খ্রীষ্টান পরিবারে জন্ম গ্রহন করা আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার। কেন বলছি,একটু ভেংগে না বললে বুঝা যাবে না। প্রাচীন বঙ্গ বা এই অঞ্চলের ইতিহাস অনেক পুরানো।আমি প্রাচীন যে পথ গুলো আছে তার মাঝে,আমি বিহার, মুর্শিদাবাদ,বরিশাল,বিক্রম পুর,নোয়াখালী এই অঞ্চল গুলোর কথা বলছি।যদিও, তখন এই নাম গুলো ছিল না। এই নাম গুলো বর্তমান সময়ের নাম।আপনি যদি,সম্রাট অশোক,চন্দ্রগুপ্ত মৌয্য কিংবা ইশ্বর গুপ্তের কিংবা তারও পরে শশাংকের, ধর্মপাল, গোপাল এদের শাসন দেখেন তাহলে এখানে কিন্ত সবাই সনাতনী ধর্মের বিশ্বাসে বিশ্বাস ছিল। তবে এই ও বলে রাখা ভালো, হিন্দু ধর্মের কাস্টের কারনে অনেক সনাতনীরা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেছিল।সম্রাট অশোকের নাম না বললেই নয়। গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিন উনার জন্মদিন ছিল।এই শাসক , নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য তার ১০০ উপরে ভাইদের খুন করেছিল।কলিঙ্গার যুদ্ধের মত যুদ্ধ করেছিল খ্রীষ্টপূর্ব ২৬০ অথবা ২৬১ অব্দে।সেই আমলেই এক লাখের উপরে মানুষ মারা গিয়েছিল,যুদ্ধের এতটাই প্রভাব রাজার উপর পরেছিল তিনি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করে,এমন কি নিজের এক ছেলে আর এক মেয়েকে বর্তমান শ্রীলঙ্কায় পাঠায়।যাই হোক,এই সম্রাটকে নিয়ে কোন একদিন লেখার ইচ্ছা আছে আমার।। আমরা ১২০৪ সাল পর্যন্ত ধরে নিতে পারি আমাদের এই বাংলায় হিন্দু ধর্মের ও বৌদ্ধ ধর্মের আধিপত্য ছিল।এর পর কে আসল।খিলজি সাহেব। ১২০৫ সালে রাজা লক্ষন সেন কে পরাজিত করে এই বাংলা দখল করে নেয়।। সেই থেকে বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা হয়। আমাদের গর্বের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় রক্তে রঞ্জিত হয়।নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার ছাত্র, শিক্ষক কে গলাকেটে হত্যা করল।পৃথিবীর অন্যতম বৃহতম লাইব্রেরী ছিল নালন্দাতে।সেই লাইব্রেরী পুরিয়ে দেয় বখতিয়ার খলজির সেনারা। কথিত আছে ৬ মাস ধরে পুড়েছিল সেই লাইব্রেরী। প্রাচীন বাংলায় যে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রের বিশেষ প্রচলন ছিল,সেই বইগুলোকে ও পুড়িয়ে ফেলা হয়। যারা এই আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রের পাঠ করত কিংবা চর্চা করত তারা বেছে বেছে শিরচ্ছেদ করা হয়।।ভয়ে, সেই নালন্দা ত্যাগ করতে হয়েছিল ছাত্র শিক্ষকদের।
বখতিয়ার খলজি দ্বারা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধবংশ চিত্র ।
বখতিয়ার খলজির হাত ধরেই বাংলায় ইসলামের আগমন ঘটে।এর পর আলাউদ্দিন খিলজি নামের এক শাসকের আগমন ঘটে।উনি কিছুটা উদার মনের মানুষ ছিলেন।বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা যখন বাংলায় আসেন, তখন আলাউদ্দিন খিলজি তার রাজদরবারে ইবনে বতুতাকে আমন্ত্রণ করেন।ইবনে বতুতা লিখেছিলেন, এক দল বাম্মন এক রুপবতী নারীকে নিয়ে এসেছিলেন, যারা তার সতী দাহ করতে চায়। রাজা কিন্ত তাতে অমত করেন নি।ইবনে বতুতা সেই সতীদাহ নিজের চোখেই দেখেছিলেন।যাই হোক,বুঝা যাচ্ছে কিছু কিছু মুসলিম শাসক অন্য ধর্মের উপর জোরজবরদস্তি করেনি। তবে এও কথা সত্য,আরবরা যখন এখানে ব্যবস্যা করতে আসত,তখন তারা নেমেই ব্যবস্যার নামে দাসী কিনত। এরপর এক সময় এরা গর্ভবতী হয়ে যেতো।পাচ ছয় মাস পর এরা চলে যেত ঠিকই। কিন্ত এদের বীর্যপাতের সন্তানরা থেকে যেতো।।এই সমস্ত তথ্য ডক্টর হুমায়ন আজাদের বই পড়লেই পেয়ে যাবেন।আমি শুধু জিস্ট কথা গুলো লিখে যাচ্ছি।
ভারতীয় উপমহাদেশে, মুঘল সম্রাজ্রের সবচেয়ে উদার পন্থী সম্রাট ছিলেন সম্রাট আকবর।অনেকে জানে না যে,আকবর ইসলাম ধর্মের বদলে অন্য এক ধর্মের প্রচলন করেছিলেন।যার নাম ছিল দীন ই ইলাহী।১৩ জনের মত সেই ধর্ম গ্রহন ও করেছিল।এটি ছিল মূলত হিন্দু আর ইসলামের সংমিশ্রনে এক ধর্ম। দুই ধর্মের সার্বজনীন বিষয় গুলো মিল রেখে এই ধর্ম বানানো হয়েছিল।কিন্ত প্রবল বিতর্কের মুখে সম্রাট কাউকে সেই ধর্ম পালনে বাধ্য করা হয় নি। অনেকের ধারনা সম্রাট আকবরের এক স্ত্রী খ্রীষ্টান ছিলেন। যদিও এই সমন্ধে কোন নির্ভর যোগ্য সুত্র পাওয়া যায় না।সম্রাট এক ধরনের কর আছে,যাকে বলা হয় জিজিয়া কর। জিজিয়া কর হলো সেই কর, যে কর, মুসলিম ব্যতিত সবাইকে প্রদান করতে হয়।সম্রাট আকবর সেই কর রহিত করে দেন।।
মুঘলদের ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বর শাসক ছিলেন আওরঙ্গজেব। নিষ্ঠুর শাসক ছিলেন।হাজার হাজার হিন্দুকে হত্যার অভিযোগ আছে উনার বিরুদ্ধে।অনেক হিন্দু মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ বানানোর অনেক কথা শোনা যায় এর বিরুদ্ধ। অনেক ঐতিহাসিক স্থানের নাম উনি পরিবর্তন করেছিলেন। প্রয়াগরাজ নামকে এলাহাবাদ, অযোধ্যতাকে ফৈজাবাদ,লক্ষীনগর কে মুজাফরাবাদ আরো অনেক।তবে ভারতের উত্তর প্রদেশের কট্রর হিন্দুত্ববাদী সরকার যোগী আদিত্যনাথ সেই নাম গুলোকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসছেন।
এতক্ষন কেন এই কাহিনী গুলা বলার কারন হচ্ছে,ইংরেজরা কিন্ত খ্রীষ্টান ছিল।পর্তুগিজরা খ্রীষ্টান ছিল,দিনেমার,ওলন্দাজ সবাই খ্রীষ্টান ছিল।ইংরেজরা জোর করে কাউকে খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত করেছে এমন তথ্য আমি পাইনি। আমাদের ভাওয়াল অঞ্চলে খ্রীষ্ট ধর্মের বীজ বপন হয়েছে একজন হিন্দু রাজকুমারের হাত ধরে।। দোম আন্তনীও ডি রোজারিও। আপনি যদি প্রটেস্টাইন মন্ডলির দিকে তাকান সেখানোও দেখবেন উইলিয়াম কেরী নামের একজন মহান মানুষের কথা। উনি বঙ্গ দেশে খ্রীষ্ট বানী প্রচার জন্য প্রথমে বাংলা শিখেছেন,তারপর বাইবেল, সাধারন মানুষ যেন বুঝতে পারে তার জন্য বাংলায় অনুবাদ করেছেন। জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার ঘটনা আমি এখনো পাই নাই।অনেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কথা বলে, ওনাকে নাকি টাকা দিয়ে খ্রীষ্টান বানানো হয়েছিল।আমি যখন ওনার সমন্ধে পড়তে গেলাম,তখন বুঝলাম কি ধরনের গাজাখুড়ি গল্প আমাদের শোনানো হয়েছে।খ্রীষ্টান ধর্ম যাজক গন যেখানেই গেছে সেখানে তারা নিজেদের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেবার চেস্টা করেনি। চেস্টা করেছে,সেই সংস্কৃতিতে খ্রীষ্টকে উপস্থাপন করা।উদাহরান হিসেবে বলতে পারি,আমাদের খ্রীষ্টান বিয়েতে সিদুর দেবার কথা। এটা কিন্ত খ্রীষ্টান রীতিনীতিতে নেই।এটা এসেছে সম্পূর্ণ হিন্দু রীতি থেকে। গায়ে হলুদ ও পাশ্চাত্যে আছে কিনা আমি জানি না,যতটুকু জানি এটাও হিন্দু সংস্কৃতির একটা অংশ। এত আধুনিক যুগেও সাউন্ড সিস্টেম ডিজে গানের যুগেও, ঢাক ঢোল ছাড়া কোন খ্রীষ্টান বিয়ে কল্পনাও করা যায় না।আমরা এই ঢাক ঢোল কে ভুলে যাই নি। এমন হাজারো নিয়ম আছে,যা আমরা পালন করি,যা আমরা জানি, এটা খ্রীষ্টানিটির সাথে কোন সম্পর্ক নেই।আমরা খ্রীষ্টান হয়েছি ঠিকই কিন্ত আমরা আমাদের বাপ দাদার সংস্কৃতিকে খ্রীষ্টের মাধ্যমে বাচিয়ে রেখেছি।
খ্রীষ্টকে সাক্ষ্যি রেখে ,খ্রীষ্টান বিয়ে।
পহেলা বৈশাখ,বাংলাদেশের কোন জায়গায় এমন ভাবে পালিত হয় বা যেটা খ্রীষ্টান সমাজে পালিত হচ্ছে।এই বছর আমাদের তুমিলিয়া মিশনে আমার জানা মতে ৫-৬ টা গ্রামে খুব ধুম ধামের সাথে পহেলা বৈশাখ পালিত হয়েছে।এমন কি আমেরিকায়, ইউরোপে, অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশের খ্রীষ্টানরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে পালন করেছে।ইলিশ ছিল এর মধ্যে অন্যতম আর্কষন। আমরা মাছের মধ্যে ধর্ম খুজি নাই।আমরা মুখোশের মাঝে ধর্ম খুজি নাই,আমরা জীব জন্তুর মাঝে ধর্ম খুজি নাই। আমরা এটাকে একটা সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছি।আমরা আমাদের শিকর কে ভুলি নাই।৬৩৮ সালে রাজা শশাংক মারা যাবার আগে যেভাবে বছরের একটা দিনকে প্রথম দিন ভেবে পালন শুরু করেছিলেন,কালের বিবর্তনে সেটা অনেক পরিবর্তন হয়েছে।শাকাব্দ থেকে বঙ্গাব্দ হইছে,হিন্দু থেকে খ্রীষ্টান হয়েছি ,কিন্ত আমাদের সেই ঐতিহ্য এখনো রয়ে গেছে।দুই হাজার বছর আগের শাড়ি আজোও আমরা পরিধান করছি।ওয়েস্টার্ন খ্রীষ্টানদের সেই সংস্কৃতি তে আমরা পা দেই নি। সেই ক্ষেত্রে আমাদের চার্চ বাধা দেয় নি কখনো।।চার্চ বাংলা সংস্কৃতি কে সামনে নিয়েই এগিয়ে চলছে।।
সত্যি কথা বলতে কি,খ্রীষ্টানরা কখনো নিজেদের জাহির করায় ব্যস্ত ছিল না।আমরা কোন দিন বলি না যে,খ্রীষ্টান বিজ্ঞানী নিউটন কিংবা খ্রীষ্টান বিজ্ঞানী এডিসন। আমরা কখনো বলি না খ্রীষ্টান ফুটবলার মেসী, বা খ্রীষ্টান ফুটবলার রোনালদো।কিংবা কোন খ্রীষ্টান দেশ আমেরিকা বা খ্রীষ্টান দেশ অস্ট্রেলিয়া।এগুলা আমাদের বলার দরকার পরে না।এই গুলো বললে নিজেরাই বিব্রত হই।এইভাবে আমরা নিজেদের জাহির করি না।খ্রীষ্টানরা যে দেশে বানী প্রচারে গেছে সেই দেশের সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টকে প্রচার করেছে।যেমন টা হয়েছে এই বাংলায়।।