বাংলাদেশের খ্রীষ্টানদের একটা বিরাট অংশ হলো ক্যাথলিক।ছোট বেলায় ক্যাথলিক স্কুলে পড়ার কারনে আমাদের যে কয়টি প্রার্থনা শিখানো হতো,তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রনাম মারীয়া।। ক্যাথলিক মন্ডলীর সাতটি সাক্রামেন্ট আছে,সব গুলা সাক্রামেন্টেই প্রনাম মারীয়া প্রার্থনাটি থাকেই।। ক্যাথলিক মন্ডলীর বিশ্বাস অনুযায়ী এই প্রার্থনাটি মা মারীয়া এবং গাব্রিয়েল দুতের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের তার মাধ্যমে এই জগৎ এ আসার এক মহা সুসংবাদ বহন করে।।যেহেতু ক্যাথলিকরা এক কাহিনী জানে তাই বেশী কিছু বলার প্রয়োজন নেই। পৃথিবীর সব ভাষায় ই এই প্রার্থনা অনুবাদ করা হয়েছে।।বিশেষ করে ক্যাথলিকদের কাছে।।কিন্ত বাংলা ভাষায় এই প্রার্থনা কি ভাবে আসলো?

এই জন্য আমাদের দুই জনকে আজীবন স্বরন করতে হবে,এক – দোম আন্তনীও ডি রোজারিও এবং ম্যানুয়েল দা আসসুম্পাসাও।। দোম আন্তনীও কে নিয়ে আমি বেশ কয়েকটি লেখায় লিখেছি।।এই লোক না থাকলে ভাওয়াল জুড়ে এত খ্রীষ্টান কোন দিন ও থাকত না।কেন, কিভাবে,কখন এই লোক ভাওয়ালে এসেছিলে মোটামুটি

বিস্তারিত লেখার চেস্টা করেছি।কেউ পড়তে চাইলে, ইন বক্সে নক করলে দিয়ে দিতে পারব।ম্যানুয়েল দা আসসুম্পাসাও সম্পর্কে একটু বলতে হবে।কারন উনার কারনে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থনাটি বাংলা ভাষায় সর্ব প্রথম এসেছিল।।

কিভাবে এসেছিল সেটা জানার জন্য আমাদের খুজতে হবে একটি গ্রন্থ।যে গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সামাদৃত একটি গ্রন্থ।এবং এই বইটি যেখানে বসে লেখা হয়েছিল সেই জায়গাটা হলো বর্তমান সেন্ট নিকোলাস ধর্মপল্লী,নাগরী হতে।নাগরী অঞ্চল এই জন্য গর্ববোধ করতে পারে।।বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থ এই ধর্মপল্লীতে বসে লেখা হয়েছে।গ্রন্থটির নাম – Compendio dos mysterio da fe – এটি একটি পর্তুগীজ নাম, যা বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ক্রেপার শাস্ত্রের অর্থবেদ। বইটি রচিত হয় ১৭৩৫ সালে।কিন্ত বইটি প্রকাশ করা হয় ১৭৪৩ সালে পর্তুগালের লিসবন নগরী থেকে।বইটির তিনটি কপি এখন মাত্র পাওয়া যায়।। একটি পর্তুগালের এভোরা নগরীর লাইব্রেরিতে, দ্বিতীয়টি কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল এর গ্রন্থাগারে।অপরটি নাম পত্র বিহীন অবস্থায় আছে।।গ্রন্থটি যিনি প্রকাশ করেছিলেন, উনার নাম ছিল ফ্রান্সিসকো দা সিলভা।।

কি নিয়ে লেখা হয়েছিল বইটি? এবার একটু দোম আন্তনীও কি দুই লাইন লিখতেই হচ্ছে।দোম আন্তনীও ভাওয়ালে প্রায় তিন বছরে ত্রিশ হাজার হিন্দু মুসলিম কে খ্রীষ্টান বানিয়েছিলেন। আরো বেশী করে খ্রীষ্ট ধর্মে নিম্ন বর্নের হিন্দুদের আকৃষ্ট করার জন্য হিন্দু পন্ডিতদের সাথে বিতর্ক এবং হিন্দু ধর্মের অসারতা প্রকাশের জন্য এই ক্রেপার শাস্ত্রের অর্থবেদ গ্রন্থটি লেখা হয়েছিল।।।ক্রেপার শাস্ত্রের অর্ধবেদ শব্দটি দেখলেও বুঝতে পারি,যে হিন্দু ধর্মের বেদের সমতুল্য করে এই গ্রন্থটিকে দেখানোর চেস্টা করা হয়েছে।।এই নাম করন নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা যায়। কিন্ত সেই দিকে না গিয়ে প্রনাম মারীয়া প্রার্থনাতেই থাকি।।এই গ্রন্থের একটি শ্লোক ছিল এমন –

“দোস্ত বেঙ্গলী,শোন :পুথি

সকলের উত্তম পুথি,শাস্ত্র সকলের

উত্তম শাস্ত্র,শাস্ত্রী সকলের উত্তম,

শাস্ত্রী ক্রেপার শাস্ত্রী,ক্রেপার শাস্ত্র

এবং ক্রেপার শাস্ত্রের পুথি

এহি পুথিতে শোন মন দিয়া”

বুঝায় যাচ্ছে,সকলে উদ্দেশ্য করে,খ্রীষ্ট ধর্ম কে মহিমান্বিত করতেই এই গ্রন্থ খানা লেখা হয়েছিল।।

ক্রেপার শাস্ত্রের অর্ধবেদ গ্রন্থটি দুই ভাগে ভাগ।প্রথম অংশটি হলো নীতির ব্যাখ্যা। এবং দ্বিতীয় ভাগে হলো,খ্রীষ্ট ধর্মের প্রার্থনা।।

এর পরিচ্ছদ সংখ্যা ছিল নয়টি।যেহেতু প্রাচীন বাংলা এবং ভাওয়ালের বাংলা আমি নিজেও প্রথমে বুঝি নি।ইন্টার নেট এবং কিছু গবেষণামুলক বইয়ে বর্তমান বাংলার খোজ পেয়েছি।।

১.স( কল কর) অনের অর্থ এবং প্রথখ্যে প্রথখ্যে বুঝান।

মানে খ্রীষ্টির নীতির পালন করনের অর্থ এবং তাহার ব্যাখ্যা।

২.সিদ্ধি ক্রুশের অর্থবেদ।

মানে ক্রুশের চিহ্নের অর্থবিচার বা ব্যাখ্যা।।আমি এখনো আমাদের অঞ্চলে ক্রুশের চিহ্ন করতে গেলে সিদ্ধ শব্দটির ব্যবহার দেখতে পাই।।

৩.পিতার পাড়ন এবং তাহান অর্থ

মানে খ্রীষ্টের ক্রুশবিদ্ধতা এবং তাহার অর্থ।

৪.মানি সত্য,নিরাঞ্জন, আস্থার চৌদ ভেদ এবং তাহান দিগকের অর্থ।

মানে সত্য নিরঞ্জনের, প্রতি বিশ্বাস,বিশ্বাসের চৌদ্দটি অনুচ্ছেদ তাহাদের ব্যাখ্যা।।

৫.দস আগগ্যা,এবং তাহান দিগের অর্থ।।

মানে, দশটি আজ্ঞা এবং তাহার অর্থ।।

৬.পাচ আগগ্যা,এবং তাহান দিগকের অর্থ।।

মানে, পাচ আজ্ঞা,এবং তাহার অর্থ।।

৭.সাত সাক্রামেন্ট এবং তাহান দিগের অর্থ।

মানে,খ্রীষ্ট ধর্মের সাতটি অনুষ্ঠান এবং তাহার অর্থ।।

৮.আস্থার ভেদ বিচার সত্য করিয়া সিখিবার সিখাইবার উপাএ তরিবার।

মানে বিশ্বাসের ভেদ বিচার,তরিবার উপায় তাহা সত্য করিয়া শিখিবার ও শিখাইবার বিষয়।।

৯.পড়ন সাস্ত্র নিরালা।।

নিরালায় পড়িবার শাস্ত্র।।

এই বার আসা যাক প্রনাম মারীয়া প্রার্থনাটি কথায়।।পড়ন সাস্ত্র নিরালা মানে হলো নিরালায় পড়িবার শাস্ত্র।মানে প্রার্থনা শাস্ত্র।।এই প্রার্থনা শাস্ত্রেই সর্ব প্রথম প্রনাম মারীয়া প্রার্থনাটা পাওয়া যায়।। যদিও এই ছাড়া আরো পাচটি প্রার্থনা এই বইতে ছিল।।বাংলা ভাষায় প্রথম অনুবাদ করা প্রনাম মারীয়া প্রার্থনাটি।।

প্রানাম মারীয়া,

কৃপাতে পুর্নিত,

তোমাতে ঠাকুর আছেন,

ধর্মী তুমি

সকল স্ত্রী লোকের মধ্যে,

ধর্ম -ফল

তোমার উদরে

যেসুস।।

সিদ্ধা মারীয়া

পরমেশ্বরের মাতা

সাধো আমরা

পাপীর কারন,

এখানে আর, আমারদিগর

মৃত্যুর কালের,

আমেন যেসুস।।

আরেক টা প্রার্থনা এখনো করা হয়।নিস্তার জননী,এই প্রাথনাটাও সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয় নাগরীর কোন এক টং ঘরে বসে।।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *