পৃথিবির ইতিহাসে অন্যতন নৃশংস গনহত্যা ,আর্মেনীয় গনহত্যা।

                                         

২৪ শে এপ্রিল আর্মেনীয় গনহত্যা দিবস। ১৫ লক্ষ খ্রিষ্টান কে হত্যার স্মরনে পালন করা হয় এ দিবস। অবশেষে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আর্মেনীয় গনহত্যা কে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৫ লক্ষ খ্রীষ্টান কে কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা নিয়ে ই আজকের লেখা।
————————————————————————-আপনি যত গুলা বাংলা ব্লগ পড়েন না কেন ,আপনি কোন দিন সঠিক পাবেন না ।এরা কোন দিন ও আপনাকে সঠিক তথ্য দিবে না ,আর এরা দিতে চায় ও না।আর উনাদের আরেক মুরব্বি কোন দিন স্বীকার ই করে না আর্মেনিয়ায় যে গন হত্যা হয়েছিল ।লেখাটা বড় হতে পারে ,ধের্য্য ধরে পড়তে পারেন।জানতে পারবেন কেন ,কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল ।
অটোম্যন সম্রাজ্য যাকে বলা হয় উসমানীয় সম্রাজ্য ,যাদের রজত্ব কাল ছিল ১২৯৯ সাল থেকে ১৯২৪ ।এদের নেতৃত্বে হত্যা করা হয় আর্মেনিয় ১৫ লক্ষ খ্রিষ্টান কে ।এরা মুলত তুর্কি ।আর্মেনিয়ান দের হত্যা আনুস্টানিক ভাবে হত্যা করা হয় ১৯১৫ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে ।২৩৫ থেকে ২৭০ জন আর্মেনিয়ান বুদ্ধিজীবীকে হত্যার মাধ্যমে শুরু হয় এই গন হত্যা ।প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর শুরু করা হয় ওদের উপর হত্যা ,নির্যাতন ,গুম,ধর্ষন ,নির্যাতন ।সেনাবাহিনী দ্বারা হাজার হাজার আর্মেনিয় নারীকে ধর্ষন করা হয় এবং ধর্ষন এর পর হত্যা করা হয়।কিভাবে হত্যা করা হয় ,সেটা বলতে অনেক ঘৃনা হচ্ছে তাই বললাম না ।
আর্মেনিয়ানরা যে ভাবে তুর্কি শাসনের আন্ডারে যায়ঃ
১৫৫৫ সালে আর্মেনিয়ান তুর্কি আন্ডারে চলে যায় ,আর্মেনিয়া পাম অব আমস নামে পরিচিত ছিল ।জুহাব চুক্তির মাধ্যমে ১৬৩৯ সালে পুর্ব আর্মেনিয়া স্থায়ী ভাবে বিভক্ত হয়ে যায়।আর্মেনিয়ান সম্প্রদায়টি তিনটি ধর্মীয় সম্প্রদায় নিয়ে গঠিত ছিল: আর্মেনিয়ান ক্যাথলিক, আর্মেনীয় প্রোটেস্ট্যান্ট এবং আর্মেনীয় অ্যাপোস্টলিক, ।১৮৪৮ সালে প্রায় তিন মিলিয়ন আর্মেনীয় বাস করত (কনস্টান্টিনোপল ও বাল্কান অঞ্চল, এশিয়া মাইনর এবং সিলিসিয়ায় ।

গনহত্যায় বেঁচে যাওয়া পুরুষশূন্য একটি পরিবার

প্রারম্ভিক নির্যাতনঃ
যেহেতু অটোম্যান রা মুসলিম ছিল ,উনারা চেস্টা করত আর্মেনিয় দের জোর পূর্বক মুসলমান বানানোর ।এবং যেহেতু আর্মেনিয়ান রা নিজেদের ধর্ম মত পরির্বতন করতে চাইত না ,তাই তাদের কে জোর পূর্বক জিজিয়া কর দিতে হত।জিজিয়া কর হল সেই কর যা শুধু মাত্র অমুসলিম দের মধ্যে থেকে নেওয়া হয়ে থাকে ।কোন কোন ক্ষেত্রে তা ৫০ % পর্যন্ত হয়ে থাকে ।কোন খৃষ্টান যদি আদালতে সাক্ষি দিতে চাইত তাদের সাক্ষি নেওয়া হত না ।তাদের অস্ত্র বহন করা বা ঘোড়া এবং উটের উপরে চলা নিষিদ্ধ ছিল।খৃস্টানদের গির্জায় যাওয়া বন্ধ করা হয় ,এমনকি গির্জায় ঘন্টা দিলে হত্যা পর্যন্ত করা হত ।
যে ভাবে পাওয়া যায় কিছুটা স্বাধীনতাঃ১৯১৪ সালে ইউরোপের তিন পরাশক্তি ,ফ্রান্স ,রাশিয়া ,বিট্রেন অটোম্যান দের উপর চাপ প্রয়োগ করে,যেন সংখ্যা লুঘুদের কিছুটা হলেও স্বাধিনতা দেওয়া হয় ।কমপক্ষে চিকিৎসা ক্ষেত্রে।কিন্তু অটোম্যান রা তা প্রতাখ্যান করে ,কোন ভাবেই খৃষ্টান দের এই সুযোগ দিতে অস্বীকার করে তারা ।১৮৭৮ সালে তুর্কি রুশ যুদ্ধের পর তুরস্কের বিশাল অংশ রাশিয়া দখল করে নেয় ,এরপর রাশিয়ায়প্যাট্রিয়ার্ক নেরেস এবং রাশিয়ার নেতাদের কাছে বার বার সামরিক বাহিনীকে আর্মেনিয়ানদের স্থানীয় সরকার-স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সান স্টেফানো পরবর্তী চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।সান স্টেফানো চুক্তি ১৮৭৮ সালে ৩ রা মার্চ সাক্ষরিত হয় রাশিয়া আর তুরস্কের মাঝে ।এই চুক্তির ধারা ১৫ এর মাধ্যমে আর্মেনিয়ান দের কিছুটা হলে রক্ষা করার কথা বলা হয় ।আর্মেনীয় মুক্তির আন্দোলনঃআর্মেনিয়ানরা নিজেদের মুক্তির জন্য তিনটি দলে ভাগ হয়ে আন্দোলন করে ,নিজেদের মধ্যে কিছু মতানৈক্য থাকার কারনে তিন টি রাজনৈতিক দল হয় । সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট হুনচাকিয়ান পার্টি; এবং আর্মেনিয়ান বিপ্লবী ফেডারেশন।তাদের লক্ষ্য কিন্তু এক ছিল ,আর্মেনিয়ার মুক্তি ।মতাদর্শ গত পার্থক্য থাকলেও এদের একটা উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপের শক্তির মাধ্যমে অটোম্যানদের উপর চাপ প্রয়োগ করা ।যাতে উনারা বেশ সাফল্য লাভ করে ।হামিদিয়ান গনহত্যাঃ১৮৯৫ সালে দ্বিতীয় সুলতান আব্দুল হামিদ আর্মেণিয়দের দমন এর জন্য কুর্দি দের দিয়ে একটি বাহিনি তৈরি করে করে .১৮৯৫ সালে মে মাসে আর্মেনীয়রা বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে ।যার ফলশ্রুতিতে ইউরোপিয়ান পাওয়ারহাউজ গুলি সুলতান আব্দুল হামিদ এর উপর চাপ প্রয়োগ করে ।আব্দুল হামিদ এর পুলিশ বাহিনি আর্মেনীয় দের উপর হত্যা যজ্ঞ চালায় এবং হত্যা করা হয় ১ লক্ষ থেকে তিন লক্ষ আর্মেনীয়কে ।যাকে হামিদিয়া গনহত্যা বলা হয়ে থাকে ।প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আর নির্মম হত্যা যজ্ঞঃ ইতিহাসে চোখ ফেরালে দেখা যায়, ১৯১৪ সালে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের পক্ষ নিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয় তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্য, আর্মেনীয়রা যে সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। যুদ্ধ চলাকালে অটোমান কর্তৃপক্ষ আর্মেনীয়দের ‘ঘরের শ ত্রু’ বলে প্রচারণা চালাতে থাকে। ১৯১৫ সালের ২৪ এপ্রিল অটোমান সরকারের শত্রু বলে সন্দেহে আর্মেনীয় সম্প্রদায়ের কয়েকশ নেতা ও বুদ্ধিজীবীকে কনস্টান্টিনোপলে (বর্তমান ইস্তাম্বুল) বন্দি করা হয়। পরবর্তীতে তাদের বেশির ভাগকেই হত্যা করা হয়। কাউকে কাউকে দেওয়া হয় নির্বাসন। আর্মেনীয়রা ওই ২৪শে এপ্রিল দিনটিকেই গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। আর্মেনীয়রা দাবি করে, ১৯১৫ থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যে তাদের ১৫ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়। আর্মেনীয়রা দীর্ঘদিন থেকে ওই হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য চাপ দিয়ে আসছে। এটি তাদের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রীয় বিষয়। তবে কোনও কোনও বিশ্লেষকের মতে, এটি তুরস্কের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় এবং সম্ভাব্য ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের অধিকার লাভের বড় কৌশলেরই অংশ। সর্বশেষ কথাঃআর্মেনিয়া গনহত্যা হল বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে নির্মম গনহত্যার একটি ।শুধু মাত্র ধর্মীয় কারনে একটি জাতীকে নিধন করা মানব সভ্যতার ইতিহাসে বিরল ।তবে এই গনহত্যা কে তুরস্ক কখনো মেনে নেয় নি ।এমনকি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও এই গনহত্যার বিপক্ষে ।পোপ ফ্রান্সিস অনেক বার এটিকে গনহত্যা বললে ও কেউ এগিয়ে আসে নি ।পৃথিবীর সব এই গনহত্যা কে অস্বীকারে ব্যস্ত।আর্মেনিয়ানদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই ।তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান কোন দিন ও এই গনহত্যা কে স্বীকার করে না ।আর্মেনিয়ানরা এখনো বেচে আছে সেই গনহত্যার রেশ নিয়ে ,এদের বেচে থাকতে হবে ,একটি জাতীকে কেউ কোন দিন মুছে দিতে পারেনি ,যেমন টা হিটলার ও পারেনি ।
সর্বশেষ ,মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই গনহত্যা কে স্বীকৃতি দিলেও ,তুরস্ক সেটাকে কখনো মেনে নেয় নি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *