পাক সার জামিন সাদ বাদ,যারা এই বইটা পড়েন নাই প্লিজ দয়া করে পড়বেন। তবে এও বলি যাদের বয়স ১৮ হয় নাই তারা পড়লেও যে বেশী কিছু বুঝবেন আমি সেই বিষয়ে নিশ্চিত নই।হুমায়ুন আজাদ স্যার ২০০৫ সালেই বলে গিয়েছিলেন ভবিষ্যৎ এ কি হতে পারে। হয়ত উনি ভেবেছিলেন বাংলাদেশের কথা কিন্ত সেটার প্রেক্ষাপট হয়ে গেল আফগানিস্তান। তবে বাংলাদেশে যে বুনো শুয়োরের উল্লাস দেখতে পাচ্ছি,তাতে মনে হচ্ছে খুব বেশী দেরী নেই, যে,বাংলা হবে আফগান, আমরা হব তালেবান। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান হবে সেটা আজ না হয় কাল হবেই। ১৯৯৪ সালে তালেবান নামের জংগী সংগঠন গঠিত হয়। মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে , এবং সহযোগী হিসেবে ছিলেন আব্দুল ঘানী বারাদার।৪৫ হাজার সৈন্য নিয়ে গড়া সেই দলে আজ ২ লক্ষ মুজাহিদের এক বিশাল সংঘটন তালেবান। সোভিয়েত – আফগান যুদ্ধে মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে সোভিয়েত বাহিনী শোচনীয় পরাজয়ের স্বীকার হয়।এবং আফগানিস্তানের দ্বায়িত্ব চলে যায় তালেবানের হাতে।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের জনগনের উপর চলে চরম নির্যাতন। এক লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ কে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। ছবি আকা,মুভি দেখা,গান গাওয়া, কবিতা লেখা,ছবি তোলা সব নিষিদ্ধ করা হয় আফগানিস্তানে।পুরুষ ডাক্তার দিয়ে কোন মেয়ে মানুষ কে চেক আপ করানো যাবে না কিন্ত কোন মেয়ে ১২ বছরের পরে স্কুলে যেতে পারবে না।কোন মেয়ে পুরুষ সংগী ছাড়া বাইরে বের হতে পারবে না।কোন প্রেম টেম করা যাবে না। কাউকে প্রেম করতে দেখলে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলতে হবে।কেউ যদি ক্ষুধার তারনায় একটা ডিম ও চুরি করে তার হাত কেটে ফেলতে হবে। আর কঠোর শাস্তি হল গলা কেটে হত্যা করা। তবে বলা রাখা ভাল সর্বোচ্চ শাস্তি ফাসী দিয়ে নয়, গলা কেটে হত্যা করা কেই বেশী সমর্থন করে তালেবান।১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৮ সালে তালেবান দের হাতে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের স্বীকার হয়। ৯৮ হাজার মহিলা বিধবা হয়। গন হত্যা বলতে যা বুঝায়, ঠিক সেই কাজ ই করা হয়েছে তালেবানদের পক্ষে থেকে।
১৯৯৮ সালে ৮ ই আগষ্ট তালেবান মাজারে শরীফ আক্রমন করে। সেখানে ১দেড় হাজার মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।এখানে বলে রাখা ভাল তালেবান কোন ভাবেই মাজার পুজা কিংবা মুর্তি পুজা কোন ভাবেই সাপোর্ট করে না।যে কারনে হাজার হাজার বৌদ্ধ মুর্তি ভেংগে ফেলা হয় তালেবানদের নির্দেশে। মাজারে শরীফ আক্রমণ এর সময় বহু মহিলাকে ধর্ষন করা হয়, এবং পুরুষদের কন্ট্রেইনারে ভরে পানির নিচে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। তাদের সংখ্যা ছিল মোটামুটি ৫ থেকে ৬ হাজার। ১০ জন ইরানীয় ডিপ্লোমেটিক কে হত্যা করা হয়।১৯৯৯ সালে বামেয়ান নামের শহর দখল করে নেয় তালেবান। শত শত নারী পুরুষ, শিশুদের হত্যা করা হয়। বাড়ি ঘর ভেংগে ফেলা হয়। জোর পুর্বক মানুষকে শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়। ইয়াকোলাং নামের এক শহরে ২০০১ সালে জানুয়ারী মাসে এক গনহত্যা চালানো হয়। সেখানে প্রায় ৩০০ জন কে হত্যা করা হয়। ১৯৯৯ সালে শোমালি সমভুমি তে এবং এর আশে পাশে এলাকায় অগ্নি সং যোজক করা হয়,মানুষের ঘরবাড়ি,খামার, বাগানে লুটতরাজ করা হয়।২০০৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে পোলিও টিকা দানে বাধা দেয় তালেবান। আফগানিস্তানে পশ্চিমা ডাক্তাদের ধরে ধরে হত্যা করা হয়।স্বাস্থ্য কর্মীদের ও নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। তার প্রধান কারন ছিল তালেবান বিশ্বাস করত যে পশ্চিমা রা আফগানিস্তানে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচার কাজ করছে অথবা গুপ্ত চর বৃত্তি করছে।
২০০৪ সালে তিন জন নারী ব্রিটিশ, কানাডিয়ান, এবং মার্কিন এই তিন দেশের নাগরিকে হত্যা করা হয় খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচার করার অভিযোগে।২০০৪ সালে অক্টোবর পর্যন্ত ২৯ জন বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করা হয় খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারের অভিযোগে। ২০১০ সালে আগষ্টে ১০ জন চিকিৎসা কর্মী কে হত্যা করা হয় একই অভিযোগে। নিহতের ৬ জন আমেরিকান একজন ব্রিটিশ, এক জন জার্মান,দুই জন আফগান। আফগানিস্তানে অনেক বিদেশী কে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচার করার অভিযোগে হত্যা করে তালেবান। তালেবান, কোন ভাবেই আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় উৎসাহী না।কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সময় ই হামলা চালায় তালেবান। ১৯৯৮ সালে ইউনিসেফ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ১০ টি মেয়ের মাঝে ৯ জন এবং তিন জন ছেলের ভিতর ২ জন স্কুলে যেতে পারে না।তাদের কে বাধ্য করা হয় মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য।২০১৭ সাল পর্যন্ত তালেবান ১ হাজারের বেশী স্কুল ধবংস করা হয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থী কে নির্মম ভাবে করা হয়। তালেবান রা ১৯৯২ সালে আফগানিস্তানের জাতীয় জাদুঘরে হামলা করে,এবং এক লক্ষ শিল্প কর্মের ৭০% ধবংশ করা হয়। ১১ ই আগস্ট ১৯৯৮ সালে পুলি খুমির নামের পাবলিক লাইবেরীর ৫৫ হাজার বই ধবংস কাজ হয়।
আফগানদের হাজার হাজার বছরের পুরাতন পান্ডুলিপি, সংস্কৃতি কে পুড়িয়ে ফেলে তালেবান। ঠিক যেমন টা নালন্দার সাথে করেছিল বখতিয়ার খলজি। ২০০১ সালে ২ মার্চ বার্মিয়ানের বৌদ্ধ মুর্তি মোল্লা ওমের নির্দেশে ডিনামাইট দিয়ে ধবংশ করা হয়।সেই সাথে প্রাচীন ২৭৫০ টি শিল্পকর্ম ধবংশ করা হয় যা আফগানিস্তানের জাদুঘরে সংরক্ষিত ছিল।১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান ঘুড়ি ওড়ানো,টিভি দেখা,ফুটবল খেলা সংগীত,নাচ, সিনেমা,ডিশ চ্যানেল নিষিদ্ধ করা করে তালেবান। কোন শিশু বা কোন ব্যক্তি যদি উক্ত কাজ করত তাদের কে কঠিন ভাবে দমন করা হত।আফগানিস্তানে তালেবান শাসন আমলে ব্যাপক ভাবে বেড়ে যায় বাল্যবিবাহ। এবং মেয়েদের কে বিশেষ করে ভিন্ন মতালম্বী মেয়েদের যৌন দাসী হিসেবে ক্রয় বিক্রয় করা হয়ে থাকে।কোন মেয়ে যদি টাইট বোরখা পরত তাদের কে হয় দোররা মারা হত কিংবা পাথর ছুড়ে মেরে ফেলা হত। তালেবান নেতাদের বিশেষ আকর্ষন ছিল এবং এখনো আছে কম বয়সী মেয়ে। বিশেষ করে ৬ থেকে ১৪ বছরের মেয়েদের বিয়ে করার জন্য এরা এক পায়ে দাড়ানো থাকে।যাই হোক,লেখাটা শেষ করি।তালেবান রা আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসছে,তারমানে এই না যে এরা কিংবা এদের মতাদর্শ থেকে বাংলাদেশ বেশী দূরে।আমার কথা বিশ্বাস না হলে,তালেবান সংক্রান্ত যে কোন নিউজের লাভ রিয়েক্ট আর কমেন্ট গুলো দেখতে পারেন।বুনো শুয়রদের উল্লাস।