কিছু দিন আগে, বিশাল বড় এক লেখা লিখেছিলাম ইহুদি জাতীর উৎস নিয়ে।ইহুদি জাতীর উৎসের খোঁজে। আগ্রহীরা এই গ্রুপে খুজলে হয়ত পেয়ে যেতে পারেন কিংবা আমাকে নক দিলে আমিও ইন বক্স করতে পারি। ইহুদি জাতী কে বেশীর ভাগ জাতী ই ঘৃনা করে গেছে।ইহুদিদের ঘৃনা করেছে খ্রিস্টানরা, ইহুদীকে ঘৃনা করেছে মুসলিমরা, ইহুদীদের ঘৃনা করেছে নাৎসীরা। এদের প্রতি কেন এত ঘৃনা, আমি আজো বুঝতে পারি না।হিটলার ১ কোটি ২০ লক্ষ ইহুদি থেকে ৬০ লক্ষ ইহুদি নিধনের সাথে জড়িত। মধ্যযুগে খ্রীষ্টানরা ও এদের হত্যা করেছে।১৩৪৬ সাল থেকে ১৩৫৬ সালে ব্ল্যাক ডেথ নামে এক মহামারীতে কয়েক কোটি মানুষ মারা যায়। আর এই মহামারীর কারন হিসেবে ধরা হয়েছিল ইহুদিদের।আর এর ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল। স্ট্রাসবুর্গ নামক জায়গায় ৯০০ ইহুদিকে পুরিয়ে মারা হয়েছিল। যাই হোক, এই কথা গুলো,আমি লিখেছি, ইহুদি জাতীর উৎসের সন্ধানে লেখায়। অথচ আমরা ভুলে যাই, যীশু খ্রীষ্ট ও ইহুদি ছিলেন। যে ফেসবুক দিয়ে ইহুদিদের সমালোচনা করছি,সেই ফেসবুক ও ইহুদি বংশোদ্ভূত মার্ক জুকার বাগের তৈরী।
এবার আসি,বাংলাদেশের ইহুদিদের কথায়।বাংলাদেশে যে জায়গায় বসে আইন বানানো হয়, সেই সংসদ ভবন কে বানিয়েছিলেন জানেন।লুই আই কান। কে তিনি? উনি একজন পোলিশ, আমেরিকান ইহুদি।বাংলাদেশের স্বাধীনতা কার হাত ধরে এসেছে? জেনারেল জ্যাক জ্যাকবের হাত ধরে।কে তিনি? তিনিও একজন ইহুদি।ভারতীয় ইহুদি।১৯৭২ সালে ৭ ই ফেব্রুয়ারী ইহুদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এব্বে ইবেন বাংলাদেশ কে অফিসিয়ালী স্বীকৃতি দিয়েছিল, বাংলাদেশ তা মেনে নেয় নি। বুকে ঘৃনা নিয়ে বাংলাদেশ তা প্রত্যাখান করেছিল। যে কাজ ভারত ও করেছিল। কিন্ত ঠেলায় পরে ১৯৯২ এ ইস্রায়েলের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।আর আজ ভারতের অবস্থান কোথায় আর আমাদের ই বা কোথায়?
যাই হোক,আজকের মূল আলোচনায় আসি। বাংলাদেশের শেষ ইহুদির খোঁজে। এর আগে আমাদের এর প্রেক্ষাপট জানতে হবে।জানতে হবে এই উপমহাদেশে কিভাবে এসেছিল ইহুদিরা? শ্যালম আরন ওবাদি কোহেন। যার জন্য সিরিয়ার এলিপ্পোতে, ১৭৬২ সালে, অটোম্যান শাসন আমলে। এবং উনি মৃত্যু বরন করেন ১৮৩৬ সালের পশ্চিম বঙ্গের কোলকাতায়। উনার হাত ধরেই এই উপমহাদেশে আগমন ঘটে ইহুদিদের।১৭৯৮ সালে ভারতের সুরাটে তিনি আগমন করেন,সেখান থেকে আসেন পশ্চিম বঙ্গের কোলকাতায়।উনি দুই বিয়ে করেন। একজনের নাম ছিল সিতি কোহেন, আর আরেক জনের নাম ছিল নাজিমা সিমহা নিসিম।দুই পরিবারে ৬ জন মেয়ে আর ৪ জন ছেলে ছিল উনার।এই কোহেন সাহেবের হাত ধরেই বাংলায় ( পূর্ব পাকিস্তানে) ইহুদি জাতীর আগমন ঘটে। মি.কোহেন সাহেব তার ব্যবসা প্রসার করার জন্য ততকালীন ঢাকায় কর্মচারী নিয়োগ করেন৷ আর এই কর্মচারীদের হাত ধরেই ইহুদিদের আগমন ঘটে এই বাংলায়। ১৮১৭ সালে মজেস ডিউক নামে একজন মি.কোহেনের বড় মেয়ে লিউনা কে ১৩ বয়সী বিয়ে করেন। এই ডিউট সাহেব বিয়ের পর নিজের স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। এবং ঢাকাতে একটি সিনোগগ নির্মান করেন।
কিন্ত ১৮২২ সালে ব্যবসায় কোন এক কারনে তিনি ঢাকা ত্যাগ করে আবার কোলকাতাতে ফিরে যান। সত্যি কথা বলতে কি, ইহুদীদের প্রতি বাঙ্গালী মুসলিমদের ঘৃনাই ছিল বেশী।আর এই অঞ্চল মুসলিম অধুষিত হওয়ায় এই অঞ্চলে ইহুদিরা বেশী থাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করত না।তাই ঢাকায় যত গুলা সিনেগগ নির্মান হয়েছিল তার কয়েক গুন বেশী নির্মান হয়েছিল কোলকাতাতে।আজও সেই গুলো ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে বেচে আছে।
বাংলাদেশ থেকে কেন হারিয়ে গেছে ইহুদিরা, সেই ইতিহাস আজো অজানা।কিংবা আদো কি হারিয়ে গেছে,নাকি ভয়ে নিজেদের পরিচয় গোপন করতে বাধ্য হচ্ছে ইহুদিরা? আজো ঢাকাতে দুই ইহুদি পরিবারের খবর পাওয়া যায়। যারা নিজেদের কে ইহুদি পরিচয় না দিয়ে ক্যাথলিক পরিচয় দিতে বাধ্য হচ্ছে, ভয়ে।একজনের নাম হচ্ছে প্রিসিলা নি জ্যাকব, যিনি আলফ্রেড ডি কস্তা নামের একজন কে বিয়ে করে ক্যাথলিক হয়ে গিয়েছিলেন। উনার একটা ঢাকাতে প্রাইভেট একটা স্কুল ও ছিল। উনার ভাই হেনরী, যেও কিনা বাচতে গিয়ে ইহুদি পরিচয় বাদ দিয়ে ক্যাথলিক পরিচয় গ্রহন করেছিল। এই দুই জন ছাড়া আরো দুই ইহুদি পরিবারের কথা জানা যায়। দুই জন ইহুদি ভাই।একজন ছিলেন এনোস এবং জিবোলন ড্যানিয়েল। এনোস বাস করতেন চিটাগাং আর জিবোলন বাস করতেন ঢাকাতে।তাদের ছেলেরা কানাডা এখন এবং যুক্তরাজ্যে বাস করে।তবে, ধারনা করা হয়ে থাকে যিহুবা উইটনেসের মাধ্যমে শত শত ইহুদি আজো বাংলাদেশে আছে।
মর্ডিকাই হাইম কোহেন, বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক শেষ ইহুদিঃ
ধারনা করা হয় ১৯৪১সালে উনার জন্ম হয়।উনি ছিলেন কোহেন পরিবারের পঞ্চম এবং সর্বশেষ বংশধর,বাংলাদেশের ক্ষেত্রে।উনি রাজশাহী অঞ্চলের লোক ছিলেন। রাজশাহীতে বিশাল জায়গা সম্পত্তির মালিক ছিলেন তিনি। রাজশাহীর বিমান বন্দর এলাকার কাছে এখনো ২০ বিঘা,সহ কয়েক শ বিঘা জমির মালিক ছিলেন মর্ডিকাই কোহেন। উনাকে সবাই মোনা সাহেব নামে চিনতেন। ১৯৫০ সালে তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬২ সালে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন। তিনি বাংলাদেশ রেডিও তে সংবাদ পাঠ এবং ঘোষকের কাজ করতেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করে কলকাতার ৩০ পার্ক লেনে বাস করতেন। নাটকের প্রতি আগ্রহ ছিল উনার। নবাব সিরাজ উদ্দোলাহ নাটকে কয়েকবার সেনাপতির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। মি.কোহেন বাংলাদেশ কে মনে প্রানে ভালোবাসতেন।১৯৬৭-৬৮ সালে যদি আরব ইস্রায়েল যুদ্ধ না হত তাহলে তিনি কখনো রাজশাহী ছেড়ে যেতেন না।বাংলাদেশে অনিরাপদ বোধ করছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ছিল নারী ছেরা ধনের মত। ২০১৪ সালে তিনি বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন, বি টি ভির সুর্বন জয়ন্তীতে, কিন্তু অসুস্থতার কারনে আসতে পারেন নি। মি.কোহেনের স্ত্রী জো কার্শিয়ার স্বামীর সাথে সাথে থাকতেন তিনি।উনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ কে কি পরিমান ভালোবাসতেন তিন। মি.কোহেনের দুই ছেলে এক মেয়ে,রাফায়েল, মিখায়েল এবং এনা, তাদের সাথে মিলিত হয়েছিলেন ২০১৫ সাল শেষ বারের মত। অনেক বার ইস্রায়েল যেতে চাইলেও যাওয়া হয়ে উঠে নি উনার। ছেলে মেয়েরা এখন থাকেন আমেরিকা আর ইস্রায়েলে। ২০১৩ সালের শাহাবাগ গন আন্দোলনে বার বার আসতে চেয়েছিলেন তিনি।প্রায় স্লোগান ই মুখস্থ ছিল উনার। সবচেয়ে, আশ্চর্য জনক বিষয় মি.কোহেন মারা যান ২০১৫ সালে ১৬ ই ডিসেম্বর। যেদিন বাংলাদেশের বিজয় দিবস।
যাই হোক,লেখাটা শেষের দিকে নিয়ে আসি।ইহুদীরা মুলত কোলকাতা কেন্দ্রিক ছিল। অনেক সিনেগগ, স্কুল,হাসপাতাল নির্মান করেছেন তারা।ধারনা করা হয় ১৯৪৭ সালে ১৪৫’জন ইহুদি ছিল।১৯৬০ সালের পর থেক ইহুদি রা বাংলাদেশ ছাড়তে শুরু করে।১৯৭১ এর পর দুই টা ইহুদি পরিবার বাংলাদেশে থেকে যায় কিন্ত সেখান থেকে ১৯৭৩ সালে একটি পরিবার এবং ১৯৭৫ সালে আরেক টি পরিবার কলকাতায় চলে যায়।তবে এই তথ্য গুলো সরকারী তথ্য।২০১৮ সালে চারটি ইহুদি পরিবারের খোজ পাওয়া যায়,ঢাকায়।কিন্ত তারা নিজেদের ইহুদি পরিচয় দিতে চায় না,তারা নিজেদের ক্যাথলিক পরিচয় দিতেই ভালোবাসে।তবে একটি অসমর্থিত সুত্র মতে, বাংলাদেশে এখনো ৫ হাজার মি.কোহেনের বংশ ধর রা বেচে আছে।হয়ত প্রান ভয়ে তা প্রকাশ করে না।