সংখ্যালঘুদের উপর যেভাবে নির্যাতন চলছে,সংখ্যালঘুদের নিরাপদ আবাসস্থল থাকা দরকার হয়ে পরেছে।এখন আর আগের মত ঢাকের শব্দে বুঝতে হয় না যে শারদীয় দুর্গাপুজা আসছে।মূর্তি ভাঙ্গা ভাঙ্গির ছবি দেখলেই বুঝে যাই দূর্গা পূজা আসছে।আজকের লেখার টাইটেল টা অকারনে দেই নি।বিশেষ কারনেই দিয়েছি।। বেশ কিছুদিন ধরেই খ্রীষ্টানদের ঘিরে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে,খ্রীষ্টানরা নাকি পার্বত্য চট্রগ্রাম দখল করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বানাবে!! এই ধরনের অপপ্রচার আসলেই কি খ্রীষ্টানরা মেনে নিবে?পার্বত্য চট্রগ্রাম, বান্দারবান, খাগড়াছড়ি,আর রাঙ্গামাটি নিয়ে গঠিত। এখানে সব জাতী সত্ত্বার মানুষ জন বাস করে। তাহলে কেন অযথা খ্রীষ্টানদের নিয়ে পরে আছে এক শ্রেনীর মানুষ?
আসলে এই গুলো বলে খ্রীষ্টানদের দমন পীরনের একটা ব্যবস্থা করা হচ্ছে।১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরের দুই, সন্তু লারমার সাথে বাংলাদেশ সরকার যে চুক্তি করেছিল,সেটা সরকার কত টুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছে? ১৯৬০ সালে যখন পাকিস্তান সরকার কাপ্তাই বাধ দিয়ে যখন এক লক্ষ আদিবাসীদের গৃহহীন করা হয়েছিল তখন থেকেই মূলত শুরু হয় টিকে থাকার যুদ্ধ।মূলত টিকে থাকার যুদ্ধ কে কেন্দ্র করেই ১৯৭২ সালে গঠন করা হয় পার্বত্য ছাত্রসংগ্রাম জনসংহতি সমিতি। যা আমরা শান্তি বাহিনী হিসেবে জানি।দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু যখন ঘোষনা দিলেন যে বাংলাদেশে কোন সংখ্যালঘু নেই, সবাই বাঙ্গালী। এই ঘোষনার প্রতিবাদ করে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার নেতৃত্বে সংখ্যালঘু পাহাড়ীরা একত্রিত হতে শুরু করে।
মূলত, পাহাড়ি আদিবাসীদের উপর নির্যাতন শুরু হয়, সেনা শাসনের সময়। পাহাড়ী আদিবাসী জন গোষ্ঠী কোনদিন ও পাহাড়ে বাঙ্গালীদের উপস্থিতি মেনে নিতে পারে নি। পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রধান দাবীই ছিল,পাহাড়ের ভূমি যেন বাঙ্গালীদের না হয়। আমি বর্তমানে যে অঞ্চলে কাজ করছি,এখান থেকে বান্দারবান সীমানায় যেতে মিনিট ৫ এর মত লাগে।কিন্ত বান্দারবানে এই অংশে এখন আর আদিবাসীদের বসবাস খুব একটা চোখে পরে না। মাইলের পর মাইল এখন বাঙালিদের বসবাস। এরা কেউ কিন্ত এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নন।আপনারা যারা রাজনীতি সচেতন মানুষ তারা জানেন যে,ভারতে কাস্মীরীদের একটা বিশেষ সুরক্ষা আইন ছিল। যা ভারতের সংবিধান কাস্মীরীদের দিয়েছিল।৩৭০ ধারা।।এই ধারাতে, কাস্মীরীরা বিশেষ সুযোগ সুবিধা পেত। এই কারনে মোদী – অমিত শাহ জুটি এটি যখন বাতিল করে তখন কাস্মীর তখন কুরুক্ষেত্রে রুপ নিয়েছিল।এই ধারাতে কাস্মীরীরে,কাস্মীরী ছাড়া কেউ জমি কিনতে পারত না। কেউ সেখানে জমি কিনে ঘর বাড়িও বানাতে পারত না।এখন এই ধারা বাতিলের ফলে, এখন অকাস্মীরা সেখানে গিয়ে বাড়ি, জমি সবই করতে পারছে,সেই অঞ্চলের স্থায়ী ভাবে বসতি স্থাপন করতে পারছে।এতে মোদী – শাহ জুটির দুইটি কাজ সম্পূর্ন হয়েছে।এক, এতদিন যে কাস্মীর, মুসলিম অধ্যুষিত ছিল সেটা এখন ধীরে ধীরে হিন্দুদের স্থায়ী নিবাস হচ্ছে।আর দুই,যখন হিন্দুদের সংখ্যা বৃদ্ধিপাবে তখন বি জে পি তাদের সেই পুরাতন খেলা খেলতে পারবে।বিভাজনের রাজনীতি। আচ্ছা, বি জে পি এই খেলা শিখলো কোথা থেকে।আমার ধারনা এই খেলা শিখেছে বাংলাদেশ থেকে।
স্বাধীনতার আগে যেখানে পাহাড়িদের সংখ্যা প্রায় ৮০% উপরে ছিল স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সেখানে পাহাড়ী আর বাঙ্গালীদের সংখ্যা প্রায় সমান সমান। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী পার্বত্য চট্রগ্রামে মোট জনসংখ্যার এখন ৪২ % বাঙ্গালী মুসলমান আর বাঙ্গালী হিন্দু আছে প্রায় ৪%। মোট ৪৬%।আর বাকীরা আদিবাসী।এর মধ্যে চাকমারা সংখ্যা গরিষ্ঠ।চাকমাদের সংখ্যা ২৭.৫ %,এর পর মারমারা ১৪.৫%,ত্রিপুরা ৬.৫% আর মুরং ২.১%তঞ্চংঘা ১.৯ %। এছাড়াও এখানে আছে,লুসাই, পাংখোয়া, ব্রম, মৃ,খুমি,চাক ছাড়াও অনেক আদিবাসীদের বাস।এখানে বাঙ্গালীদের সংখ্যা কেন এত বৃদ্ধি পেয়েছে।জেনারেল জিয়াউর রাহমান যখন সেনাপ্রধান ছিলেন, তিনি মূলত এখানে আদিবাসীদের সংখ্যালঘু করার ছক একেছিলেন। এখানে যে সকল বাঙালীদের দেখা যায়, তারা আসলে ভূমিহীন, এবং নদী ভাঙ্গনের ফলে উদবাস্তু হয়েছিল। তাদেরকে এখানে আশ্রয় দান করে ছিলেন জেনারেল জিয়াউর রাহমান। ১৯৭৫ এর পর আদিবাসীদের অনেক নির্যাতন করা হয়, মহিলাদের জোর করে লাইগেশন বা জন্ম যেন না দিতে পারে সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।যাতে আদিবাসীদের সংখ্যা না বাড়ে। আর এখন, এখানে সেই সুফল পেতে চলেছে,বাঙালীরা। কারন এখানে দিনকে দিন আদিবাসীরা সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে।১৩২৯৫ কিলোমিটার ভুখন্ডে যারা এত দিন রাজত্ব করত তারা এখন ধীরে ধীরে প্রজাতে পরিনত হচ্ছে।আদিবাসীদের যেভাবে সংখ্যালঘুতে পরিনত করা হচ্ছে,ঠিক একই কাজ করা হচ্ছে ভারতের কাস্মীরে।।
এইবার আসি আজকের মূল টপিকে।। আমার জানামতে, আমি এখনো কোন বাঙ্গালী খ্রীষ্টানদের শুনিনে যে, তারা ভুমিহীন হলেও তারা পার্বত্য অঞ্চলে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে।পার্বত্য অঞ্চলে, যারা খ্রীষ্টধর্ম গ্রহন করেছে,তারা সবাই আদিবাসী।তবে এই কথা সত্য যে,বাংলাদেশে খ্রিস্টানদের সংখ্যা ০.০৩% হলেও পার্বত্য অঞ্চলে সেই সংখ্যাটা অনেক বেশী। প্রায় ৬%। এখানে, একটা কথা বলে রাখা ভালো যে,এখানে সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া ধর্ম হচ্ছে খ্রীষ্টানিটি। ১৯৯১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এখানে খ্রীষ্ট ধর্মের বৃদ্ধির পরিমান ১৩৪.৪৭%।২০১৭ সালে এখানে চার্চের সংখ্যাছিল ৩৬৫ টি যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে হয়েছে ৪৪০। আমি এখানে স্বীকার করে নিচ্ছি, পাবর্ত্য অঞ্চলে খ্রীষ্টানদের সংখ্যা বাড়ছে,তার মানে কি এই আমরা খ্রীষ্টানরা পার্বত্য অঞ্চল কে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই। এক বাক্যে বেশীর ভাগ খ্রীষ্টানই এই দাবীর পক্ষে থাকবে না। কারন আমরা কোনদিন ও বাংলাদেশকে ভাগ হতে দেখতে চাই না।আমাদের পরিচয় আমরা বাংলাদেশী খ্রীষ্টান। অথচ এই খ্রীষ্টান জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে।
পাবত্য অঞ্চলকে পূর্বতিমুরের সাথে তুলনা করা হচ্ছে।পূর্ব তিমুর, ইন্দোনেশিয়ার আগে থেকেই পর্তুগীজ কলোনী ছিল।এখানে আগে থেকেই খ্রীষ্টান জনসংখ্যা বেশী ছিল।আর ইন্দোনেশিয়ান সরকার যে দমন নিপীড়ন করেছে,এই জনগোষ্ঠীর উপর তা একদিন না একদিন স্বাধীন হবারই কথা ছিল।আর শুরু থেকেই পুর্ব তিমুরের জনগন ইন্দোনেশিয়ার বশ্যতা স্বীকার করতে চায় নি। তারা স্বাধীনতার জন্য শুরু থেকেই জোয়ানা গুজমায়ারের নেতৃত্বে সংগ্রাম করে আসছিল। কোন দিন সময় হলে কিভাবে পূর্ব তিতুর মুসলিম রাষ্ট্র থেকে খ্রীষ্টান দেশ হিসেবে আত্ন প্রকাশ করল সেটা নিয়ে লিখব। কিন্ত, পার্বত্য চট্রগ্রামের বিষয় টা সম্পূর্ন ভিন্ন।এখানে আদিবাসীরা সংখ্যায় বেশী হলেও কোন দিন এই অঞ্চলকে স্বাধীন বলে দাবী করেছে বলে আমার জানা নেই। তবে তারা যদি এটা করেও থাকে এখানে খ্রীষ্টানদের হাত আছে বলে আমি মনে করি না।২০২০ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে এক জরিপ করে,সেখানে নাকি বান্দারবানে ১লক্ষের উপর বেশী খ্রীষ্টান আছে বলে দাবী করা হয়। আমার কাছে হাস্য কর লাগে,আমরা পুরো বাংলাদেশে আছি মাত্র সাড়ে তিন লক্ষ। আমাদের ভাওয়াল অঞ্চলে এক লক্ষ মানুষের বাস মনে হয় প্রায়।বাকীদের কথা বাদ দিলাম। তাহলে বান্দারবানে ১ লক্ষ তিন হাজার ৯৯৭ জন খ্রীষ্টান হলে আমাদের সংখ্যা তো মোট জনসংখ্যার ২% হাবার কথা।হাস্যকর,ব্যাপারটা হাস্যকর ছাড়া কিছু না।মোট কথা এই সমস্ত কথা প্রচার করে,সরকার এবং খ্রীষ্টানদের ভিতর দন্ধ সৃষ্টি করার পায়তারা করছে একটি বিশেষ শ্রেনী।তাদের উদ্দেশ্য এই অঞ্চলে খ্রীষ্টানদের মাধ্যমে যে ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে,সেটাকে বাধাগ্রস্থ করতে।আগে যেখানে আদিবাসী ছেলে মেয়েরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল,এখন সেখানে শিক্ষার হার ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।আটা ময়দার সুজির মাধ্যমে কেউ কোন দিন নিজ ধর্ম ত্যাগ করে না।আদিবাসীরা যদি খ্রীস্ট ধর্ম গ্রহন করেও আমি বিশ্বাস করি, তারা যীশুকে ভালবেসেই খ্রীষ্টধর্ম গ্রহন করেছে।।