ হয় না ।
ভদ্র লোক আমার কথায় কিছু মনে করলেন না ।বললেন ,মার্টিন সাহেব শুনেন।আমার মরহুম বাবা,আমাদের অঞ্চলের একটা প্রাইমারী শিক্ষক ছিলেন ।কর ছেলে মেয়েকে যে,বিনে পয়াসায় উনি পড়িয়েছেন তার হিসাব নেই ।আমাদের অঞ্চলের সবাই উনার প্রসংশা করত ।সবাই সকাল সকাল উনার মুখ দেখে বের হতে চাইত ।কারন এমন এক জন ফেরেস্তার মুখ দেখে দিন শুরু করলে দিন ভালো যাবে এই প্রত্যাশায় ।একবার বাবার সাথে বাজারে গিয়েছিলাম ।বাজারে দেখি বিরাট ভিড় ।বিশাল আকারে এক পাংগাস মাছ উঠেছে ।প্রায় বিশ কেজি ওজন ।মানুষ ,সেই মাছ দেখার জন্য ভিড় লেগে গেছে ।এক লোক সেই মাছ ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছে ।আমার বাবা ,যেই না সেই ভিড়ে গিয়ে পৌছালো ,তখন আপনা আপনিই ভিড় সরে গেলে ।যে লোক এই মাছ কিনেছিলো,তাকে বাবা ,বললেন ,তুই মকবুল না ।ক্লাস থ্রীতে রোল ১২ ছিল ।এই কথা শুনার পর ওই লোক ,বাবার দিকে তাকালেন ,আর সাথে সাথে বাবার পায়ে পরে গেলেন ।বিশ কেজি ওজনের মাছ টা বাবার হাতে দিয়ে বললেন ,আজকে যা হতে পেরেছি সেটা আপনার জন্য ।বাবা,মাছ টা নিতে চায় নি ।উনি ছাত্রদের দেওয়া উপহার কখনো নিতেন না ।তখন সেই ভদ্র লোক ,মাছটা আমার হাতে বুঝিয়ে দিলেন ।এই বার বুঝেন ,কি পরিমান ভালো লোক ছিল আমার বাবা।অথচ ,এই লোকের কি কাজ ছিল জানেন ? এই লোক বাড়ির কাজের মেয়েদের সাথে শারিরিক সম্পর্ক করে ,তাদের প্যাগন্যান্ট বানাতেন ।মিনিমান দশ জন কাজের মেয়েকে সে প্যাগনেন্ট বানিয়েছিলেন ।আমার মা ও কিন্ত কাজের মেয়ে ছিলেন ।বাবা যখন কলেজে পরতেন ,তখন বাবা আমার মার সাথে বিয়ের আগেই শারিরিক সম্পর্ক করেন ।আমার দাদাজান ,যখন বিষয় টা জানলেন ,তখন তিনি সামাজিক চাপের ভয়ে ,এবং সমাজে যেন তার মাথা উচু করে দাড়ায়ে থাকে ,তাই তিনি সকলকের সামনে বললেন ,তিনি তার একমাত্র ছেলেকে বাড়ির কাজের লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে এই দৃষ্টান্ত দিতে চান পৃথিবীতে সবাই সমান।যেহেতু আমাদের ভাল প্রতিপত্তি আছে ,সবাই আমার এই দাদাজানের স্বীধান্তে ধন্য ধন্য করতে লাগল ।কিন্ত কেউ জানলো না ,আসলে বিষয়টা কি ।আর বিয়ের আগে ,আমার মার পেটে যে সন্তান ছিল ,সেটা আমি ছিলাম।নিষিদ্ধ সন্তান।দশটার মত মেয়েকে প্যাগন্যান্ট বানানোর সন্তান আমি ।পিশাচের ঘরে কি পিশাচ জন্ম নিবে নাকি ফেরেস্তা জন্য নিবে মার্টিন সাহেব?
আমি চুপ করে রইলাম ,কিছু বললাম না ।
ভদ্র লোক বলল,কি হলো মার্টিন সাহেব ,চুপ করে রইলেন যে ?আর শুনেন ,এই মেয়ে রোহিঙ্গা আমি নাম দিয়েছি ,নিশি ।কারন কি জানেন? এই মেয়ের সাথে আমার পূর্নিমার রাতে ,সমুদ্রের পারে প্রথম শারিরিক সম্পর্ক হয়েছিল।মার্টিন সাহেব ,আরেক কথা ,আমি কিন্ত মেয়েটাকে সমুদ্রের পারে ,রাতের বেলা যেতে বাধ্য করি নাই ।সে নিজেই গেছে ।আপনি তো ওদের ভাষা পারেন ,যান না ,জিজ্ঞেস করুন আমি জোর করেছিলাম নাকি?
আমি হাসলাম ,বললাম ,সেটার আর দরকার হবে না ।আমি আপনার কথায় বিশ্বাস করেছি ।
কিন্ত এই মেয়ে আপনার প্রেমে পরল কি ভাবে বুঝলাম না ?
ঘটনা তেমন কিছু না মার্টিন সাহেব ।আপনি কি আমার চেহারা, পার্সনালিটি কম মনে করেছেন নাকি।আর আপানার ভাষায় আমি ত পিশাচ শ্রেনীর মানুষ ।সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানেন ,মেয়েরা না এই পিশাচ শ্রেনীর মানুষদের প্রেমে পরে।কারন তারা ভাবে ,এই পিশাচ মানুষ্ টাকে সে তার ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করবে ,কিন্ত সে জানে না পিশাচরা কখনো মানুষ হয় না ।এই মেয়েও তাই ।আমার কথায় সে প্রেমে পরে গেছে ।সে ভালো মতই জানে যে ,সে আমার যোগ্য না ,তারপর ও সে আমার প্রেমে পরেছে ।আমাকে প্রলুদ্ধ করার মত তার কিছুই নেই ,আছে ভরা যৌবন আর আকর্ষনীয় একটা শরীর ।সে সেটাই আমাকে দিয়েছে ,সে ভেবেছিলো ,আমি সেটা পেলে ,পশু থেকে মানুষ হবো ।কিন্ত মার্টিন সাহেব ,আমি পশুই ।আমার কাছে মেয়েটার দেহই ভালো লেগেছে ।পিশাচ দের দেহ পেলেই হয় ,অন্য কিছু নয় ।কি বলেন মার্টিন সাহেব ।
আমি এই মানুষ নামের পশুটার ব্যাক্তিত্ব বোঝার চেস্টা করেছি ।একটা মেয়ে ,শরনার্থী ,তার দুর্বলতার সু্যোগ নিয়ে শারিরিক সম্পর্ক করা মানবতা বিরোধী কাজ,জঘন্য কাজ ,মানুষ করতে পারে ।আবার পিশাচের মত হাসছে ।
লোকটা আবার বলল, মেয়েটার শরীরটা খুবই নরম ।একদম তুলার মতন ।সকাল বেলা শিউলী ফুল যেমন মাটিতে পর সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দেয় ,মেয়েটা আমার সেই যৌবনের সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে ।
এবার আমার কেমন জানি বমি আশা শুরু করল ।বুঝতে পারছি ,ভেতর থেকে উল্টি আসছে ।শরীর টা কেমন দুলে দুলে উঠছে ।আমি বললাম ,আপনি মেয়েটাকে তাহলে বিয়ে করছেন না?আর তার পেটের সন্তান কেও মেনে নিচ্ছেন না,তাইতো?
লোকটা এবার অট্রহাসী হাসল ।ভয়ংকর পৈশ্চাচিক সেই হাসি ।আমি পিশাচ পিতার পৈশ্চাচিক সন্তান ।এই শরনার্থী মেয়েরা আমার কাছে আসলে আমি এদের ব্যবহার করেই ছেড়েব দিব,সংসার করা দূরে থাক ।আর সন্তান ,?দুইটাই মরে যাক ।আমার ইনফেক্ট ,আজকে এই মেয়েটা বলেছে ,আমি যদি বিয়ে না করি ,সে আমার সাথে যেখানে দেখা হয়েছিল ,সেখানেই আত্নহত্যা করবে ,আমি বলেছি ,তাতে আমার কিছু যায় আসে না ।মরলে মরুক ,আপদ বিদায় হবে।
আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না।প্রচন্ড ভাবে বমি আসা শুরু করছে ।।আমি বললাম ,ভাই আমি যাই।চেয়ার ছেড়ে উঠে ,দুই পা এগুতেই দেখি,মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে ।কি সুন্দর চেহারা মেয়েটার ।ক্লিউপ্লেট্রার নাম শুনেছি ।ট্রয় নগর ধবংশ হয়ে গিয়েছিল উনার জন্য।মনে হয় ,অসম্ভব সুন্দরী ছিল ।সামনে যে মেয়েটাকে দেখছি ,আমার মনে হচ্ছে ,এ কোন অংশে ক্লিউপ্লেট্রার থেকে কম না ।ক্লিউপ্লেট্রা অফ রিফিউজি ।এত সুন্দর চোখ আমি কখনো দেখেনী ।ইংরেজ কবি শেলী নাকি খুব সুন্দর চোখ নিয়ে জন্মেছিলেন ।এর মেয়ের চোখ অসম্ভব রকম সুন্দর ।বোরখা পরা মেয়েটার পেটের দিকে তাকালাম ,কেমন জানি বুক টা হু হু করে উঠল ।একটা অনাগত সন্তান ,বার বার আমাকে বলছে আমাকে বাচতে দিন ।মেয়েটার চোখের দিকে তাকালাম ,ছল ছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।আমি পিছনে ফিরে আবার ওই লোকটার কাছে গেলাম ।বললাম ,আমি চলে যাচ্ছি,তবে আপনাকে একটা গল্প বলে চলে যাব ,আসলে গল্প না সত্য কাহিনী।ইংল্যান্ডের এক রাজা ছিল ,রাজা অষ্টম এডোয়ার্ড ।১৯৩৬ সালে রাজা পঞ্চম জর্জের মৃত্যুর পর উনি সিং হাসনে বসেন ।ইংল্যান্ডের সবচেয়ে কম সময় সিং হাসনে বসা রাজাদের একজন ,৩২৬ দিন রাজত্ব করেছিলেন ।প্রেমে পরেছিলেন এক বিধবা নারীর ।ওয়ালিশ নামের এক বিধবা নারীর প্রেমে পরেন ।রাজা এডুয়ার্ড কে তিনটা অপশন দেওয়া হয় ,এক ওয়ালিশকে ভুলে যেতে ,দুই প্রধানমন্ত্রীর অমতে বিয়ে করতে আর তিন সিংহাসন ত্যাগ করতে ।সারা পৃথিবী তাকিয়ে ছিল সেই দিন ,রাজা কিন্ত সেদিন ওয়ালিশের হাত ধরেই সিং হাসন ত্যাগ করেছিলেন ।মানে নি কোন প্রথা ,মানে নি কোন বেড়াজাল ।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ,আপনি পিশ্চাচ শ্রেনীর হলেও মনের কোন এক গহীনে আপনার ও ভালবাসা আছে ,সন্তানের জন্য মায়া আছে ।
ভদ্রলোক আমার দিকে শিতল ভাবে তাকিয়ে বললেন ,আপনার কি ধারনা আমি এই মেয়েকে মেনে নিব ।আর আপনি কিভাবে জানলেন এই মেয়ে ডিভোর্সী।আপনার কি ধারনা ,আমি আপনার এই সস্তা কাহিনীতে গলে যাব,বললাম না আমি পিশ্চাচ বাপের পিশ্চাচ সন্তান ।মার্টিন সাহেব অনেক হইছে,এবার আপনি আসুন ।
আমি বের হয়ে আসলাম,শেষ বারে মত লোকটার চোখের দিকে তাকালাম ।আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম ,আমি উনার চোখের ভাষা আমি পড়তে পারছিনা ।কি করবে লোকটা ,মেয়েটাকে মেনে নিবে নাকি মেয়েটা আত্নহত্যা করবে বুঝতে পারছিনা ।
রাত ,১০ টা ।আমি সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে ।চাদের আলোয় একটা মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি ,আমার থেকে অনেক দূরে ।মেয়েটা কি করবে বুঝতে পারছিনা ।লোকটা কি আসবে ,নাকি মেয়েটা সমুদ্রে বিলীন হবে ।
পুর্নিমার রাত ।রাত বাড়ছে ।নিষিদ্ধ স্বপ্নের বাসরের সেই রাত…।