আজকের লেখাটার উদ্দেশ্য হচ্ছে,বাংলাদেশের চট্রগ্রামের দিয়াং এ ঘটে যাওয়া খ্রীষ্টান পর্তুগীজ গনহত্যা নিয়ে।এ নিয়ে খুব বেশী তথ্য পাওয়া যায় না।যতটুকু পেরেছি,বিভিন্ন বই থেকে সেটাই বলার চেস্টা করছি।বাংলাদেশের পর্তুগীজদের আগমন সর্বপ্রথম ইউরোপীয়দের মাঝে।পর্তুগীজরা বসতি স্থাপন করে সন্দিপ দ্বীপেও। তবে অনেক গুলো ইতিহাস থেকে জানা যায় মনপুরা নামক এক দ্বীপে নোঙ্গর ফেলে হয় প্রথমে।সেটার যেহেতু নির্ভর যোগ্য দলিল নেই,তাই সেটাকে গ্রহন যোগ্য না বলেই ধরে নিচ্ছি।মেঘনা নদীর অববাহিকায় এই দ্বীপ ছিল উর্বরাভূমি।ফসল উৎপাদনে, উৎকৃষ্ট ভূমি।যেহেতু দ্বীপ এবং উর্বর ভূমি সেহেতু এই অঞ্চলের প্রতি লোভ ছিল, আরাকান রাজা,মোঘল এবং পর্তুগীজদের ও। এই দ্বীপটি ছিল লবন উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। পর্তুগীজরা প্রতি বছর ২০০ জাহাজ ভর্তি করে লবন নিয়ে যেত ব্যবসার জন্য।। ব্যবসায় জন্য এই অঞ্চল ছিল বিখ্যাত।
চট্রগ্রামে প্রথম নোঙ্গর করা পর্তুগীজ খ্রীষ্টানের নাম যদি বলতে হয়,যে নামটা আসে আর নাম ক্যাপ্টেন জোয়াও সিলভেইরা, এবং আফোনসো ডি মেলো।। ১৫৩৭ সালে মাহামুদ শাহ তাদের চট্রগ্রামে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেন.।পর্তুগীজরা মোঘল সম্রাটদের অনুগত ছিল।এই অঞ্চল মোঘল সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত থাকলে, এখানে মূল শাসক ছিল আরাকান রাজাদের। মূঘলরা,তাই পর্তুগীজদের মাধ্যমে চট্রগ্রাম আরাকানদের বিতারিত করে ১৫৯০ সালে। আরাকানরা যখন বুঝতে পারে,য পর্তুগীজদের সাথে পারা যাবে না, তারা তখন তাদের সাথে এক চুক্তি করে।সেই চুক্তি হয় আরাকান রাজা আর আন্তিনীও ডি সুজা নামের এই পর্তুগীজ নাবিকের সাথে।যার ফলে আরাকান রাজা পর্তুগীজদের চট্রগ্রামে দুর্গ করার অনুমতি দেয়, এবং পর্তুগীজরা সন্দীপ কে তাদের অধীনে আনেন ১৬০২ সালের দিকে।১৬০২ সালে কারভালভো এবং ম্যানুয়েল দা মাত্তোস। তারা রাজা কেদার নাথ কে হটিয়ে সন্দীপ দখল করেন। ১৬০২ সালে যখন কারভালভো সন্দীপ আক্রমন করেন তখন তিনি সাহায্য চান ম্যানুয়েল দা মাত্তোস এর কাছে।তিনি চট্রগ্রাম থেকে ৪০০ জন পর্তুগীজ কে পাঠান, যার ফলে সহজেই সন্দীপ দখল করে নেন কারভালভো।।।।
সন্দীপের শাসন কর্তা ছিল কেদার নাথ।মুঘলদের সাথে, তার দন্ধ লেগে থাকত। আর এই কারভালভো এই কেদার নাথের অধীনে কাজ করত। ছলে বলে কৌশলে, কেদার নাথের কাজ থেকে সন্দীপ দখল করে, পর্তুগালের রাজার নিকট চিঠি লেখেন তারা দুই জন। রাজা এতে খুশি হয়ে দুই জন কে অর্ডার অফ ক্রাইস্ট সম্মানে ভূষীত করেন। এই সন্দীপ দখল আরাকান রাজা পছন্দ করেন নি। তিনি ১৬০২ সালে ৮ ই নভেম্বর তুমুল যুদ্ধ হয় দুই পক্ষের মাঝে। জায়গাটা ছিল চট্রগ্রামের দিয়াং এ। যুদ্ধে আরাকান রাজা জয় লাভ করেন।আরাকান রাজা পর্তুগীজদের সন্দীপ থেকে বিতারিত করার চেস্টা করেন। ১৬০২ সালের ১০ ই নভেম্বর আরাকান রাজা মানরাজগিরি আর পর্তুগীজদের মাঝে। সেই যুদ্ধে এতটাই মারাত্নক ছিল যে মেঘনা নদীর পানি রক্তে রঞ্চিত হয়ে গিয়েছিল।এই এই যুদ্ধে পর্তুগীজরা জয় লাভ করে।এতে করে রাজা মানরাজগিরি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেন, এবং তিনি এই আদেশ দেন যে,চট্রগ্রামে যত পর্তুগীজ খ্রীষ্টান আছে সবাই কে হত্যার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। প্রায় ৬০০ জন পর্তুগীজ নারী পুরুষকে সে সময় গলাকেটে হত্যা করা হয়।। নিরীহ মানুষ গুলো সেদিন ক্রোধের স্বীকার হয়েছিল।। ফাদার ফারনান্দেজ নামের এক পর্তুগীজ জেজুইট ফাদার সে সময় দিয়াং এ অবস্থান করছিলেন।ফাদারের কাছে,কিছু নিরীহ বালক বালিকা আশ্রয় নিয়েছিল। তারা ফাদারের কাছে,আরাকানীদের হাত থেকে বাচার জন্য জীবন ভিক্ষা চেয়েছিল।সেই বালক বালিকাদের বাচাতে গিয়ে ফাদার আরাকানী সৈন্যদের কাছে নির্যাতন হন।ফাদারের এক চোখ তুলে ফেলা হয়। কোন প্রকার চিকিৎসা ছাড়া তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। আর ফাদার ১৬০২ সালের ১৪ ই নভেম্বর বিনা চিকিৎসায় মারা যান।।। আর তিনিই হলেন বংলায় প্রথম ধর্ম শহীদ।আর ফাদারের সাথে থাকা সহকারী ফাদার কে প্রহার করতে করতে মৃত প্রায় করে,গলায় লোহার শিকল পড়িয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়।।
আর এইভাবে বাংলায় প্রথম খ্রীষ্টানদের উপর গনহত্যা সংঘটিত হয়।