খ্রীষ্ট মন্ডলীর একটি দুঃখের দিন হল পোপ জন পল কে হত্যা চেস্টা করা।আজ থেকে ৪০ বছর আগে পোপ দ্বিতীয় জন পল কে সেন্ট পিটার স্কয়ারে জনসম্মুখে গুলি করা হয়। অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। সেই দিনটিকে স্মরন করে আজকের এই লেখা।

 পোপ ২য় জন পল 

                                         

পোপ দ্বিতীয় জন পলঃ ১৮ ই মে ১৯২০ সালে পোল্যান্ড এ জন্ম গ্রহন করেন। প্রকৃত নাম ক্যারল জোসেফ ওয়াজটিলা। তিন ভাই বোনের মাঝে তিনি ছিলেন সবার ছোট। তিনি ১৯৪৬ সালে ১ লা নভেম্বর মাসে যাজক পদে অভিষিক্ত হন। ১৯৫৮ সালে কারাকাউ এর সহকারী বিশপ পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি কার্ডিনাল নিযুক্ত হন এবং ১৬ অক্টোবর ১৯৭৮ সালে খ্রীষ্ট মন্ডলীর ইতিহাসে ২৬৪ তম পোপ নির্বাচিত হন। এবং উনি উক্ত পদে ২৬ বছর ১৬৮ দিন অধিষ্ঠিত ছিলেন।

মেহমেত আলী আগচা

মেহমেত আলী আগচাঃ মেহমেত আলী আগচা ৯ ই জানুয়ারি ১৯৫৮ সালে জন্ম গ্রহন করেন। উনি তুরুস্কের হেকিমহান এর এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। ছোট বেলা থেকেই উনি ছিলেন প্রচন্ড হিংসাত্মক এবং ডানপিটের মানুষ। ১৯৭৯ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারী আব্দে পেকচি নামের একজন সাংবাদিক কে হত্যা করেন। সেই থেকেই শুরু হয় উনার রক্তের নেশা। সাংবাদিক হত্যার পর উনি ইটালীতে পলায়ন করেন। মূলত উনি ছিলেন চরম উগ্রপন্থী দল গ্রে উলফের সদস্য। গ্রে উলফের সদস্য হওয়ার কারনে মেহমেত আলী সিরিয়া তে ২ মাসের অস্ত্র চালানো ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর উপর প্রশিক্ষন নেন। মূলত গ্রে উলফ কে সাপোর্ট করত বুলগেরিয়া কমিউনিস্ট সরকার। এবং এই বুলগেরিয়া থেকে ই পোপ দ্বিতীয় জন পল কে হত্যা করার নীল নকশা তৈরী করা হয়।

দ্বিতীয় জন পলের উপর আক্রমণঃ ১৯৭৯ সালেই পোপ দ্বিতীয় জন পলকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়। পোপ দ্বিতীয় জন পলকে ক্রুসেডারদের মুখোশ ধারী নেতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। এবং উনাদের টার্গেট ছিল ১৯৭৯ সালের ২৮ শে নভেম্বর মক্কা আক্রমণ এর প্রতিশোধ নেওয়া। কারন গ্রে উলফ বিশ্বাস করত মক্কায় আক্রমণ এর প্রতিশোধ, পোপ কে হত্যার মাধ্যমে বদলা নেওয়া সম্ভব। ১৯৮০ সালে ইটালীর রোমে বসে এই হত্যা কান্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করা হয়। মূলত তিন জন মিলে এই হত্যা কান্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করেন। এর মধ্যে একজন তুরুস্কের এবং বাকী দুই জন ছিল বুলগেরিয়ার। বুলগেরিয়ান নাগরিক জিলো ভ্যাসিলেভ এর উপর পোপ কে হত্যা করার সম্পুর্ন দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রায় ৩ মিলিয়ন সমপরিমান অর্থের মাধ্যমে এই হত্যা কান্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করা হয়। মেহেমেত আলীর উপর দ্বায়িত্ব ছিল পোপ দ্বিতীয় জন পলকে গুলি করে, ছোট খাট একটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যে কোন ভাবেই হোক সেন্ট পিটার স্কয়ার ত্যাগ করা। এবং বুলগেরিয়ান দুতাবাসে আশ্রয় নেওয়া। পরিকল্পনা মত ১৩ মে সবাই প্লে কার্ড নিয়ে পোপের জন্য অপেক্ষা করছিল। পোপ যখন মেহমেত এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি পোপ কে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করে।এর মধ্যে চারটি গুলি পোপকে আঘাত করে।প্রচন্ড হটগন্ডগোল শুরু হবার কারনে মেহমেত ভয়ে পালাতে পারে নি। পরে পোপের প্রধান দেহরক্ষি ক্যামিলা সেবিন মেহমেত ধরে ফেলে। এবং সেই আক্রমণ এ পোপ কোন ভাবে বেচে যায়।

পোপ ২য় জন পলের উপর আক্রমনের মূহূর্ত


মেহমেত আলী আগচা ধরা পরার পর ১৯৮১ সালে জুলাই মাসে পোপকে হত্যা চেষ্টা করার অভিযোগ এ যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল মেহমেত এর সাথে দেখা করেন কারাগারে।এবং উনার সাথে একান্ত কথা বলেন। এবং সাক্ষাতের পর পোপ বলেন উনি মেহমেত কে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং সবাইকে মেহমেত এর জন্য প্রার্থনা করতে বলেন।এবং পোপের প্রচেষ্টার কারনে একজন যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামী ১৯৮৭ সালে নিজের মার সাথে দেখা করার সুযোগ পান। এবং প্রায় এক দশক পর ভাইদের সাথেও উনার দেখা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন পোপ দ্বিতীয় জন পল।মেহমেত আলী আগচা কে ছেড়ে দিতে বাধ্য করার জন্য ১৯৯৭ সালের ৯ জুন এয়ার মাল্টা নামে এক প্লেন হাইজ্যাক করা হয়েছিল। যাতে প্রায় ৮৩০ জন যাত্রী ছিল। কিন্ত ইটালী সরকার মেহমেত কে ছাড়ে নি। বরং হাই জ্যাকরা আত্নসমর্পণ করেছিল। মেহমেত আলীর দ্বিতীয় জীবনঃ ইটালীতে ২০ বছর যাবজ্জীবন কাটানোর পর পোপ দ্বিতীয় জন পল ততকালীন ইটালীর রাষ্ট্র পতি আজেগ্লিও সিম্পিকে অনুরোধ করেছিলেন মেহমেত আলীকে ক্ষমা করে দিতে। ইটালীর রাষ্ট্রপতি মেহমেত কে ক্ষমা করেন এবং তুরুস্কে প্রেরন করেন। কিন্ত তুরুস্কে প্রেরন করার পর তুরস্ক সরকার ১৯৭৯ সালের সেই সাংবাদিক হত্যার অভিযোগ এ মেহমেত কে আবার গ্রেফতার করে এবং আরো ১০ বছর কারাদন্ড দেন। ২০১০ সালে সেই কারাদণ্ড এর মেয়াদ শেষ হয়। মেহমেত ২ রা মে ২০০৮ সালে নিজের কৃত কর্মের জন্য পোল্যান্ডে নাগরিক হবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। উনি চেয়েছিলেন উনি পোল্যান্ডে গিয়ে পোপ দ্বিতীয় জন পলের দেশে গিয়ে সেবার মাধ্যমে নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেবেন। এখানে বলে রাখা ভাল মেহমেত এবং তার পরিবারের অনেক সদস্যই পরবর্তী তে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করেন এবং মেহমেত অনেক বার চেষ্টা করেছিল ক্যাথলিক যাজক হবার জন্য। মে হ মেত অনেক বার চেয়েছিল পোপ দ্বিতীয় জন পলের কবরে যেতে কিন্ত সেই সুযোগ তিনি পান নি। পরবর্তীতে ২৭ শে জুন ২০১৪ সালে পোপ ফ্রান্সিস এর মধ্যস্ততায় মাধ্যমে উনি পোপ দ্বিতীয় জন পলের কবরে যেতে পেরেছিলেন।

পোপ ২য় জন পলকে হাসপাতালে নেওয়ার দৃশ্য

যাই হোক লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে, মেহমেত একটি চরম দাবী করেছিলেন। উনি উনার সাক্ষাৎ কারে বলেছিলেন পোপ দ্বিতীয় জন পলে হত্যা করার জন্য ইরান সরকার এবং আয়াতুল্লাহ আল খামেনী নির্দেশ দিয়েছিল। যদিও ভ্যাটিকান অভিযোগ টি অস্বীকার করেছিল।তারপর ও অনেকের মাঝে কিন্তু, কিন্তু থেকেই যায়। কারন মেহমেত বলেছিলেন, এবং উনার বইয়ে উনি বলেছিলেন, যে আয়াতুল্লাহ খোমিনির নির্দেশে মোহসেন রেজাইয় নামে একজনের কাছে ইরানে উনি অস্ত্র প্রশিক্ষন নেন। এবং ১৯৮৩ সালে ২ রা ডিসেম্বর যখন পোপ উনার সাথে দেখা করতে যান উনি পোপকে বলেছিলেন আয়াতুল্লাহ আল খামেনী র নির্দেশে পোপ কে হত্যা করার নির্দেশ ছিল। যাই হোক আমরা কি ভ্যাটিকান এর কথা বিশ্বাস করব নাকি যে হত্যা করতে চেয়েছিল তার স্বীকারোক্তি কে বিশ্বাস করব সেই দায়িত্ব না হয় পাঠকের উপর ই ছেড়ে দিলাম।

মেহেমুদ এবং পোপ জন পলের মধ্যে সাক্ষাৎকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *