নবাব সিরাজউদ্দোলাহ
এই লেখাটা একটা বির্তকিত লেখা।যাদের বির্তক ভালো লাগে,যারা জানতে পছন্দ করেন এই লেখাটা তাদের জন্য।আর যার গতানুগতিক স্কুল জীবনে পাঠ্য বইয়ে যা ছিল সেটাই বিশ্বাস করেন, তাহলে সরি, এই লেখা আপনার জন্য না। এই লেখা আপনার এত দিনের জানা কে আঘাত করবে। না পড়াই ভালো আপনার জন্য। আমাদের অনেক কিছু জানতে দেওয়া হয় না।একটা উদাহারন দেই, এই ধরেন আমাদের শিখানো হলো, রবাট ব্রুশ একজন মহান রাজা ছিলেন। ইংরেজদের সাথে হেরে উনি পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। তারপর এক মাকড়শা পাহাড়ের গুহায় উপর উঠতে চাচ্ছিল। কিন্ত বার বার সে পরে যাচ্ছিল।শেষ মেশ ৭ বারের মাথায় মাকড়শা টা উপরে উঠতে পারল । এই দেখে রবাট ব্রুস চিন্তা করল এক মাকড়শা যদি পারে তাহলে আমি কেন পারব না।তিনি আবার সৈন্য যোগাড় করলেন, ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন এবং জিতলেন। এই কাহিণী বাংলা ইংরেজী দুই ভাষাতেই আছে। কিন্ত রবাট ব্রুস কোন যুদ্ধে জিতেছিল সেই কাহিনী কেউ জানে না।যিনি আমার লেখাটা পড়ছেন, আপনি কি জানেন সেই যুদ্ধ টার নাম কি ছিল? আমাদের অর্ধেক শিখানো হয়, বাকীটা শিখানো হয় না।
আমার ভিতর এক ধরনের ফোবিয়া কাজ করে।বলতে চাইলেও পারি না বলতে কি সেই ফোবিয়া।আমাদের শিখানো হল, ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি ১৮ সৈন্য জন নিয়ে লক্ষন সেন কে পরাজিত করে বাংলা দখল করে। বীর বেশে। কিন্ত এটা একবার ও বলে না যে বখতিয়ার খিলজির ভয়ে অনেক মেয়ে মানুষ সেচ্ছায় আগুনে ঝাপ দিয়ে আত্ন হত্যা করেছিল। কারন তারা খিলজি সাহেবের যৌন দাসী হতে চায় নি।একটাকে বীরত্ব বলে না কাপুরষত্ব বলে। ঘুমন্ত একটা অঞ্চলের মানুষ এর উপর হামলা কখনো বীরত্ব হতে পারে।
তারপর ধরন, সুলতান মাহামুদ ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেছে।ভাল কথা আক্রমণ করে দেশ দখল শাসন কর।না উনি প্রতিবার বিভিন্ন মালামাল লুট করতেন। ময়ুর সিংহাসন নামে একটা সিংহাসন ছিল, উনি চুরি করে নিয়ে গেছেন। উনি প্রতিবার আক্রমন কিন্ত মালামাল লুটের জন্য করতেন না।মেয়েদেরকে যৌন দাসী বানানোর জন্য করতেন। হাজার হাজার মেয়েকে যৌন দাসী হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন। আর আমাদের এই গুলা বলাই হলো না।
সম্রাট আকবরের ৫ হাজার যৌন দাসীছিল। কারা ছিল জানেন, বেশীর ভাগ ছিল হিন্দু মেয়েরা। তারপর ও সম্রাট আকবর মহান। আকবর দ্যা গ্রেট। আরঙ্গজেব হাজার হাজার হিন্দুদের হত্যা করেছে,তাদের মন্দির ভেঙ্গেছে।সম্রাট শাহাজাহান তেজমহালয় নামক মন্দির ভেঙ্গে বানিয়েছে, প্রেমের অনন্য নির্দশন তাজমহল। যার প্রকৃত মালিক ছিল সম্রাট আকবরের নব রত্নের একজন বীরবল। তার বংশধর জয় সিং এর কাছ থেকে জোর করে নিয়ে বানিয়েছে, মমতাজের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন, তাজমহল। এই গুলা আমাদের জানানো হয় না জানানো হয় যত সব অখাদ্য কুখাদ্যের কথা।
যাই হোক, মূল আলোচনায় আসি। আমার এই লেখায় দুই জন প্রধান ব্যক্তি।১.সিরাজ উদ্দোহ ২.মীর জাফর।
নবাব সিরাজ আর লুতিফুন্নেসা (হীরা)
প্রথমে জেনে নেই সিরাজউদ্দো্লাহ কে ছিল? উনার পুরো নাম ছিল। উনার পুরো নাম মির্জা মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দোহ। বাবার নাম জয়েন উদ্দিন আহমেদ খান, মার নাম আমেনা বেগম। ১৭৩৩ সালে মুর্শীদাবাদে উনি জন্ম গ্রহন করেন। উনি বিয়ে করেছিলেন তিন টা।তাও আবার মাত্র ১৮ বছর বয়সে।প্রথম স্ত্রী লুতিফুন্নেসা বেগম যার আসল নাম রাজকুমারী, ডাক নাম ছিল হীরা। উনি ছিল একজন হিন্দু মহিলা। যাকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করেন তথা কথিত সিরাজ।উনাকে নিয়ে কিছু গীতি কবিতা আছে সেটালেখার পরবর্তী অংশে তুলে ধরব। দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ছিল জয়বুন্নেসা, আর শেষ জনের নাম ছিল উম্মদাদুন্নেসা। আর সিরাজের হেরমে ছিল ৫০০ জনের মত যৌন দাসী। সিরাজের একটা মেয়েও ছিল। যার নাম ছিল উন্মে জোহরা। সিরাজ আর হীরা কে নিয়ে একটি প্রচলিত কাহিনী আছে। কাহিনীটি হললুতিফুন্নেসা বেগেম ।জন্ম ১৭৪০ সালে, আর মারা যান ১০ ই নভেম্বর ১৭৯০ সালে। উনার আসল নাম ছিল রাজকুমারী ।ডাকনাম ছিল হীরা উনি একজন হিন্দু মহিলা ছিলেন ।
আপনারা অনেকে মোহন লালের কথা জানেন ।এই হিরা ছিল মোহন লালের বোন ।সিরাজ এর সাথে এত গুলা হিন্দু শাসক ষড়যন্ত্র করলেও উনি কেন করেন নি ,বুঝতে পারছেন ।সিরাজ দ্দোলাহ প্রচুর মদ্যপান করতেন এটা অজানা ঘটনা না ।উনার আর হিরা একটা পুত্র সন্তান হয় ,যা বিয়ের আগে ।পরর্বতিতে এই হিরা আর নবাবের বিয়ে হয় ।এবং নাম হয় লুতিফুন্নেসা ।পলাশীর যুদ্ধে যখন মোহনলাল বুঝতে পারলো যে নবাব পরিবারকে ইংরেজরা বন্ধী করবে তখন মোহনলাল ওই শিশু পুত্রকে নিয়ে বের হয়ে পড়েন ।তার সঙ্গে রইল আর দুইজন বিশ্বস্ত সাথী বাসুদেব আর হরানন্দ। তাঁরা পালাতে পালাতে আশ্রয় নিলেন ময়মনসিংহের বোকাইনগর দূর্গে। সাথী বাসুদেবের কাকা বিনোদ রায়ের কাছে শিশুটিকে রেখে তার নিরাপত্তা বিধান করলেন মোহনলাল।এই শিশুটির নাম রাখা হয় যুগোল কিশোর রায় চৌধরী ।উনি যখন জানতে পারেন উনার বাবা সিরাজ উদ্দোল্লাহ ,তাই ওনার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ি উনাকে কবর দেওয়া হয় অতি গোপনে মুসলিম রীতিতে।এবং এই পরিবার যাদব পুর ইউনিভার্সিটিকে ১৯০৫ সালে অনেক অর্থ দান করে ।তবে একটা কথা সত্য এই ইতিহাস গুলো লোক মুখে শোনা ।এই কাহিনী বিভিন্ন পালা গান আর চরন গান থেকে জানা যায় ।রূপমঞ্জরী গ্রন্থে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও তথ্য দাখিল করেছেন ।আরেকটা বই আছে ওটার নাম সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে লেখক অধ্যাপক অমেলেন।
মীর জাফর আলী খান বাহাদুর ওরফে মীর জাফর
১৬৯১ সালে সৈয়দ আহমেদ নাজাফী ওরফে মীর্জা মিরাক ঘরে জন্ম নেন মীর জাফর আলী খান বাহাদুর ওরফে মীর জাফর। সৈয়দ আহমেদ নাজাফী ছিলেন আরবের নাজফ প্রদেশের লোক। আরব থেকে উনি পাড়ি দিয়েছিলেন এই ভারত বর্ষে।সৈয়দ আহমেদ নাজাফী সমন্ধে তেমন কিছু জানা যায় না।
মীর শব্দটা নামের প্রথমে লাগানো খুবই কস্ট সাধ্য ব্যাপার ছিল ততকালীন আমলে। যারে তারে মীর উপাধী দেওয়া হত না। ১৭৩৪ সালের দিকে মুশির্দকুলি খানের জামাই মহাশয় তখন বাংলার সুবেদার। আমি আগেই বলি রাখি এই খানদের আমার প্রচন্ড রকম ঘৃনা হয়। যেমন ধরেন শায়েস্তা খান। উনি বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা এমন খারাপ করেছিলেন যে মানুষ কে ১ টাকায় ৮ মন চাল কিনতে হত। অনেকের কাছে বিষয় টি ভালো লাগলেও উনি নিজের সুবেদারীত্ব বজায় রাখার জন্য ১৪ লক্ষ টাকা দিল্লী তে দিয়ে এসেছিল। ভাবুন তো এক টাকায় ৮ মন চাল আর সেই অঞ্চল থেকে ১৪ লক্ষ টাকা দিল্লীতে নিয়ে দিয়ে আসে এই দুর্নীতিবাজ শায়েস্তা খান। ঘোড়ার খাবারের উপর ও,এই লোক ট্যাক্স বসিয়েছিল। আর আমাদের পাঠ্য বইয়ে একে বানানো হয়েছে মহান নেতা।
মুর্শিদকুলি খানের মেয়ের জামাই এর নাম ছিল সুজাউদ্দিন। মুর্শিদ কুলি খানের দুই মেয়ে ছিল। কোন ছেলে ছিল না।এক জনের নাম ছিল জিন্নত উন্নিশা আর আরেক জনের নাম ছিল আজিমুন্নিসা।এই দুই জনকেই সুজাউদ্দিন ভাই বিয়ে করেছিল।আমি প্রথমে এটা কে ঘৃনা করতাম। পরে দেখলাম দুই বোন কে একসাথে বিয়ে করা ধর্ম গ্রন্থ দ্বারা স্বীকৃত।এই লোক এমন তেলবাজ ছিল যেকিনা সব সুবেদার কে ছাপিয়ে গিয়েছিল। তিনি দিল্লির বাদশাহ মুহাম্মদ শাহ কে প্রতি বছর ১ কোটি পচিশ লক্ষ করে টাকা পাঠাত। বুঝেন কি অবস্থা।মানুষ না খেয়ে মরে আর হেতেরা নিজেদের সম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য কি না করেছে।এই লোক যখন ইদের নামাজে যেতেন মুড়ির মত টাকা ছিটাতেন। তবে সবচেয়ে বড় কাহিনী হচ্ছে এই লোক নিজের স্ত্রী আজিমুন্নেসা কে জ্যান্ত কবর দিয়েছিলেন। কারন ছিল আজিমুন্নিসা ছোট বেলায় মারাত্নক অসুস্থ হয়ে পরে। তাকে ভাল করার জন্য মানুষের কলিজা খাওয়ানো হয়।আর বড় হয়ে সেটা যখন অভ্যাসে পরিনত হয়, তখন ই তাকে জ্যান্ত কবর দেন সুজাউদ্দিন।
আর এই সুজাউদ্দিন এর আন্ডারে নিচু শ্রেনীর সৈনিক ছিলেন বাংলার ভিলেন মীর জাফর। ১৭৩৪ সালে বাকি বাজার কেল্লা যা ছিল অস্ট্রিয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সেটা মীর জাফরের নেতৃত্বে সুজা উদ্দোহ দখল করেন। আর সেখান থেকেই মীর জাফরের ভাগ্য বদলাতে শুরু করে।সুজাউদ্দিন ২৬ শে আগস্ট ১৭৩৯ সালে মুর্শীদাবাদে যখন মৃত্যু বরন করেন তখন আর আকাল কুস্মাণ্ড, আমড়া কাঠের ঢেকি, অলস পুত্র সরফরাজ খান বাংলার সিংহাসনে বসেন। রাজ কর্ম ছাড়া সব ই উনি ঠিক মত করতেন। আর উনার হয়ে রাজকর্ম সামলাতেন মোহাম্মদ আলী। আর এই লোক এমন ধুর্ত ছিল যে সরফরাজের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সরফরাজ কে হটানোর পরিকল্পনা করেন তিনি। সাথে ছিল জগত শেঠ,ভাই হাজী আহমেদ।
জঙ্গীপুরের গিরিয়ার যুদ্ধ
১৭৪০ সালের ৯ এপ্রিল মুর্শীদাবাদ থেকে ১০ কিমি দূরে জঙ্গি পুরে গিরিয়ার যুদ্ধ হয়। আপনারা ব্যাটেল অফ গিরিয়া লিখলে এই যুদ্ধ সমন্ধে জানতে পারবেন। এই যুদ্ধে মোহাম্মদ আলী জয় লাভ করে।নাম ধারন করেন নবাব আলীবর্দী খা।সরফরাজ খা যুদ্ধে গুলি বিদ্ধ হয়ে মারা যান। আর সেজো ছেলে মির্জা আমানী আজকের মুর্শীদাবাদ রেলের নেকট খালী প্রাসাদে উনাকে দাফন করেন।( এই গ্রুপে কোন মুর্শীদাবাদ এর খ্রীস্টান থাকলে নক দিয়েন প্লিজ)। আপনারা যারা মীর জাফর কে বেইমান বলেন, তারা কি সিরাজের নানা আলীবর্দী খান কে বেইমান বলতে পারবেন? ৮৪ লক্ষ টাকা দিল্লী পাঠিয়ে বসলেন বাংলার সিংহাসনে।
আলীবর্দী খান কে জিতিয়েছিল কে জানেন? মীর জাফর।১০০ টাকা বেতনের সৈনিকে তার বীরত্ব সরুপ
৫০০ টাকা করে দিলেন আর সাথে নিজের সৎ বোন শাহ খানমের সাথে বিয়ে দেন। উনি মীর জাফরের প্রথম স্ত্রী ছিলেন। মীর জাফর মোট চারটা বিয়ে করেন।
আলীবর্দী খানের মেজ মেয়ে মুনিরা বেগমের সাথে বিয়ে হয় সৈয়দ আহমেদ খান নামের এক জনের।১৭৪১ সালে মোঘলদের গভর্নর মির্জা বাকীর কাছে মরতে বসেছিলেন তিনি। সেখান থেকে আলীবর্দি খানের মেয়ের জামাই কে বাচান মীর জাফর। এতে আলী বর্দী খা অনেক বেশী খুশি হন মির জাফরের উপর। শুধু তাই নয় ১৭৪২ সালে বাংলায় শুরু হয় বর্গী আক্রমণ। যার নেতৃত্বে ছিল রঘজি ভোসলে। আমাদের গ্রাম বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, খোকা ঘুমালো,পাড়া জুরালো বর্গী এলো দেশে।এই বর্গীই হলো রঘুজি ভোসলের দল। আর এই চরন গুলা যিনি লিখেন তার নাম ছিল গঙ্গা রাম ভট্টাচার্য। ১৭৫১ সালে এই লাইন গুলো লেখেন তিনি।
বর্গির যুদ্ধ
এই বর্গীদের চৌথ (যা এক ধরনের ট্যাক্স) দিতে অস্বীকার করায় আলীবর্দি খানের সাথে বর্গীর যুদ্ধ হয়৷ আর এই যুদ্ধে মীর জাফরের অনন্য কৃতিত্বের কারনে ১৭৪৫ সালে রঘুজী নভেম্বর মাসে কোন রকমে জান নিয়ে পালালেন। আর এই কৃতিত্ব সরুপ জাফর আলী খান বাহাদুরের নামের আগে ঝুটল বীরল সম্মাননা।” মীর”।আর উনি হয়ে গেলেন নবাব আলী বর্দী খানের ডান হাত
মীর জাফর আর সিরাজ উদ্দোহ কে নি লেখতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম, মানুষ প্রচলিত কাহিনী ই বিশ্বাস করে।রেশন্যাল চিন্তা ভাবনা করা টা একটু কঠিন আমাদের জন্য। তাই কাহিনী টা আর বড় না করে শেষ করে দেবার স্বীধান্ত নিলাম। তাই আজকের লেখাটা বড় হতে পারে।
১৭৫২ সালে নবাব আলীবর্দি খান মে মাসের দিকে সিরাজ উদ্দোহলাকে উত্তরাধিকার মনোনীত করেন। ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যু হয় আর সেই বছর ই ১৫ এপ্রিল বাংলার সিংহাসনে বসেন নবাব সিরাজ উদ্দোহ। নবাব আলী বর্দী খান মৃত্যুর আগে দুই জন কে কোরান শরীফ ছুইয়ে শপথ করান। ১.সিরাজ উদ্দোহ২.মীর জাফর। সিরাজ উদ্দোহ শপথ করেন তিনি কখনো আর মদ্যপান করবেন আর মীর জাফর শপথ নেন তিনি সিরাজ কে যাবতীয় বিপদে আপদে সাহায্য করবেন। মীর জাফর কিন্ত সেই কথা রেখেছিলেন। রাজভল্লব চেয়েছিলেন ক্ষমতায় বসুক সিরাজের ছোট ভাই নওয়াজিশ মুহাম্মদ খানের নাবালক পুত্র আক্রাম উদ্দোহ কে।কিন্ত সেই আশায় বালি ঢেলে দিলেন মীর জাফর। উনি সিরাজ এর পাশে এসে দাড়ালেন। আলী বর্দী খানের কথা পালন করলেন মীর জাফর।
আলীবর্দি খান
আমি প্রথম পর্বে বলেছিলাম মোহন লালের কথা। এই মোহন লাল কে নবাব সবচেয়ে বেশী ক্ষমতাশালী করে তুলেছিলেন। কারন টা প্রথম পর্ব যারা পড়েছেন তারা বুঝতে পারবেন। এই মোহন লাল কে অন্যতম প্রধান নবাবে পরিনিত করতে চেয়েছিলেন সিরাজ। রাজ দরবারে সবাই কে হুকুম দেওয়া হলো, তারা যেন মোহন লাল কে সেলাম প্রদর্শন পূবক রাজ সভায় ঢুকে। কিন্ত সবাই সেটা মেনে নিলেও মীর জাফর সেটা মেনে নেয় নি। কারন সদ্য হজ্জ করা মীর জাফর কোন অমুসলিমকে মাথা নিচু করে সম্মান করতে চাইলেন না।এতে ক্ষুব্ধ সিরাজ মীর জাফরকে ধরে আনার নির্দেশ দেন। বাড়িতে না থাকায় সেই যাত্রায় বেচে যায় মীর জাফর।
১৭৫৬ সালের ১৯ শে জুন। সিরাজ কলকাতা দখল করলেন। কোলকাতার গভর্নর রজার ড্রেক ভয়ে পালিয়ে গেলেন। এবং নবাব সিরাজের নির্দেশে ঘটানো হয় অন্ধকুপ হত্যা কান্ড।যারা জানেন তারা তো জানেন ই আর যারা জানেন না তাদের জন্য বলি,১৭৫৬ সালের ২০ শে জুন ১৪৬ জন ইংরেজ কে ফোর্ড উইলিয়াম দুর্গে ২৪ ফুট বাই ১৮ ফুট একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। সেই দিন ১২৩ জন মারা যায়। আর এই ঘটনা বর্ননা করেছেন সেনাপতি জন যেফানিয়াহ হলওয়েল নামের একজন। উনি বেচে যাওয়াদের মাঝে একজন ছিলেন।
অন্ধকূপ গনহত্যা
নবাব যখন ইংরেজদের ফোর্ট উইলিয়াম দখল করার সময় কয়েক জন ইংরেজ মহিলা ধরা পরে যান। মীর জাফর তাদের কোন রকম ক্ষতি না করে রাতের আধারে গভর্নর ড্রেকের জাহাজে পাঠিয়ে দেন তার একান্ত বিশ্বস্ত মীর ওমর কে দিয়ে। আর এই মীর ওমরের এই বদ্যনতা ইংরেজ রা ভুলে নি। আর এই মীর ওমরের মাধ্যমে ইংরেজদের সাথে সেতু বন্ধন গড়ে উঠে মীর জাফরের।আর এই দিকে সিরাজ কলকাতার নাম পাল্টে রাখলেন আলী নগর। আর গভর্নর করা হয় মানিক চাঁদ কে।
২৪ শে জুন ১৭৫৬। আলীনগর ছাড়লেন সিরাজ। ডিসেম্বর এ শেষের দিকে লর্ড ক্লাইভ আর ওয়াটসনের মারাত্নক আক্রমনের স্বীকার হয় কলকাতায় থাকা মানিক চাদকে। একে একে সব দখল করে নেন লর্ড ক্লাইভ। ফোর্ড উইলিয়াম দুর্গের ভিতর একটা মসজিদ বানানো হয়েছিল সেটাও ভেংগে ফেলা হয়। আর ঠিক করা হয় ৪ ই জানুয়ারি হুগলি আক্রমণ করা হবে। ১০ থেকে ১৯ জানুয়ারী নরকীয় তান্ডব চালানো হয় হুগলি তে। আর এ খবর যখন নবাবের কানে পৌছে তখন তিনি পুনরায় কলকাতা অভিযান শুরু করলেন। ৪০ হাজার অশ্বরোহী,৬০ হাজার পদাতিক সৈন্য, ৫০টা হাতী৩০ টা কামান নিয়ে সিরাজ রওনা হলেন কোলকাতার দিকে। আর ৭১১ জন সৈন্য,১০০ গোলন্দাজ,১৩০০ সেপাই, ১৪ টা কামান ছিল ইংরেজদের। এই ভয়েই ইংরেজ রা নবাবের সাথে সন্ধি করতে চাইলেন। ইংরেজদের পক্ষ থেকে এই সন্ধি নিয়ে আসেন ওয়ালশ আর লিউক স্ক্রাফটন নামে দুইজন।
৯ ই ফেব্রুয়ারী সাক্ষরিত হয় বিখ্যাত আলীনগর সন্ধি। সন্ধির ফলে ইংরেজ রা কিছু সুবিধা পেল। ফোর্ড উইলিয়াম দুর্গ গড়ে দিতে হল নবাব কে।আর ইংরেজ রা পেলে টাকা ছাপানোর পারমিশন। ১২ ই মার্চ ইংরেজ রা আক্রমন করে ফরাসীদের চন্দন নগরে থাকা দুর্গে।যা ইতিহাসে চন্দন নগরের যুদ্ধ বলে পরিচিত। নবাব ফরাসীদের সাহায্য করতে চাইলেন। দায়িত্ব দেওয়া হলো,মানিক চাঁদ,মোহনলাল কে।কিন্ত ভুল ইনফরমেশন এর কারনে নবাব ফরাসীদের সাহায্য করতে পারে নি। আর মোহনলাল কে বিষ কে বা কারা খাইয়েছিল সেটা জানা যায় নি তাই নবাব তার সাহায্য নিতে পারেন নি।
আলী নগরের সন্ধী
এবার সর্বশেষ টপিকে আসি। মীর জাফর আর পলাশী যুদ্ধ।
মীর জাফর, ইংরেজদের মোটেই পছন্দের তালিকায় ছিলেন না।ইংরেজদের পছন্দের তালিকায় ছিল ইয়ার লতিফ নামে একজন। কিন্ত ২৪ শে এপ্রিল মীর জাফর ওয়াটসনের সাথে যোগাযোগ করেন। আর ওয়াটসন লর্ড ক্লাইভ কে বুঝালেন ইয়ার লতিফ থেকে মীর জাফর ই উপযুক্ত ব্যক্তি। কিন্ত মীর জাফর তখন ও নবাবের বিরুদ্ধে যেতে গড়িমসি করতে লাগলেন ।
লর্ড ক্লাইভ আর মীর জাফরের গোপন আলোচনা
সিরাজের সাথে দফারফা করতে লর্ড ক্লাইভ কলকাতা থেকে কাটয়া এসে পৌছালেন। মীর জাফর তখন ও সবুজ সংকেত দেন নি।বাধ্য হয়ে ক্লাইভ চিঠি লেখলেন,মীর জাফর কে”এমন এক গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে আপনি কেন কোন কথা বলছেন না।এতে আমি উদবিগ্ন হচ্ছি।আপনি ঠিক কি করব সেই বিষয়ে আপনার কাছ থেকে কোন ইংগিত পাচ্ছি না।”
২১ শে জুন ১৭৫৭।ক্লাইভ এক মিটিং এ বসলেন। তিনি তার সভাসদের কাছে জানতে চাইলেন, যেহেতু মীর জাফর কোন উত্তর দেয় নি, সে ক্ষেত্রে কি করার আছে। সে ক্ষেত্রে কি গাজীউদ্দিন খা কিংবা মারাঠাদের কি আমন্ত্রন করা হবে? ২২ শে জুন ১৭৫৭ সালে আবার চিঠি লিখলেন “আপনি কিছুই করছেন না,আপনার জন্য আমরা সর্বশ বিপন্ন করতে চলেছি। আপনাকে আশ্বস্ত করছি আমাদের সাথে মিলিত হলে আপনিই হবেন পরবর্তী নবাব। আর এত টুকু যদি না করেন তাহলে ইশ্বর আপনার সহায় হোক,পরবর্তীতে আমাকে দোষারোপ করতে পারবেন না”।
লর্ড ক্লাইভ
অবশেষে এলো সেই দিন। ২৩ শে জুন ১৭৫৭, বৃহস্পতিবার। ১০.১৫ মিনিটে শুরু হয় পলাশীর যুব্ধ।ঘন্টা চারেক পর তিন টার দিকে বুঝা যেতে থাকে নবাব জিততে চলেছে।নবাবের দুই তৃতীয়াংশ সৈন্য দাঁড়িয়ে থাকার পর ও নবাব জিততে চলেছিলেন। মীর মদন আর মোহন লালের নির্দেশে। আর বাকী অংশের দ্বায়িত্ব ছিল মীর জাফর আর রায়দুর্লভ। নবাব সিরাজ তার মাথার পাগড়ি মীর জাফরের পায়ের কাছে রেখে অনুনয় করলেন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবার জন্য। মীর জাফর বললেন, আজ আর নয়। আজ যুদ্ধ শেষ।কাল দেখা যাবে।আর এই খবর পৌছে গেল লর্ড ক্লাইভের শিবিরে।
মীর জাফর ছাউনি তে ফেরার মুখী হতে আক্রমণ করলেন লর্ড ক্লাইভ। বিকেল পাচটার মধ্যে ইংরেজদের জয় নিশ্চিত হয়ে গেল। স্বন্ধ্যা ৬ টায় মীর জাফর বার্তা পেল “
অভিনন্দন
আমাদের পরিকল্পনা সফল হয়েছে”
– আপনাদের পরিকল্পনা।
লর্ড ক্লাইভ বুঝলেন যে,মীর জাফর এখনো তাদের সাথে নেই। লর্ড ক্লাইভ চিঠি লিখে পাঠালেন, “এ জয় আপনার, আমাদের নয়”
অভিনন্দন
১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন পলাশীর যুদ্ধ
আর এইভাবে মীরজাফর বাংলায় সিংহাসনে বসলেন।
শেষ কথাঃআমি জানি না মীর জাফর বেইমান ছিল কি ছিল না।আমি শুধু কাহিনী টা তুলে ধরলাম। আরো অনেক ঘটনা এড়িয়ে গেছি আমি। আপনার কি মনে হয়, কমেন্ট জানান।
ক্ষমতা বুঝে নিচ্ছেন মীর জাফর