আমার জীবনে আমি একবার ই মাজিস বাংলা ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। ২০১২ সালে। সেখানে খ্রীষ্ট ধর্মেকে উপর প্রাধান্য দিয়ে দুইটা সিনেমা দেখিয়েছিলেন ফাদার।একটা ছিল, দ্যা মিশন। জেজুইট ফাদার নিয়ে চমৎকার একটা সিনেমা। মুলত ল্যাটিন দেশ গুলোতে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারে গিয়ে নিজেদের স্বজাতির কাছে ফাদারদের নির্যাতন এবং ত্যাগ স্বীকার তুলে ধরা হয়েছে।অসম্ভব সুন্দর একটা সিনেমা দ্যা মিশন। এবং পুরুষ্কার প্রাপ্ত সিনেমা দ্যা মিশন। ২০১২ সালে ওয়ান জি টু জির জামানায় এত স্পীড ছিল না ইন্টারনেটের। পরর্বতীতে ভারত ভ্রমনের সময় কলকাতা থেকে কিনেছিলাম সিনামার ক্যাসেট। যা এখনো আছে,আমার কাছে। ফাদার আরেক টা সিনেমা দেখিয়েছিল আমাদের।অস্কার ডি রেমেরো।
এল সালভাদরের আর্চ বিশপ কে কি ভাবে খ্রীষ্টযাগ চলাকালিন সময়ে গুলি করে হত্যা করা হয়, তাই দেখানো হয়েছিল সেই সিনেমায়। অস্কার রেমেরোর সিনেমা দেখার পর আমার কেন জানি সম্ভব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল নিজের অজান্তে।যাই হোক এমনই একটা সিনেমা হল প্যাসন অফ দ্যা ক্রাইস্ট। যত বার দেখেছি।ততই ভালো লেগেছে।এক নাগাড়ে পুরো ছবি দেখেছি।মেল গিবসন নিজেকে পুরাটা উজার করে দিয়েছেন নিজেকে।একজন মেল গিবসন আর উনার প্যাসন অফ দ্যা ক্রাইস্ট…………লেখাটি শুরু করার আগে একটা অনুরোধ, আপনার কাছে যদি পাচ মিনিট সময় হয় তাহলে লেখাটার সাথে সাথে ভিডিও টাও দেখবেন। প্যাসন অফ দ্যা ক্রাইস্ট, আজ পর্যন্ত যীশু খ্রীষ্ট কে নিয়ে যত গুলো সিনেমা নির্মান করা হয়েছে তার ভিতর সবচেয়ে আর্কষনীয়, এবং ব্যবসা সফল সিনেমা হল প্যাসন অফ দ্যা ক্রাইস্ট।
২০০৪ সালে মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমাটি ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৪০ কোটি টাকার ব্যয়ে নির্মান করা হয়েছিল। কিন্ত এই সিনেমা টি আয় করে ৬১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মেল গিবসন যত গুলো সিনেমা তৈরী করেছেন তার থেকে অন্যতম ব্যবসা সফল সিনেমা হল এই প্যাসন অফ দ্যা ক্রাইস্ট। মুলত যীশুর জীবনের লাস্ট ১২ ঘন্টার মর্ম বেদনা, নির্যাতন দেখানো হয়েছে এই সিনেমায়। আমি আপনাদের যেই ৫ মিনিট এর ভিডিও দেখতে বললাম এই ৫ মিনিট ২০০৪ সালে যখন মুক্তি পায় তখন ছিল না। এই ৫ মিনিট পরবর্তীতে ১১ ই মার্চ ২০০৫ সালে সংযোজন করা হয়। এবার আসি মূল আলোচনায়, প্যাসন অফ দ্যা ক্রাইস্ট এ মূল চরিত্রে অভিনয় করেন জিম ক্যাভিজেল। ১৯৬৮ সালে ২৬ শে সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন এ জন্মগ্রহন করেন তিনি। যীশু খ্রীস্টের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। উনি ওনার এক সাক্ষাৎ কারে বলেছিলেন যে, উনি যীশু খ্রীস্টের ক্রুশ বহন এর দৃশ্য করতে গিয়ে উনাকে ১৩০ পাউন্ড ওজনের ক্রুশ বহন করতে হয়েছিল। এবং তিনি তা নিজের ইচ্ছাতেই করে ছিলেন। উনি বুঝতে চেয়েছিলেন যে কালভেরীতে যাওয়ার পথে যীশুর যাতনাভোগ কত কস্টের ছিল।
এবং তিনি এও বলেছিলেন ক্রুশ বহন করতে গিয়ে তিনি মারাত্মক আহত ও হয়েছিলেন। এক কথায় উনি সর্বাত্মক চেস্টা করেছিলেন যীশুর কস্ট টা নিজের করে নিতে।প্যাসন অফ দ্যা ক্রাইস্ট এ যুদা ইস্কারিয়ত এর ভুমিকায় যিনি অভিনয় করেন লুকা লিউনেল। যিনি এক জন নাস্তিক ছিলেন। ১৯৬৪ সালের জানুয়ারী ৯ তারিখে ইটালী তে জন্ম নেন তিনি। প্যাসন অফ দ্যা ক্রাইস্ট শেষ করার পর উনি খ্রীষ্ট ধর্ম পালন করতে শুরু করেন। উনার চরিত্র মেল গিবসন নিজ হাতে গড়ে তুলেছিলেন। মিইয়া মরজেন্সটারন(জন্ম মে ১৯৬২, রোমানীয়া) যিনি মা মারীয়ার ভুমিকায় অভিনয় করেছিলেন উনি উনার সাক্ষাৎ কারে বলেছিলেন যে, প্যাসন অফ দ্যা ক্রাইস্ট করার সময় উনি গর্ভবতী ছিলেন। এই কথা উনি কাউকে বলেন নি।
তবে উনি এও বলেছিলেন যে কোন এক অলৌকিক শক্তি বলে উনি কোন সমস্যার সম্মুখীন হওয়া ছাড়া তিনি প্যাসন অফ দ্যা ক্রাইস্ট শেষ করেছিলেন। যীশুর মৃত্যুর পর মা মারীয়ার কোলে, যীশুকে সমর্পন করার যে দৃশ্যটি মেল গিবসন নিয়ে ছিলেন সেই দৃশ্যটি মাইকেল এজ্ঞেলোর বিখ্যাত ভাস্কর্য “লা পাইতো ” থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নেওয়া হয়েছিল।এই ভাস্কর্য টি নির্মান করা হয় ১৪৯৮ সাল থেকে ১৪৯৯ সালের মধ্যে। এটি এখন ভ্যাটিক্যানের সেন্ট পির্টাস ব্যাসিলিকা তে অবস্থিত। এই তো গেল সিনেমার কথা, তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনার বর্ননা দিয়ে ছিলেন মেল গিবসন নিজে। উনি উনার সাক্ষাতকারে বলেছিলেন যেদিন থেকে তিনি প্যাসন অফ দ্যা ক্রাইস্ট এর কাজ শুরু করেন যেদিন থেকে অদ্ভুত, অদ্ভুত অলৌকিক ঘটনা ঘটতে থাকে শুটিং স্টেজে। উনার কাস্ট আর ক্রু দের সাথে ঘটে অনেক অদ্ভুত ঘটনা।
অনেক ক্রুরা যাদের চোখের সমস্যা ছিল তারা ভালো হয়ে গিয়েছে,শ্রবনহীনরা শুনতে পেয়েছে। এক পার্শ্ব অভিনেতার ছয় বছরের একটি মেয়ে ছিল, যার মৃগী রোগ ছিল, সেই মেয়েও কাজ করারা সময় ভাল হয়ে গিয়েছিল। অথচ দিনে সেই মেয়ে ৫০ বার পর্যন্ত মৃগী রোগে আক্রান্ত হত। যাই হোক,লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে, এবার শেষ করতে হবে। প্যাসন অফ দ্যা ক্রাইস্ট সর্ব কালের সেরা একটা ধর্মীয় মুভি। মেল গিবসন নিজের মত করে, এই সিনেমা তৈরী করেছেন। আমার এক দাদা,যিনি বর্তমানে পিমে ফাদার, আমাকে বলেছিল, যে উনি যখন রোমে পড়াশুনা করতেন তখন মেল গিবসন তাদের পাশে একটা সেমিনারীতে ৩ মাস থেকে প্যাসন অফ দ্যা ক্রাইস্ট করার জন্য নিজেকে আধ্যাত্মিক ভাবে গড়ে তুলছিলেন। অবশ্য আমি এর সত্যতা যাচাই করেনি। আমি আবারো অনুরোধ করব এই লেখার সাথে ৫ মিনিট এর এই ভিডিও টা দেখার জন্যে। এই ৫ মিনিট এত টাই মর্মান্তিক ছিল যা দেখে কেদেছিল হাজার হাজার মানুষ।কে জানে হয়ত, আপনার জন্য ও কোন ভাল খবরের অপেক্ষা করছে।