পৃথিবীর কোন হাসিতে মনে হয় এত রহস্য লুকিয়ে নেই যা আছে মোনালিসার হাসিতে ।কত কত কাহিনি কত অনুমান কত গল্প যে , এই হাঁসি লিয়ে লেখা হয়েছে কেউ বলতে পারবে না ।ড্যান ব্রাউন সাহেব তো ,এই হাসিকে খ্রীষ্ট মন্ডলীর সাথে যোগ সুত্র স্থাপন করেছেন এই মোনালিসার এই রহসময়ী হাসি সাথে ।কেনেথ ক্লার্ক নামের এক চিত্র সমালোচক লিখেছিলেন যে,’’Yet the Mona Lisa is one these works of art which each generation must interpret ‘’যে কোন নারিকে যদি চিত্রের মাধ্যমে ফোটানো যায় তাহলে নারীর ঠোঁট আর চোখকে নিখুত ভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে ।যে কাজটা লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি খুব নিখুত ভাবে করেছেন।।শীতের কুয়াশা সরিয়ে আস্তে আস্তে যেমন করে সূর্যের আলো বিচ্ছরিত হয় ঠিক তেমনি মোনালিসার হাসিটাও অনেক আলোর প্রতিচ্ছবি।পৃথিবিতে কোন চিত্র কর্ম কে নিয়ে এতটা আলোচনা কখনো হয় নি যতটা হয়েছে তা আজ পর্যন্ত কোন চিত্র কর্ম নিয়ে হয়েছে বলে আমার জানা নেই ।

ফ্রান্সিকো দেল গিওকোন্ডো ইটালীর ফ্লোরেন্স শহরের এক বিত্তবান নাগরিক ।দুই বার বিয়ে করেছেন ।দুই বার ই স্ত্রী মারা গেছে উনার ।মোনালিসাও ছিলেন বেনেদি ঘরের মেয়ে ।কিন্ত ফরাসী আক্রমনের পরে ধস নামে অর্থ প্রতিপত্তিতে ।যাকে ভালোবেসেছেন যুদ্ধ তাকেও কেড়ে নিয়েছিল ।মোনালিসার বাবা ,ভাবলেন যে, মেয়ে সুখে থাকবে ।তাই দুই বার বিয়ে করা ফ্রান্সিকোর সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন মোনালিসাকে ।।২৬ বছরের মোনালিসার সাথে ৪২ বছরের ফ্রান্সিকোর বিয়ে হয়ে যায় ।

ইতালীর জুড়ে প্রচুর তখন নাম ডাক ভিঞ্চির ।লাস্ট সাপারের আকার পর আরো বেশী জনপ্রিয় হয়ে পরেছেন দ্যা ভিঞ্চি ।একদিন ফ্রান্সিকো এসে  হাজির হলেন হলেন ভিঞ্চির দরবারে ।আকুল হয়ে বললেন ,যে তিনি তাঁর স্ত্রীর একটি ছবি আকাতে চান ।বিনিময়ে তিনি যে অর্থই দাবি করবেন ,তিনি তা দিতে রাজী ।এক পড়ন্ত বিকেলে মোনালিসা এসে হাজির হন , ভিঞ্চির দরবারে ।এমন রুপ বোধ করি ভিঞ্চি দেখেন নি কোন দিন ।এমন সৌন্দর্য্য ভিঞ্চি খুঁজে চলেছেন বহু কাল ধরে ।সালটা ১৫০২ ।ভিঞ্চি আঁকা শুরু করলেন এক রহস্য ময়ী নারীর ছবি ।কোন কথা না বলেই শুরু হয়ে গেল ভিঞ্চি আর মোনালিসার এক অদ্ভত রসায়ন ।মোনালিসার ছবির পুরাটায় জুড়ে আছে এক রহস্য ।এর মাঝে কেটে যায় তিন বছর।এই তিন বছর ধরে ভিঞ্চি একে চলেছেন মোনালিসাকে ।ভিঞ্চি চান এক মোনালিসা যেন এক উড়ন্ত প্রজাপতির মত যেখানে সেখানে উড়ে বেরাক।তার জন্য তিনি ফ্রেমের কাছাকাছি তৈরী করলেন ফোয়ারা।ভিঞ্চি মোনালিসাকে নিজের মত করে আকতে চেয়েছেন ।মোনালিসা ভিঞ্চির ষ্টুডিও তেঁ একা আসতেন না ,উনার সাথে আসতেন এক জন সন্ন্যাসী ,যার নাম ছিল সিস্টার ক্যামিলা ।

-লিসা তুমি কি কোন কারনে চিন্তিত।

-মোনালিসা নিষ্প্রভ হাঁসি হেসে বললেন ,না ?

-তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে ।আজ না হয় বাদ দেই ?

-না ।অযথা একটা দিন নস্ট করার কোন মানেই হয় না ।আপনি আকতে থাকুন ।

-তোমার কি মনে হয় না ,এই সমস্ত  আলোচনায় আমাদের অনেক কিছুই আড়াল করে ।

-মোনালিসা হয়ত ভিঞ্চির ইঙ্গিতের ভাষা বুঝেও না বুঝার ভান করে ।

বিনা কারনে ফ্রান্সিসকো আজ বেশী চিন্তা করে ।তিন বছর হয়ে গেলো,এখনো  চিত্র কর্ম শেষ হয় নি ।বুকে তোলপার শুরু হয় ফ্রান্সিকোর ।পৃথিবীর কোন পুরুষ মানুষই নিজের স্ত্রীর মুখে অন্য পুরুষের সুনাম সহ্য করতে পারে না ।ফ্রান্সিকোও পারে নি।বুকে তুষের আগুন জ্বলছিল ফ্রান্সিকোর ।মনে মনে ভিঞ্চি আর মোনালিসার রয়াসন কে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না ।ফ্লোরেন্স শহরে মোনালিসার মত রুপ সৌন্দর্য্য আর কার নেই ।এই কথা ভাবতেই আরো বেশী বিচলিত হয়ে পরেন ফ্রান্সিকো ।

কোন এক বিকেল বেলা ।ভিঞ্চি বসে আছেন তাঁর ষ্টুডিও তে।সরকারী কাজে ফ্লোরেন্স ছেড়ে চলে যেতে হবে ভিঞ্চি কে ।এমন সময় মোনালিসার আগমন ।এই প্রথম ,ভিঞ্চি দুর্বল হয়ে পরলেন মোনালিসার ।বুকটা হু হু করে উঠে ভিঞ্চি ।ছেড়ে যেতে হবে ফ্লোরেন্সকে তার থেকে  বড় কথা হল ছেড়ে যেতে মোনালিসাকে ।মোনালিসা বেশির ভাগ সময় নিজেকে আরাল করে রাখে ।কোন ভাবে নিজেকে পড়তে দেয় না নিজেকে ।

-আপনি তাহলে চলে যাচ্ছেন ফ্লোরেন্স ছেড়ে।

-হুম ।

-মোনালিসার দীর্ঘ শ্বাস ভিঞ্চির চোখ এড়ায় নি।হাতের তুলিটা সরিয়ে রাখলেন ।

-আপনি আপনার হাতের কাজ টা তুলে না রেখে শেষ করুন ।

আপনি কি আমার ছবিটা শেষ করতে পারবেন ?

-কেন পারব না ? তিন মাস পর ফিরে এসে শেষ করব ?

-তিন মাস পরে আমি তো নাও থাকতে  পারি ।হয়ত আমার এই লাব্যনতা না ও থাকতে পারে।আপনিই তো বলেছিলেন ,মানুষের মুখ বিশেষ করে রমনীদের চেহারা দ্রুত বদলে যায় ।।বলেই এক রহস্যের হাঁসি হাসলেন মোনালিসা ।যা নিজের ক্যানভাসে একে ফেললেন ভিঞ্চি ।

-আমি শেষ করব ।

-আমি শুনেছি যে আপনি কোন কাজ শেষ করেন না ?আমি আজ উঠি মিষ্টার ভিঞ্চি ।

মোনালিসা চলে গেলেন ।পিছনে রেখে গেলেন এক বাক্রুদ্ধ ভিঞ্চি কে ।

তিন মাস পর ভিঞ্চি ফেরত আসলেন  ঠিকই ।মনে মনে ঠিক করলেন ,এইবার তিনি ঠিকিই মোনালিসাকে আকবেন নিজের মনের মত করে । এক পড়ন্ত বিকেলে ফ্রান্সিকো এসে হাজির হলেন ভিঞ্চির ষ্টুডিও তে। এই লোকটাকে দেখে বিরক্তই হলেন ভিঞ্চি ।মোনালিসাকে দেখার জন্য মন টা ব্যাকুল হয়ে আছে ।

-লিসা আসে নি?

-দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ফ্রান্সিস্কো বললেন, জনাব ভিঞ্চি মোনালিসা মারা গেছেন একমাস হতে চলল।

ভিঞ্চির জগত জুড়ে দেখা দিল এক ভুমিকম্পের ,পুরো পৃথিবী যেন অন্ধকার হয়ে উঠল ভিঞ্চির ফ্রান্সিকোর কোন কথাই আর কানে পৌছালো না ।।

দুর্ভাগ্য যেন পিছু ছাড়ছেনা ভিঞ্চির ।কোন কাজই সম্পূর্ন করতে পারছেন না ।শেষ পর্যন্ত মোনালিসার ছবিটাও শেষ করতে পারলেন না ।যতক্ষন মোনালিসা ছিলেন তাঁর জীবনে বসন্ত ।মোনালিসা নাই জীবন টাও কেমন জানি এলোমেলো হয়ে গেল ভিঞ্চির ।

ভিঞ্চি তাঁর জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছেন ।ভিঞ্চির ডায়রিতে অনেক নকশা একে গেছেন ।কোন কিছুই সম্পূর্ন  করতে পারে নি শেষ জীবনে ভিঞ্চি হয়ত মোনালিসার সেই রহস্যময় হাসিটা এখনো অজানাই রয়ে গেছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *