কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে এই মুহূর্তে দেশে যে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে ,তা নিয়ে সাধারন মানুষের মত আমি চিন্তিত ।বাংলাদেশে একটা নীরব  শ্রেনীর মানুষ আছে ,যারা কোন কিছুতেই মাথা ঘামায় না ।এই শ্রেনীর লোক জন ,বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধকে আজীবন বিতর্কের উর্ধে স্থান দিয়ে রেখেছে ।এদের কাছে বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধ একটা আবেগের নাম ।এরা আছে দেখেই আওয়ামী লীগ আজো ক্ষমতায় আছে ।আমরা ২০০৬ সালের ঘটনা খুব কাছ থেকে দেখেছি ,২০১৩ তে রাজাকারের ফাসীর জন্য গন জাগরন মঞ্চ আমাদের আবেগের জায়গা ।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ,আমাদের মত নীরব শ্রেনীর লোকজন আপনাকে মন থেকেই ভালোবাসে ।আপনার যে কোন বিপদে আপনার তথাকথির আওয়ামীলীগের চেয়ে আমাদের মত নীরব সমর্থক গন আপনাকে বেশী সাপোর্ট করে ।আপনার পিওন চারশো কোটি টাকার মালিক,একজন ড্রাইভার হাজার কোটি টাকার মালিক ,ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের সাথে জড়িত ,এই ধরনের হাজার হাজার দুর্নীতির খবর আমাদের সামনে আসলেও আমরা শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করি ,আপনি আপনি যেহেতু আছেন ,সেহেতু প্রত্যেক টা দুর্নীতির অবসান আপনি ঘটাবেন ।এখন যারা আওয়ামীলীগ বলতে বলতে মুখ দিয়ে ফেনা তুলে ফেলছে ,বিশ্বাস করেন ,এরা আপনার বিপদে জানালা দিয়ে পালাবে ।আমাদের মত নীরব সমর্থকদের কারনে আপনি প্রতিটা জায়াগায় সমর্থিত হয়ে যাচ্ছেন ।যারা বাংলাদেশ কি ,কি ভাবে সৃষ্টি হয়েছে ,বঙ্গবন্ধু বানান টা ঠিক মত লিখতে পারে না ,তারা আজ আওয়ামী লীগার সাজচ্ছে ।এখনো নীরব সমর্থকেরা নীরবেই আপনাকে সমর্থন করে ।কারন ,আপনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে ।আমাদের এই বিশ্বাস টা আজ বড় নড়বড়ে অবস্থানে গিয়ে ঠেকেছে ,আপনার ই কিছু মন্ত্যবের জন্য ।

কোটা আন্দোলনে উত্তাল সারা দেশ ।

কোটা সংস্কার  আন্দোলন সময় উপযোগী ,এবং বাস্তব সম্মত আন্দোলন ।কোঠা সংস্কার আন্দোলনের কেউ ই মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে নয় ।এরা মনে প্রানে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধারের সম্মান করে ।কিছুদিন আগে বি বি সি বাংলার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের তরুন দের ভাবনা কি ,সে বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখেছিলাম ।স্বাধীনতার ৫০ বছর পর্ ও বাংলাদেশের তরুন সমাজ কতটুকু পাকিস্তান কে ঘৃনা করে ,সেটা সেই প্রতিবেদনে দেখেছি।দয়া করে ,এই তরুন সমাজকে রাজাকার আখ্যায়িত করবেন না। ২০১৩ সালের পাকিস্তানী পন্য  বর্জন করার যে শপথ নিয়েছিলাম ,এখনো সেই শপথ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি,মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ।দয়া করে ,আমাদের বলতে বাধ্য করবেন না ,যে আমরাও রাজাকার ।এই শব্দটাকে আমরা মনে প্রানে ঘৃনা করি ।

কোটা আন্দোলন কোন কালেই বঙ্গবন্ধু অপমানিত হোক তা চাই নি।তার প্রমান এই ছবি।

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ,আপনি যে আওয়ামী লীগ ,যুবলীগ,ছাত্রলীগকে মাঠে নামতে বলছেন ,এরা আসলে কাদের বিরুদ্ধে নামবে, একবারো কি ভেবে দেখেছেন ।আপনার দলের সাধারন সম্পাদক সাহেব ,ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে  প্রস্তুত থাকতে বলছে ,এরা কাদের বিরুদ্ধে লড়বে।আওয়ামী লীগের যে কর্মীটি মাঠে নামলে কি দেখবে?নিজের সন্তানকে দেখবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ।যুবলীগের একজন কর্মী নিজের ভাইকে দেখবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ,ছাত্রলীগের কর্মীটি দেখবে ,নিজের বন্ধু বা সহপাঠিকে ।এরা কি একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতে পারবে ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ,আজকে যারা কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নেমেছে ,তারা এই দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থী ।যারা সরকারি চাকরিতে গিয়ে দেশের সেবা করতে চায় ।আমি মনেপ্রানে বিশ্বাস করি ,এই ছাত্ররা কোন ভাবেই রাস্ট্রের ক্ষতি হোক তা চায় না।আজ গাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে ,সরকারী প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হচ্ছে,খোজ নিয়ে দেখুন ,যারা কোটা সংস্কার চাচ্ছে ,তার কোন ভাবেই এর সাথে জড়িত নয় ।কারন এই মেধাবীরা জানে রাস্ট্রের ক্ষতি মানে নিজের ক্ষতি ।রাস্ট্রের ক্ষতি মানে এই দেশকে আরো পিছিয়ে নেওয়া ।যারা এই সমস্ত কাজ করছে ,তারা দেশের শত্রু ।কোটা আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কারের বাইরে গিয়ে কি কোন রাজনৈতিক দাবী করেছে কি ?এদের দাবী মেনে নিলেই এরা ঘরে ফিরে যাবে ,ক্যাম্পাসে ফিরে যাবে ,বই খাতা নিয়ে পড়তে বসবে । এদের দাবী কি অযুক্তিক ,মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ।

কোটা বাতিল নয় ,বরং সংস্কার চায় ,মেধাবী ছাত্র সমাজ ।

কোটা অবশ্যই দরকার আছে ।সমাজের পিছিয়ে থাকা মানুষ গুলোকে সুযোগ করে দিতে কোটার বিকল্প নেই ।একজন আদিবাসী তরুন ,ঢাকার একজন তরুন থেকে কম সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে ।তাকে কোটার মাধ্যমে চাকরি দিলে ,কেউ তাতে অমত করবে না ।বাংলাদেশে ,মেয়েদের বাল্যবিবাহ এখন মহামারী আকার ধারন করছে ।বাল্য বিবাহের পক্ষে যখন প্রেস ক্লাবের সামনে মানব বন্ধন  হয় তখন বুঝে নিতে হবে ,আমাদের নারীদের পিছিয়ে পরাটা কতটা স্বাভাবিক ।এই পিছিয়ে পরা নারীদের জন্য ও কোটার দরকার আছে ।ঠিক তেমনি ভাবে ,যে ছেলেটা হাত না থাকার কারনে পা দিয়ে লিখে পরীক্ষায় পাশ করছে ,যে মেয়েটা অন্ধ থাকার কারনে আরেক জনের সাহায্য নিয়ে পরিক্ষায় কৃতকার্য হচ্ছে,তাকে অবশ্যই কোটার আওতায় এনে চাকরিতে প্রবেশ করানো রাস্ট্রের দায়িত্বের ভিতরে পরে ।আমরা কখনো ,মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে নই ।সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ট বাংগালী ,আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ।তাদেরকে কোন ভাবেই আমরা অসম্মানিত হতে দিতে পারি না ।কিন্ত যারা মুক্তিযুদ্ধ করে নাই ,মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্ম গ্রহন করে ,মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরী নিয়ে চাকরি করছে ,তাদের ব্যাপারে আমারা রাস্ট্রের কাছে আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি কি প্রত্যাশা করতে পারি না ।এরা আমাদের আবেগ নিয়ে খেলবে ,আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব সেটা কি হতে দেওয়া যায় ? অন্য যে কোন সরকারের চেয়ে আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক বেশী সম্মানিত করছে ।আরো অনেক বেশি সম্মান প্রাপ্য আমাদের এই সূর্য সন্তানেরা ।এদের যে ভাতা দেওয়া হয় ,তা যদি আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে ও দেওয়া হয় ,আমাদের কারোর ই তাতে আপত্তি থাকবে না ।মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদেকেও রাস্ট্র সম্মানিত করুক ,তাতে আমাদের আপত্তি নেই ।স্বাধীনতার ৫০ বছর এসে তৃতীয় কিংবা চতুর্থ প্রজন্মকে এত বেশি কোটা সুবিধা দেওয়া কতটুকু যোক্তিক ,তা বোধ্যগম্য হচ্ছে না ।বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমীনের ছেলে যখন ফেরী করে বেড়ায় ,এটা রাস্ট্রের জন্য কতটুকু লজ্জায় ,সেটা রাস্ট্র না বুঝলেও আমাদের মত সাধারন জনগন তা বুঝে ।স্বাধীনতার ৫০ বছর পর কতজন ই বা মুক্তিযোদ্ধা বেচে আছে ।জীবনের শেষ মূহুর্ত গুলো তে কোন মুক্তিযোদ্ধা যেন ,বির্তকিত না হয় ,এটা বাংলাদেশে প্রতিটা দেশ প্রেমিক নাগরিকের প্রত্যাশা ।

মেয়েরাও এগিয়ে ছিল এই আন্দোলনে ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ,পদ্মা সেতু দিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে যাবে ,মেট্ররেলে করে হাজার হাজার শিক্ষাথী তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবে ,রেলে করে আমাদের শিক্ষার্থীরা কক্স বাজারে আসবে ,আপনার এই অবদান তারা স্মরন করবে ।আমরা পদ্মাসেতুতে আন্দোলনের জন্য শিক্ষাথীদের লাশ দেখতে চাই না।মেট্রোরেলে আগুন জ্বলুক সেটাও দেখতে চাই না ।রেল লাইনে কোটার জন্য শিক্ষাথীদের আন্দোলন ও দেখতে চাই না ।আমরা একটা স্মার্ট সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *