আমি লেখা শুরু করার আগে প্রথমেই বলে নিচ্ছি,এই লেখা কোন অবস্থাতেই কারো বিশ্বাসে যেন আঘাত না লাগে সেই ভাবেই লেখার চেস্টা করব। ড্যান ব্রাউন হবার ইচ্ছা আমার কোন কালেই ছিল না।আর আমি ফিকশনে বিশ্বাস করি না।যা মন চাইলো,তাই লিখে দিলাম গল্পের মত সেটা আসলেই ঠিক না। তবে আমার লেখার রেফারেন্স আমি দেই না,কারন বেশীর ভাগ লেখা বড় হয় বিধায় রেফারেন্স গুলা দিতে মন চায় না।আলসেমী লাগে।আমার মেরী ম্যাগডেলিন সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেক দিনের। তবে ভিঞ্চি কোড টাইপের ফালতু ফিকশন আমার ভালো লাগে না কখনই।একটা প্রতিষ্ঠিত সত্য কে কিছু মহল কুলষিত করতে চায়,সেটা জানা আছে আমার।তবে এও বলে রাখা ভালো,মেরী ম্যাগডেলিন সম্পর্কে আমাদের আরো বেশী জানানো চার্চের দরকার ছিল।এই চরিত্রটি আমি মনে করি খ্রীষ্টান ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ এবং রহস্যময় চরিত্র। এই চরিত্রকে বাদ দিয়ে, যীশুকে মহিমান্বিত কেমন জানি অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। যীশু খ্রীষ্ট, তিনি রাজাদের রাজা,তিনি ইশ্বর।তারপর ও মেরী ম্যাগডেলিন কে প্রাপ্র‍্য সম্মান টুকু আমাদের দেওয়া উচিত ছিল অনেক আগেই।। যদিও দুই হাজার বছর পর ক্যাথলিক চার্চ উনাকে সেন্ট উপাধী দিয়েছে, কিন্ত ওনাকে আরো আগেই, যীশুর শিষ্যদের মতই এই উপাধী দেওয়া উচিত ছিল।যে নারীর নাম বাইবেলে বারো বার উল্লেখ্য আছে,সেই নারীকে নিয়ে জানার আগ্রহ তো থাকবেই।।

মেরী ম্যাগডেলিন আসলে কে ছিলেন? কি তার পরিচয়?
নর্থ ক্যারোলিনার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর বারাট ব্রুম্যান একটি গবেষনা পেপার বের করেছিলেন।যিনি দীর্ঘ দিন প্রাচীন হিব্রু কালচার নিয়ে গবেষনা করেছেন। উনি আমাদের যে ধারনা দেন যে ততকালীন যুগে মেরী নামটা ব্যবহার করা হত চিহ্নিত করার জন্য।যেমন মেরীর পর বাবার নাম স্বামীর নাম দেওয়া হত। কিন্ত মেরী ম্যাগডেলিন এর ক্ষেত্রে এই গুলো নাই।কারন উনি অবিবাহিত ছিলেন। ড্যান ব্রাউন যে ভাবে উনাকে যীশু খ্রীষ্টের স্ত্রী বানানোর চেস্টা করছেন সেটা পুরাটা কাল্পনিক, এবং হাস্য কর ছাড়া কিছু নয়। যদি উনি যীশুর স্ত্রীই হতেন তাহলে উনার নাম হতো মেরী অফ জিসাস। কিন্ত ইতিহাসে কোন দিন কোন জায়গায় এই নামের উল্লেখ নাই।ততকালীন যুগে স্বামীর নামের সাথে মেরী হত।যেমন, মেরী অফ জন, মেরী অফ জেমস। কিন্ত ওনার নামের শেষে ম্যাগডেলিন আছে,একমাত্র সম্ভাবনা এই যে। উনার জন্ম হয়েছে যে জায়গায় সেই জায়গার নাম অনুসারে উনার নাম হয়েছে মেরী ম্যাগডেলিন।

ম্যাগডেলা।এই শহরটি ছিল ভূমধ্য সাগরের উপকুলে একটি দ্বিপের মত। ১৮০০ স্কয়ার ফিটের ব্যপ্ত একটা লেভ্যান্ট।। যে জায়গাটা ১৯৮১ সালে সিরিয়ার অন্তগর্ত ছিল।এর দক্ষিনে ইয়ারমুক নদী,। ইসলামিক ইতিহাসে ও এই নাম পাওয়া যায়, এখানে একটা যুদ্ধ হয়েছিল রোমানদের সাথে মুসলিমদের।এটাকে বলা হয় ব্যাটেল অফ ইয়ারমুক। যাই হোক এটা নিয়ে পরে অন্য কোন দিন বলা যাবে। পশ্চিমে রয়েছে গ্যালিল সাগর আর হোলা ভ্যালী উত্তরে মাউন্ট হারমন আর পূর্বে রাক্কাদা নামের এক উপত্যকা। জায়গাটির বর্তমান নাম গোলান হাউজ। বাইবেলে একটা জায়গার নাম আমরা প্রায়ই পাই।বৈইসাইদা,বা বৈথাসাইদা।এই জায়গাটিও এখানে ছিল বলে প্রত্নতাত্ত্বিকগন মত দিয়েছেন।বেথসাইদা কিন্ত সাধু পিতরের ও জন্মস্থান।। ম্যাগডেলা ছিল একটা জেলে পটি।এখান কার বেশীর ভাগ মানুষ ছিল জেলে। এখান কার বেশীর ভাগ মানুষ গরীব ছিল।তবে গরীবদের মাঝেও কিছু কিছু আভিজাত্য মানুষের বসবাস ছিল।মেরী ম্যাগডেলিন ছিলেন সেই আভিজাত্য শ্রেনীর মানুষ।ধারনা করা হয় মেরী ম্যাগডেলিন এর বংশে উনি ছাড়া কোন পুরুষ মানুষ জীবিত ছিলেন না। তাই পিতার বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছিলেন তিন। তবে এই কথা গুলো আমার না। যিনি এই কথা গুলো বলেছেন তিনি হচ্ছেন একজন প্রত্নতাত্ত্বিক, রামী আরভ। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি বাইবেলে বর্নিত বৈথসাইদা গ্রামের সন্ধানে চলছেন।বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের কার্বন ডেটিং করে সেটার একটা ধারনা আমাদের দিচ্ছেন।।

ম্যাগডেলা গ্রাম টি এখন আর নেই।ধারনা করা হয়ে থাকে যে কোন এক জলোচ্ছ্বাস এর কারনে সেটা সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে।তবে ২০০৮ সালে সমুদ্রে যখন রামী আরাভ সন্ধান চালান তখন কিছু ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এবং সেই গুলার কার্বন ডেটিং এর মাধ্যমে প্রমান পাওয়া যায় ম্যাগডেলা গ্রামের অস্তিত্ব। আর এই গ্রামেই জন্মেছিলেন এক রহস্যময় নারী মেরী ম্যাগডেলিন।

এইবার আসি,কেন মেরীম্যাগডেলিন আমার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
সাধু মার্ক লিখিত মংগল সমাচার ১৫ অধ্যায় ৪০ পদ- “কয়েকজন স্ত্রী লোক দূর থেকে দেখছিলেন,তাদের মধ্যে ম্যাগডেলিন মরিয়ম শ্যালোমী আর ছোট যাকোব এবং যীশুর মা”।উনি সেই নারীদের একজন যিনি প্রভু যীশুর যাতোনাভোগের সময় ছিলেন। এই কথা শুধু সাধু মার্কের মংগল সমাচারেই নয় মথি লিখিত মঙ্গল সমাচার ২৭ অধ্যায়ের ৫৫ থেকে ৫৬ পদ, সাধু লুকের ২৩ অধ্যায়ের ৪৯ পদেও মেরী ম্যাগডেলিন এর কথা উল্লেখ্য আছে।

মেরী ম্যাগডেলিন শুধু মাত্র যে যীশুর ক্রুশ বিদ্ধ অবস্থায় তার কাছে ছিলেন তা কিন্ত নয়,বরং যীশু খ্রীষ্ট যখন তিন দিনের দিন মৃত্যদের মধ্য থেকে জীবিত হয়েছিলেন, প্রথম যার সাথে তার প্রথম দেখা হয়েছিল তিনি ছিলেন মেরী ম্যাগডেলিন। যীশু তাকে বলেছিলেন,তার জীবিত হবার কাহিনী যেন শিষ্যদের বলা হয়।।

এমন একজন মানুষকে কোন ভাবেই মুছে ফেলা যায় না।।
সত্যি কথা বলতে কি পোপ ফ্রান্সিস কে আমার অত্যাধিক ভালো লাগে।উনি নির্ভয়ে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দেখানো পথা হাটছেন।সংস্কার করেছেন। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত মেরী ম্যাগডেলিন কে একজন পতিতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। উনাকে পোপ গ্রেগরী পতিতা বলে ঘোষনা দিয়েছিলেন। সত্যি কথা বলতে কি পোপ গ্রেগরী এক জন পতিতার সাথে উনার নামের মিল থাকায় গুলিয়ে ফেলেছিলেন। আমি আগেই বলেছি মেরী নামের অনেকের নাম পাওয়া যায় বাইবেলে।যীশুকে এই পতিতা স্পর্শ করেছিল, ঠিকিই উনি ও মেরী নামে পরিচিত ছিলেন। কিন্ত মেরী ম্যাগডেলিন আর উনি এক ব্যক্তি নন।
মেরী ম্যাগডেলিন, ছিলেন যীশুর সবচেয়ে অনুগত শিষ্যদের মাঝে একজন।

এবার প্রশ্ন জাগতে পারে কখন, উনার সাথে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দেখা হয়েছিল?কিভাবে দেখা হয়েছিল?আর কেনই বা দেখা হয়েছিল?

আমি আগেই বলেছি ড্যান ব্রাউন কিংবা এন্টি ক্রাইস্টদের ম্ভ্রান্ত মতগুলো কে আমি সমর্থন করি না।এমন কি চার্চের এত বছরের ইতিহাসে উনাকে গোপন করার প্রচেস্টাকেও সমর্থন করি না।মেরী ম্যাগডেলিনের সাথে যীশুর পরিচয় হয়েছিল কিভাবে।কিভাবে যীশু খ্রীষ্টের এত কাছে আসতে পেরেছিলেন একজন নারী? কিভাবেই যীশু সকল শিষ্যদের সেরা শিষ্য হয়ে উঠেছিলেন এক নারী? সেটা চেস্টা করব। ভাল কথা, এই কথা আমি বলি নি। ২০১৬ সালের ২২ জুলাই ইস্টার ফিস্টের দিন পোপ ফ্রান্সিস ঘোষনা করেছেন, মেরী ম্যাগডেলিন ছিলেন “Apostle of all the Apostles.”

যাই হোক, মূল কথায় আসি। যীশু খ্রীষ্টের সাথে মেরী ম্যাগডেলিনের দেখা হয়েছিল কিভাবে? এই প্রশ্নের উওর খুজতে আমাদের যেতে হবে যীশু খ্রীষ্টের জন্মের আরো ৫০ বছর পূর্বে।রোমান সভ্যতার এবং রজ্যত্বের দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে।। রোমানরা ইউরোপ দখল করে ইস্রায়েলের দিকে হাত বাড়ায়। আস্তে আস্তে ইস্রায়েলও রোমান সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।আমরা খ্রীষ্টানরা সবাই গালীল নামটার সাথে পরিচিত।এই গালীলই আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে মেরী ম্যাগডেলিন এর কাছে। দ্বিতীয় পর্ব লেখার সময় আমার বার বার কার্ল মার্ক্সের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে পড়ছিল,” ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না”।বিদ্রোহ কোন দিন মানুষ হত্যা করে দমন করা যায় নি,নিপীড়নের মাধ্যমেও বিদ্রোহ দমন করা যায় নি।সম্প্রতি সময়ে ও যদি আমরা দেখি ইরানে যে আন্দোলন হয়েছে,সেটা কি একদিনে হয়েছে,মানুষের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায় মানুষ তখন বিদ্রোহী হয়ে উঠে। আরব বসন্ত সেটা চরম উদাহারন মাত্র।রোমানরা যখন গালীল বাসীদের উপর চরম নির্যাতন শুরু করে,তখন সাধারন মানুষ বিদ্রোহী হয়ে উঠে।তারা রোমানদের বিরুদ্ধে গুপ্ত সংঘ গঠন থাকে। সময় টা খ্রীষ্ট পূর্ব ৫০ অব্দের কাছাকাছি।গালীল বাসীদের মধ্যে ছিল মেরী ম্যাগডেলিনের সেই গ্রাম ম্যাগডেলা।রোমানদের অপকর্ম দিন দিনকে বাড়ছিল। আর ম্যাগডেলা বাসীর বিদ্রোহের উত্তাপ ও চড়াও হচ্ছিল।সেই ম্যাগডেলা থেকে আস্তে আস্তে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পরে সমগ্র গালীল জুড়ে। ভীত সন্ত্রস্ত রোমানরা তাই চরম প্রতিশোধ নেবার প্র‍য়াস চালালো।রোমে যখন গালীল বাসীদের বিদ্রোহের কথা পৌছালো তখন রোমান সিনেটেরগন কড়া হস্তে সেই বিদ্রোহ দমন করতে চাইলো।তার দায়িত্ব দেওয়া হল, সেই শাসক কে যাকে আমারা সবাই চিনি। হেরোদ দ্যা গ্রেট। হেরোদ এমনিতেও অত্যাচারী শাসক ছিলেন। তিনি খুজে খুজে বের করতে লাগলেন বিদ্রোহীদের।ম্যাগডেলাতেও পরল হেরোদের সেই নিষ্ঠুর তান্ডব।যারা বিদ্রোহী ছিল তারা গোপনে ম্যাগডেলা ছেড়ে পাড়ি জমাতে থাকে মাউন্ট আরাবেলে গুহাতে। এটি ঘটে ছিল ৩৮ অব্দে।অবশ্য বেশীর ভাগ বিদ্রোহী ধরা পরে, তাদেরকে জনসমুখে ক্রুশ বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।এখানে উল্লেখ্য এই যে যিশু খ্রীষ্ট প্রথম নন যাকে ক্রুশ বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।তত কালীন সময়ে সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধীদের এবং রাষ্ট্রদ্রোহীদের হত্যার বিধান ছিল ক্রুশ বিদ্ধ করে হত্যা করা। যে সকল বিদ্রোহীরা বেচে মাউন্ট এরাবেলের গুহায় আশ্র‍য় নিয়েছিল তাদেরকে হত্যা করার জন্য রোমান সৈন্য রা মাউন্ট আরাবেলের আশে পাশে অবস্থান নেন।যেন কোন ভাবেই তারা খাবারের জন্য বাইরে আসতে না পারে।খাবারের পানি,আর খাদ্য সংকটে বিদ্রোহীরা, যারা নিচে আসতে বাধ্য হচ্ছিল তাদেরকে ধরে ধরে হত্যা করে রোমান সৈন্যরা।এভাবে ৭৬ দিন অবরোধ করে রাখে রোমান সৈন্যরা।একে একে সব পরিবার হত্যা করার পর শুধু মাত্র একটি পরিবার বেচে থাকে। অবশেষে ক্ষুধা আর পানি সংকটে শেষ পরিবারের কর্তা তার সাত সন্তানকে মাউন্ট আরাবেলের পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন এবং নিজেও শেষ পর্যন্ত ঝাপিয়ে পরে আত্নহত্যা করেন।আর এই ভাবে বিদ্রোহ দমন করে রোমানরা।কিন্ত রোমানরা কখনো ভাবতে পারেনি ছাই চাপা আগুন থেকে একদিন দাবানল তৈরী হবে।পুরিয়ে দিবে রোমান সম্রাজ্যের দাপটকে।জন্মনিবে একজন মেরী ম্যাগডেলিন।। এই কাহিনী পাওয়া যায় জোসিফাসে নথি থেকে।

এখানে ফ্লাভিয়াস জোসিফাসের সমন্ধে না বললে কাহিনী অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।উনি ছিলেন একজন ইহুদি ইতিহাসবিদ। উনার জন্ম হয় জেরুসালেমের যুদেয়া প্রদেশে ৩৭ খ্রীষ্টাব্দে। উনি খুব সম্ভবত মারা যান ৬৩ বছর বয়সে ১০০ খ্রীষ্টাব্দে।উনার লেখা পৃথিবীর অন্যতম গোপন লাইব্রেরি, ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ ইজরাইলে সংরক্ষন করা আছে।যাকে বলা হয়ে থাকে জোসিফাসের নথি।কোন একদিন সময় হলে এই লাইব্রেরী নিয়ে লিখতে চেস্টা করব।সেই নথিতেই এই কাহিনীগুলো বর্ননা করা আছে।

এবার চলে যাই, যীশু খ্রীষ্টের কিভাবে দেখা হয়েছিল মেরী ম্যাগডেলিনের সাথে।এই বার আমাদের একটু প্রচলিত ধ্যান ধারনা থেকে বের হয়ে লেখাটা পড়তে হবে।আমি কোন বিশ্বাসের উপর আঘাত দিচ্ছি না বার বার এই কথাটাই বলব।ইশ্বর তার নিজ পুত্রকে পাঠিয়েছেন, যিনি আমাদের তার রক্তের মাধ্যমে, আমাদের মুক্ত করেছেন।আমি এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী।ঘটনা যখন যীশু দীক্ষাস্নাত হয়েছেন। আনুমানিক, ২৪ থেকে ২৮ খ্রীষ্টাব্দ।যীশু তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা আর যুক্তি দিয়ে মানুষকে আলোর পথে আনছেন।উনি মানুষকে এই শিক্ষা দিচ্ছিলেন যে,কেউ যদি তোমার এক গালে চড় মারে অন্য গাল ফিরিয়ে দাও,তিনি শিক্ষা দিচ্ছিলেন, কেউ যদি অস্ত্র ধারন করে সেই অস্ত্রেই তার জীবন নাশ হবে।যাই হোক, তিনি এইভাবে শিষ্যদের যোগাড় করছিলেন।যীশুর কথায় মানুষ সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছিল।যীশুর এই আন্দোলনের জায়গা হয়ে উঠল কপোডিয়াম নামের এক জায়গা। সেখান থেকে মাত্র পাচ কিলোমিটার দূরে হল মেরী ম্যাগডেলিনের বাসস্থান ম্যাগডেলা।।আমি আগেই বলেছি ম্যাগডেলা হৃদ দ্বারা বেস্টিত এক জায়গা। যেখানে যেতে হলে নৌকা ছাড়া আর কোন বিকল্প রাস্তা ছিল না।কিন্ত যীশুকে সেখানে যেতেই হতো, কারন তিনি ছিলেন নিপীরিত মানুষের কন্ঠস্বর। যীশু তার শিষ্যদের নিয়ে রওনা দেন ম্যাগডেলার উদ্দেশ্যে। যার কথা উল্লেখ্য আছে মথি লিখিত সু সমাচারের ৮ অধ্যায়ের ২৩ থেকে ২৭ পদে।
এরপর যীশু একটা নৌকাতে উঠলেন আর তার শিষ্যরা তাঁর সঙ্গে গেলেন।
২৪ সেইহ্রদের মধ্যে হঠাত্ ভীষণ ঝড় উঠল, তাতে নৌকার উপর ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল। যীশু তখন ঘুমোচ্ছিলেন।
২৫ তাইশিষ্যরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর ঘুম ভাঙ্গিয়ে বললেন, ‘প্রভু বাঁচান! আমরা য়ে ডুবে মরলাম।’
২৬ তখন যীশু তাঁদের বললেন, ‘হে অল্প বিশ্বাসীর দল! কেন তোমরা এত ভয় পাচ্ছ?’ তারপর তিনি উঠে ঝোড়ো বাতাস ওহ্রদের ঢেউকে ধমক দিলেন, তখন সব কিছু শান্ত হল।
২৭ এতে শিষ্যরা আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘ইনি কিরকম লোক? এঁর কথা এমন কি বাতাস ও সাগর শোনে!’

যীশু কিন্ত সেই নৌকায় করে,যার সাথে যার বাড়িতে গিয়ে দেখা করেছিলেন তিনি হলেন ম্যারী ম্যাগডেলিন। যীশুর সাথে মেরী ম্যাগডেলিন এর দেখা হয়েছিল কিভাবে সেটার বর্ননা পাওয়া যায় লুক লিখিত মঙ্গল সমাচারের ৮ অধ্যায়ের দুই পদে।

“এমন কয়েকজন স্ত্রীলোকও তাঁর সঙ্গে ছিলেন, যাঁরা নানারকম রোগ ব্যাধি থেকে সুস্থ হয়েছিলেন ও অশুচি আত্মার কবল থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন মরিয়ম মগ্দলীনী, এর মধ্যে যীশু সাতটি মন্দ আত্মা দূর করে দিয়েছিলেন।”
এই ঘটনা উল্লেখ্য আছে,মার্কের ১৬ অধ্যায়ের ৯ পদে।

“তাঁর পুনরুত্থানের পর সপ্তাহের প্রথম দিনে অর্থাত্ রবিবার ভোরে, তিনি প্রথমে মগ্দলীনী মরিয়মকে দেখা দিলেন, যার থেকে তিনি সাতটা ভূতকে তাড়িয়েছিলেন।”

যীশু মেরী ম্যাগডেলিনের সাত টা মন্দ আত্না দূর করেছিলেন তার ঐশ্বরিক ক্ষমতা বলে।যীশুর কথা এবং যীশুর শিক্ষায় মেরী ম্যাগডেলিন এত টাই বিমোহীত হয়েছিলেন যে,উনি ওনার পৈত্রিক সম্পত্তি পর্যন্ত বিক্রি করে যীশুকে সাহায্য করেছেন।এই অংশ টুকু পাওয়া যায় লুক লিখিত মংগল সমাচারের একটি অংশে।যেখানে লেখা ছিল, যখন আন্দোলন আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল।।
কিন্ত এখানে কে সাহায্য করেছিল সেটা বলা নেই।এখানে সাধু পিতর আর যীশুর কথোপকথন বলা আছে।আমাদের বাইবেলে চার জন সুসমাচার লেখক আছেন।মথি, মার্ক, লুক, যোহন। এদের বাইরেও আরো ৯০ জন গোসপাল লিখেছেন।কিন্ত বেশীর ভাগ ত্রুটিপূর্ন হওয়ায় সেটা গ্রহন করেনী চার্চ। যেমন গসপাল অফ জেমস, গসপাল অফ ফিলিপ,গসপাল অফ যুদাস,গোপাল অফ মেরী ম্যাগডেলিন। এই গুলা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।তবে, মেরী যে যীশুকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করেছিল সেটি পাওয়া যায় গসপাল অফ ফিলিপে। যেখানে লেখা আছে,যখন যীশু এবং সাধু পিতর আন্দোলনে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন তখন একজন নারী, যে ছিল গালীলের লোক মেরী ম্যাগডেলিন তাদের কে আর্থিক ভাবে সাহায্য করে।আমি আগেই বলেছি মেরী ম্যাগডেলিন পৈতৃক সুত্রে পাওয়া বিপুল অর্থ সম্পদ পেয়েছিলেন।তিনি সেটা যীশুর প্রচারের কাজে ব্যয় করেছিলেন।

মেরী ম্যাগডেলিন কে খুজতে গেলে সর্ব প্রথম আমাদের যাকে খুজতে হবে, তিনি হচ্ছেন যুদাস। যুদাস কে এবং তার চরিত্রকে না বুঝলে মেরী ম্যাগডেলিনকে বোঝা একটু কঠিন হয়ে যাবে। যুসাদ জন্মে ছিলেন যুদেয়া প্রদেশে। আগের পর্ব গুলো যারা পরেছেন তারা জানেন যে,গালীল আর যুদেয়ার অবস্থান কতটুকু। যুদাসের সাথে যীশুর কিভাবে পরিচয় হয়েছিল?এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে আমাদের যেতে হবে ২৭ খ্রীষ্টাব্দের দিকে।যীশু সাধু পিতরকে সংগে নিয়ে কেরিওথ নামক জায়গায় গিয়েছিলেন। জায়গাটা জেরুসালেমের দক্ষিনে অবস্থিত।যুদাস ছিলেন আঞ্চলিক নেতা।উনি ছোট ছোট দলে ভাগ করে রোমান সৈন্যদের বিরুদ্ধে গেরিলা হামলা চালাতেন। এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তিনি সফল হয়েছিলেন। ঠিক সেই সময়েই যীশুর সাথে যুদাসের দেখা হয়।যীশু তাকে ডাকলেন, যুদাস” এসো,আমার সংগী হও “।যুদাস তখন তার দল বল নিয়ে যীশুর সংগী হলেন।যীশু যুদাস কে এতটাই বিশ্বাস করেছিলেন যে,তাকে আর্থিক দিক দেখাশুনার দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন। যীশুর সব শিষ্য গালীলের অধিবাসী হলেও, একমাত্র যুদাস ছিলেন গালীলের বাইরের লোক। আগেই বলেছি,যীশুর কাছ থেকে যুদাস বড় উপহারই পেয়েছিলেন। ঊনাকে ট্রেইজারীর দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন বিশ্বাস করে।কিন্ত তিনি তা রাখতে পারেন নি।বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিলেন যীশু খ্রীষ্টের সাথে।

এই অংশ টূকু লেখা হচ্ছে একটি প্রাচীন পান্ডুলিপি থেকে। কোডেক্স অফ চ্যাকোস। আমি আগেই বলে নিচ্ছি যে,আমি খ্রীষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী এবং ক্যাথলিক মন্ডলীর একজন সদস্য।শুধুমাত্র, এই বিষয়গুলো অনেকে না মানলেও ঐতিহাসিক ভাবে বিবেচ্য হওয়ায় এই তথ্যগুলো তুলে ধরা।১৯৭৮ সালের দিকে বিকেল বেলা মিশরের আল মিনিয়াত নামক জায়গায় কিছু কিশোর খেলাধুলা করছিল।পাশ্ববর্তী গ্রাম, বেনি মাজারে উচু নিচু অনেক টিলা ছিল। টিলা গুলো বেশ প্রাচীন। এখানে বহু বছর ধরে লোক জন বাস করে না।কিশোররা এই টিলা গুলোতে ঢিল ছুড়ছিলো।এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করছিল, কিছু ঢিল নিচে নেমে আসছে না।কোথায় যেন আটকে যাচ্ছে।কিশোররা তখন সেই টিলা তে উঠে এবং সেখানে গুহা দেখতে পায়ভ।সেই গুহাতে এক কিশোর নেমে পরে ভয় ডরহীন ভাবে।প্রচলিত ছিল এই সমস্ত গুহাতে, ইজিপশিয়ান কোবরা থাকে।তারপর ও সেই কিশোর নেমে দেখলো যে,একটি মুখ ভাংগা কলসের ভিতর কিছু প্রাচীন কাগজপত্র রাখা।কিশোর যখন নিশ্চিত হলো যে, সেখানে কোন কোবরা টোবরা নেই। তখন সে সেগুলোকে বের করে আনে। এবং বিক্রি করে দেয় কালোবাজারীদের কাছে।

১৯৭৮ সালে নিকোলাস কৌতলাকিস নামে এক গ্রীক ব্যবসায়ী সেই প্রাচীন নথি গুলো কিনে নেয়। নথি গুলো লেখা হয়েছিল প্রাচীন গ্রীক এবং কপ্টিক ভাষায়। মুলত গ্রীক ভাষায় মূল কপি এবং কপ্টিক ভাষায় সেটার অনুবাদ করা হয়। যেহেতু নিকোলাস গ্রীসের অধিবাসী ছিলেন, তারপক্ষে কিছু হলেও পাঠ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল।১৯৮৩ সালে, ইয়োলা ইউনিভার্সিটির একজন প্রাচীন ভাষাতত্ত্বের একজন অধ্যাপক এক নথি গুলো পান। তিনি সেগুলোকে কার্বন ডেটিং করেন এবং এই মর্মে উপনীত হন যে,গ্রীক ভাষায় লেখা গুলো লেখা হয় ১৩০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৭০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্য আর সেটার অনুবাদ করা হয় কপ্টিক ভাষায় ২২০ – ২৮০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে। এবং গ্রীক ভাষায় এই লেখা গুলোর লেখক ছিলেন এক জন খ্রীষ্টান লেখক, যার নাম ছিল আইরেনিয়াস অফ লিওনস।উনি ছিলেন একজন গ্রীক বিশপ।।উনি ১৩০ খ্রীষ্টাব্দে এবং মৃত্যু বরন করেন ২০২ খ্রীষ্টাব্দে।যাই হোক উনাকে নিয়ে আজকের লেখা না।

কোডেক্স অফ যুদাসে কি লেখা ছিল সেটা নিয়ে এবার কথা বলা যাক।কোডেক্স অফ যুদাসের, যুদাস যীশুকে বোঝানোর চেস্টা করছিলেন যে,রোমানদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করতে হবে। এবং নিজেদেরকেই রোমান সম্রাজ্যের পতন ঘটাতে হবে।কিন্ত যীশু কখনোই সেটা চান নি।তিনি শিক্ষা দিচ্ছলেন,কেউ যদি তোমার এক গালে চর মারে অন্য গাল ফিরিয়ে দাও,কেউ যদি গামছা চায় তাকে নিজের জামা খুলে দাও।তাই যীশু যুদাসে কথায় কান দেন নি।তবে কোডেক্স অফ যুদাস বা চ্যাকোস একটা নাম বার বার উঠে এসেছে।তিনি হলেন, মেরী ম্যাগডেলিন।

লাস্ট স্যাপারের,সময় যীশু তার শিষ্যদের ডাকলেন।লাস্ট স্যাপার কোথায় হয়েছিল,কেন হয়েছিল কোন তারিখে হয়েছিল? লাস্ট স্যাপার হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৬ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যবর্তী কোন সময়ে।তবে খ্রীষ্টান স্কলাররা সেটাকে ৩৩ খ্রীষ্টাব্দ হিসেবে ধরে নিয়েছেন।অবশ্য এর সপক্ষে প্রমান ও আছে।স্যার আইজেক নিউটন, কলিন হাম্ফ্রেসের মত এই দিন টা নিয়ে বিশেষ ভাবে গবেষনা করেছেন।অংক এবং ক্যালেন্ডারের হিসেব অনুযায়ী সেই দিনটি ছিল ৩৩ খ্রীষ্টাব্দের পহেলা এপ্রিল।এই দিনটা নিয়ে জোতিষ্য বিজ্ঞানের ক্যালকুলেশন নিয়ে একটি বই বেরিয়েছিল, ১৭৩৩ খ্রীষ্টাব্দে। সাধু লুকের ২২ অধ্যায়ের আট পদের এই লাস্ট স্যাপারের কথা উল্লেখ্য আছে।এই লাস্ট স্যাপার অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেরুজালেমের বাইরে একটি বাড়িতে, যেটা ছিল বেথানী নামক জায়গায়।

মঙ্গল সমাচার এবং প্রথম করিন্থিয়তে, এ লাস্ট স্যাপারের বর্ননা পাওয়া যায়। এটাকে বলা হয় হোলি কমিনিয়ন। কেন বলা হয় কারন ওই দিন যীশু একটি রুটিকে ভাগ করে দিয়েছিলেন বারো জনকে, এবং এই নাও আমার দেহ। যীশু তার শিষ্যদের পা ধুয়ে বলেছিলেন, আমি যেমন তোমাদেরকে ভালোবাসি,এমনি তোমারাও পরস্পরকে ভালোবাসবে।এই কথা দ্বারা যীশু তার শিষ্যদেরকে বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, নিজেদের ভিতরের ভেদাবেদ ভুলে একে অপরেকে ভালোবাস।কিন্ত যীশুর সেই বানী একজন শুনতে পায় নি। উনি হলেন যুদাস ইস্কারিয়ত।লাস্ট স্যাপারের কোন এক সময় তিনি বের হয়ে গিয়েছিলেন।যীশু বুঝতে পারছিলেন যে,তাকে ধরিয়ে দেওয়া হবে।।তিনি শিষ্যদের সেই নির্দেশ দিলেন যে,ধনী গরীব ভেদাভেদ না করতে।নারী পুরুষে ভেদাভেদ না করতে।।

যীশু তাদেরকে বললেন,তিনি রোমান সৈন্যদের কাছে ধরা পরতে যাচ্ছেন।এবং তারই একজন বিশ্বস্ত লোক তাকে ধরিয়ে দিবে।ধরা পরার পর তার বিচার হবে হিব্রু আধিকারিকদের সামনে। যেহেতু রোমান সৈন্যরা তাকে চিনতেন না,তাই তাকে চিনিয়ে দিবে তার শিষ্যদেরই একজন।

পরের ঘটনা সবার জানা।। তাই আর উল্লেখ্য করলাম না।।
তবে মেরী ম্যাগডেলিনর ভাগ্যে কি হয়েছিল সেটা বলা দরকার।।

মেরী ম্যাগডেলিন এবং যীশু খ্রীষ্টকে নিয়ে ড্যান ব্রাইন সাহেব এক নোংড়া খেলা খেলেছেন, তার ভিঞ্চি কোড উপন্যাসে এবং সিনেমায়। ড্যান ব্রাউন যেটা করছেন, সেটা হলো তিনি পাজেল মিলিয়ে গেছেন।যা মন চেয়েছে সেটার ঐতিহাসিক ভিত্তিকে সমর্থন না করলেও ফিকশনের সাহায্যে সেটাকে সত্যি করতে চেয়েছেন।আপনারা যারা ভিঞ্চি কোড পড়েছেন বা দেখেছেন, সেখানে লাস্টের দিকে এক মেয়েকে দেখানো হয়, যাকে বলা হয় মেরী ম্যাগডেলিন এবং যীশু খ্রীষ্টের বংশধর। কিন্তু এখন পর্যন্ত যতগুলো প্রাচীন নথি আবিষ্কৃত হয়েছে,কোথাও এই তথ্য পাওয়া যায় নি।উনি ইচ্ছে করেই সেই কাজ টি করেছেন।যীশু খ্রীষ্টের সাথে মেরী ম্যাগডেলিনের সম্পর্ক কি ছিল? আসলেই কি মেরী ম্যাগডেলিনের আর যীশু খ্রীষ্টের বংশধর বেচে ছিল?

অত্যন্ত স্পর্শ কাতর বিষয় টি জানার জন্য আমাদের যেতে হবে ১৮৯৬ সালের অক্টোবর মাসে মিশরের কায়রোতে। আমি এই অংশ টুকু লেখার আগে, প্রতিবারের মত এবার ও বলি,আমি একজন খ্রীষ্টান এবং রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রতি আমার পূর্ন সমর্থন আছে। আমি শুধু, যা জানানো হয় নি আমাদের সেই টুকু জানাতে চেস্টা করছি।১৮৯৬ সালে অক্টোবর মাসে মিশরে এসে পৌছান কার্ল রেইনহারদট নামের একজন জার্মান।উনার শখই ছিল প্রাচীন পুথি সংগ্রহ করা। ১৮৯৬ সালের এক বিকেলে তিনি কায়রোর এন্টিক বিক্রির দোকান গুলোতে ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন। ঠিক সেই সময়ে পশুর চামড়ায় মোড়ানো কিছু নথি উনি দেখতে পান। যেহেতু উনি প্রাচীন কপটিক ভাষায় কিছুটা পারদর্শী ছিলেন, সেহেতু তিনি ভূমিকা পড়ে বুঝে গেলেন যে,এটা একটা অনুবাদ গ্রন্থ।এই নথি গুলো লেখা হয়েছিল পঞ্চম শতাব্দীতে। কিন্ত তিনি যখন নথিগুলোর আরো ভিতরে প্রবেশ করতে লাগলেন, তখন তিনি আবিষ্কার করলেন, এই বইয়ের মূল অংশ লেখা হয়েছিল যীশুর মৃত্যুর ঠিক দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে। কার্ল রেইনহারদাট সেই নথিতে খুজে পেলেন যীশু খ্রীষ্ট, মেরী ম্যাগডেলিন, যুদাস, পিটার ও আরো অনেক জনকে। তিনি নথি গুলোকে নিয়ে আসলেন বার্লিনে।এর প্রায় একশ বছর পর্যন্ত এই নথি গুলো জন সম্মুখে আর আসে নি।১৯৮৩ সালে সেই নথি গুলো প্রকাশ করা হয়। পাবলিশ করেন পি যে পারসন নামের এক প্রকাশক।যেহেতু বার্লিনে প্রকাশ করা হয়েছিল,তাই সেটার আরেক নাম বার্লিন কোডেক্স বা আখমিম কোডেক্স বা গসপেল অফ মেরী ম্যাগডেলিন।

গসপেল অফ মেরী ম্যাগডেলিন, আর ৯০ টা গোসপেলের এই গসপেলকেও চার্চ স্বীকৃতি দেয় নি। ৩৩ খ্রীষ্টাব্দের এপ্রিল মাসের কোন এক সময়ে। যীশু তার শিষ্য পিতরকে নিয়ে গেথসেমানী বাগানে প্রবেশ করলেন। একটি অলিভ গাছের গোড়ায়,একটি পাথরের উপর নত যানু হয়ে প্রার্থনা করছিলেন। সূর্য তখন পশ্চিম দিকে ঢলে পরছে।যীশু তার শিষ্যদের বললেন, তোমারা জেগে থাক এবং প্রার্থনা কর। কিন্ত শিষ্যরা ঘুমিয়ে পরেছিল । আর ঠিক সেই সময় উপস্থিত হয় যুদাস। দ্যা গ্রেট সিনার।আগের পর্বে বলেছিলাম,রোমান সৈন্যরা যীশুকে চিনত না। শুধু মাত্র নাম শুনেছিল মাত্র। যীশু খ্রীষ্ট যুদাস কে দেখে বললেন,বন্ধু তুমি যা করতে এসেছ কর(মথি ২৬ অধ্যায় ৫০ পদ)।তখন যুদাস তার বাম গালে চুম্বন করল।আর সৈন্যরা এসে যীশুকে জাপটে ধরল।।এই ঘটনা শিষ্যদের সাথে বাগানের বাইরে থেকে আরেক জন প্রত্যক্ষ করছিলেন। তিনি ছিলেন মেরী ম্যাগডেলিন।

এবার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মেরী ম্যাগডেলিনের খোজ করা যাক।বিচার সভায়। যীশুকে গ্রেফতারের পর সৈন্যরা যীশুকে নিয়ে গেল,যুদেয়ায় অবস্থিত রোমান সিনেট দ্বারা পরিচালিত প্রধান পুরোহিতের কাছে।।যার প্রধান পুরোহিত ছিল কায়াফেস।আমাদের গ্রাম অঞ্চলে যীশুর কস্টের গানে এই কায়াফেসের বাড়ির নাম উল্লেখ্য করা হয়ে থাকে।যীশু কে কিভাবে বিচারের নামে প্রহশন করা হয়েছে সেটা তুলে ধরা হয়।এই ঘটনাকে কস্টের গানে দরবার বলা হয়ে থাকে।যাই হোক,যীশুকে গ্রেফতারের পর, তার উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। সেই অবস্থা দেখে শিওরে উঠে সবাই।ইহুদী মন্দিরের,সহকারী হিসেবে পরিচিত যোসেফ এবং নিকোদামাস নামের দুই জন তা দেখে প্রতিবাদ করে।শুরু হলো সেই ঐতিহাসিক বিচার।একের পর এক অভিযোগ আনা হলো যীশু খ্রীষ্টের বিরুদ্ধে।বলা হল,উনি ইহুদী মন্দির ভাঙ্গার জন্য জনগনকে উস্কানী দিয়েছেন,তিনি নিজেকে মশীহা বলে দাবী করেছেন।আরো অনেক অভিযোগ আনা হলো যীশু খ্রীষ্টের বিরুদ্ধে। কিন্ত যীশু খ্রীষ্ট ছিলেন,নির্বাক, নিশ্চুপ।কোন কথা বললেন না তিনি।যোসেফ এবং নিকোদামাস দুইবার প্রতিবাদ করে উঠলেও সেই প্রতিবাদে কোন লাভ হলো না।কায়াফেসের বাড়িতে বিচার সভায় অনেক লোক ভিড় করেছিল।তাদের মধ্যে একজন ছিলেন পিটার আরেক জন মেরী ম্যাগডেলিন। যীশু খ্রীষ্টের ভবিষ্যৎ বানী মোতাবেকে, মোরগ ডাকার আগে পিটার যীশু কে তিন বার অস্বীকার করলো।বিচার শেষ রায় ঘোষনার পালা।মেরী ম্যাগডেলিন, এই তীব্র গরমেও ঠক ঠক করে কাপছিলেন।কায়েফেস সহ অন্যান্য বিচারকরা ঘোষনা করলেন যে,যীশু খ্রীষ্টকে ক্রুশে দিয়ে হত্যা করা হবে।এই রায় শোনার পর, অস্ফুট স্বরে এক কান্না রোল বেরিয়ে পরল।সেটা ছিল মেরী ম্যাগডেলিনের। তার ত্রার্নকর্তা কে ক্রুশে দিয়ে হত্যা করা হবে।এ, কিভাবে মেনে নিবে সে।মেরী ম্যাগডেলিন যে, সেখানে ছিলেন তা কিন্ত আমাদের গসপেল গুলাতে নেই। তা আছে যুদাসের কোডেক্সের ১৩ অধ্যায়ের ৬ থেকে ৯ পদে।ইংরেজী অনুবাদ করলে দাঁড়ায়,সন অফ গড ওয়াজ ডেড,এল্যাইভ। মেরী স্কিমড, হেয়ারিং দ্য ভারডিক্ট।

এবার আসা যাক,যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশ বিদ্ধের সময় মেরী ম্যাগডেলিন কোথায় ছিলেন।নানান মিথ্যাচার আর ষড়যন্ত্র করে যীশুকে মৃত্যদন্ডে দন্ডিত করা হলো।যীশুর মৃত্যদন্ডে দন্ডিত করার ব্যাপারে প্রবল ভাবে আপত্তি করল, যোসেফ এবং নিকোদামাস। তাদের আপত্তির কারনে রায় স্বার্বজনীন হলো না।ইহুদী আইন মতে, সব রাববী গন একমত হলেই কেবল মাত্র মৃত্যু দন্ড কার্যকর করা যায়। যেহেতু দুই জন মৃত্যু দন্ডের বিপক্ষে সেহেতু অন্যান্য বিচারক পরল মহাসমস্যায়।তখন স্বীধান্ত নেওয়া হলো যে,যীশুর বিচার করবে পন্তেয় পিলাত নামের একজন রোমান গর্ভনর। পন্তেয় পিলাত থাকতেন যুদেয়ার সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত অট্রালিকায়।যার নাম প্রায়টোরিয়াম।এই প্রাসাদে যখন যীশুকে নিয়ে আসা হল, যীশু খ্রীষ্ট তখন প্রায় অর্ধেক মৃত।সেই সকালে কাউকে প্রাসাদে ঢুকতে দেওয়া হয় নি এমন কি মেরী ম্যাগডেলিনকেও।যীশুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলো উনি একজন রাস্ট্র দ্রোহী,যিনি কিনা রোমান সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করেছেন।পন্তেয় পিলাতের আর বেশী কিছু শোনার প্রয়োজন পরেনি।অবশ্য তিনি যীশুকে বাচাতে চেয়েছিলেন।কিন্ত ইহুদী পন্ডিতদের কারনে হাত ধুয়ে বললেন,এই লোকের মৃত্যুর জন্য তিনি দায়ী নন।ইহুদী পুরোহিতরা বললেন,এর জন্য আমরা এবং আমাদের বংশধররা দায়ী থাকবে।এরপরের ঘটনা সবার জানা, তাই আর উল্লেখ্য করলাম না।।।

এইবার আসা যাক,যীশুর মৃত্যুর সময় মেরী ম্যাগডেলিন কোথায় ছিলেন? যীশুর কাধে তুলে দেওয়া হলো মস্ত বড় এক ক্রুশ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেউকেউ করছিলেন ধিক্কার আর কেউ কেউ করছিলেন ক্রন্দন। দুর্বল শরীর নিয়ে যীশুখ্রীষ্ট এগিয়ে চলেছেন, পাথরের এভ্রো থেভ্রো রাস্তা দিয়ে। তার শরীরে ক্ষতের দাগ,গলগল করে রক্ত পরছে।কোথাও কোথাও রক্ত জমাট বেধে রয়েছে।মাথায় কাটার মুকুট দেওয়া।যেই কাঠের ক্রুশ বহন করতে পাচ জন লাগার কথা সেই ক্রুশ বহন করে একা একা পথ চলছিলেন স্বয়ং যীশু খ্রীষ্ট।কারন তিনি ছিলেন জীবন্ত ইশ্বরের পুত্র।শত শত পুরুষ তাকে অনুসরণ করছিলেন।কিন্ত শত শত পুরুষের মাঝে এক জন মাথা উঁচু করে প্রভুর যাতনাভোগ সহ্য করছিলেন,তিনি ছিলেন মেরী ম্যাগডেলিন।যীশু খ্রীষ্ট তাকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে ধৈর্য্য ধরতে হয়,কিভাবে কস্ট সহ্য করতে হয়।নিষ্ঠুর সেনাগন বর্শা দিয়ে আঘাত করছিল।চাবুক মারছিল।প্রতিটি আঘাত একজন কে বার বার স্পর্শ করছিল তিনি ছিলেন মেরী ম্যাগডেলিন। সময় দুপুর তিনটে।কালভেরী পর্বত।সৈন্যরা চারিদিক ঘিরে রেখেছে।যীশু খ্রীষ্ট তার ক্রুশটা নামিয়ে রাখলেন।তার শরীরে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই।যারা শরীর বেয়ে রক্ত পরছে।প্রচন্ড রোদে শুকিয়ে গেছে রক্তের দাগ।যীশুখ্রীষ্ট চারদিক টা দেখার চেস্টা করলেন। পারলেন না।পরে গেলেন পাথুরে মাটির উপরে।এবার সৈন্যরা চার হাত পা ধরে, শুইয়ে দিলেন প্রভুকে।কোন রকম প্রতিরোধ করার শক্তি ছিল না উনার। সেই মুহূর্তে উপস্থিত হলেন তিন জন, যোহন, মা মারীয়া আর মেরী ম্যাগডেলিন। সৈন্যরা প্রথমে যীশুর হাত পা বেধে ফেললেন। তারপর ঝোলা থেকে বের করল, বড় বড় লোহার পেরেক,আর লোহার হাতুড়ি। যীশু খ্রীষ্ট নিষ্প্রান চোখে চেয়ে রইলেন সেই দিকে।অশ্রু বেয়ে পরল চোখ দিয়ে।শুধু মাত্র যীশু খ্রীষ্টই নন। আরো দুই জন সেই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে অঝোরে কেদেছিলেন। একজন মা মারীয়া অন্য জন মেরী ম্যাগডেলিন। সৈন্যগন লোহার পেরেকের উপর হাতুরী দিয়ে আঘাত করছিল আর যীশু খ্রীষ্টের গগন বিদারী চিৎকারে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হচ্ছিল।পায়ের পাতার ঠিক উপরে গেথে দেওয়া হলো পেরেক।যীশুর চিৎকারে স্বয়ং ইশ্বর ও শুনতে পেলেন। ক্রুশের উপর থেকে যীশু বললেন,পিতা তুমি এদের ক্ষমা কর কারন এরা কি করছে তা জানে না।মা মারীয়া মাটিতে লুটিয়ে পরলেন।কোন মা,কি তার সন্তানের এই দশা সহ্য করতে পারে? শুধু একজন অবিচল হয়ে রইলো।

মেরী ম্যাগডেলিন।।।।

এবার আশা যাক যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুর পর কি ঘটেছিল।আর মেরী ম্যাগডেলিনই বা কি করছিলেন।যীশুকে ক্রুশ বিদ্ধ করার পর গেথে দেওয়া হল ক্রুশ টা মাটিতে। মাটিতে গাথার সময় আবার যীশু আবার চিংকার করে উঠলেন,এলি এলি লাবা সাবাক্তানী।ঈশ্বর আমার ঈশ্বর আমার কেন আমাকে পরিত্যাগ করছ।এই বলে যীশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলেন।সৈন্যরা যীশুর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য বর্শা দিয়ে বুকে আঘাত করলেন।এই দৃশ্য দেখে কেদে উঠলেন মেরী ম্যাগডেলিন।
রাত গড়িয়েছে।আকাশে চাঁদ উঠেছে।কালভেরীর শিয়াল গুলো ডেকে চলেছে।ঠিক সেই সময় ও একজন স্থির দাঁড়িয়ে ছিলেন। মেরী ম্যাগডেলিন।। আরিমাথিয়ার যোসেফ নামের একজন যীশুর দেহকে ক্রুশ থেকে নামালেন।। এই যোসেফ হচ্ছে,সেই ইহুদি পুরোহিত যিনি যীশুর মৃত্যুর বিরোধিতা করেছিলেন। যোসেফ এবং নিকোদামাস। তারা যীশুর দেহটাকে পরিষ্কার করে সাদা কাপড়ে জড়িয়ে এক গুহার ভিতর রেখে আসলেন। এবং বড় একটা পাথর দিয়ে মুখ ডেকে দিলেন।। যেন কেউ এই দেহ স্পর্শ করতে না পারে।শেষ বারের মত সেই মৃত দেহ টাকে দেখলেন, মেরী ম্যাগডেলিন।।

এবার আসা যাক,যীশুর পুনরুথান এবং মেরী ম্যাগডেলিনের ঘটনায়।।যেই গুহাতে যীশুকে রাখা হয়েছিল,যীশু সেই সমন্ধে আগেই ভবিষ্যৎ বানী করেছিলেন যে,তিনি তৃতীয় দিবসে মৃত্যদের মাঝে থেকে জীবিত হবেন।যীশুর শিষ্যরা সেই কথায় কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছিল জানি না।কিন্ত একজন খুবই গুরুত্ব দিয়েছিল। তিনি হলেন মেরী ম্যাগডেলিন। রবিবার দিন ভোর বেলায় তিনি যীশুর কবরের সামনে এসে হাজির হন।নিজের চোখকে তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।দেখলেন সেই বিশাল পাথর সরানো।যীশুর দেহ সেখানে নেই।ঠিক তখনই, সেই চেনা স্বরে একজন ডেকে উঠলেন নাম ধরে।মেরী।মেরী ম্যাগডেলিন পিছনে ফিরে তাকালেন,তিনি স্বয়ং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট।মেরী ম্যাগডেলিন প্রান ভরে যীশুকে দেখলেন। যীশু তাকে বললেন,যে,শিষ্যদেরকে যেন তার পুনরুথানের কথা বলা হয়।মেরী ছুটে যান জেরুজালেমে। সবাই কে জানালেন যীশু খ্রীষ্টের পুনরুথানের কাহিনী।।

৫৯০ খ্রীষ্টাব্দ। খ্রীষ্টান চার্চ তখন রাস্ট্রের চেয়ে বেশী শক্তিশালী। এর ভিতর রোমান সাম্রাজ্য খ্রীষ্টান চার্চকে মান্যতা দিতে শুরু করেছে।ততদিনে খ্রীষ্টান চার্চ জেরুজালেম থেকে স্থায়ী নিবাস স্থাপন করেছে রোমে। খ্রীষ্টান চার্চের প্রধান নিযুক্ত হলো পোপ।সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।অবশ্য এর জন্য কম কাঠ খোড়া পোড়াতে হয় নি চার্চকে। ৫৯১ সালের ইস্টারের দিন, সকাল বেলা।৩ রা সেপ্টেম্বর ৫৯০ খ্রীষ্টাব্দে যেই পোপ ক্যাথলিক মন্ডলীর দ্বায়িত্ব নিয়েছিলেন পোপ প্রথম গ্রেগরি ঘোষনা দিলেন যে, মেরী ম্যাগডেলিন ছিলেন একজন পতিতা।উনি যেই বিষয়টা নির্দেশ করে, এই ঘোষনা দিয়েছিলেন সেটা ছিল গসপেল অফ লুকের ১০ অধ্যায়ের ৩৯ তম পদ।
” এ রপর যীশু ও তাঁর শিষ্যরা জেরুশালেমের পথে যেতে যেতে কোন এক গ্রামে প্রবেশ করলেন। সেখানে মার্থা নামে একজন স্ত্রীলোক তাঁদের সাদর অভ্যর্থনা করলেন।
মরিয়ম নামে তাঁর একটি বোন ছিল, তিনি যীশুর পায়ের কাছে বসে তাঁর শিক্ষা শুনছিলেন।”

পোপ গ্রেগরী মনে করলেন কিংবা ইচ্ছাকৃত ভাবেই হোক না কেন উনি এই মেরী কে বানিয়ে দিলেন মেরী ম্যাগডেলিন। আর এই মেরীকে বানিয়ে পতিতা।
আসলে এই মেরী ছিল মেরী অফ বেথানী। আর আমি যার কথা লিখছি উনি ছিলেন মেরী অফ ম্যাগডেলা।যাই হোক পোপ বলে কথা।মিথ্যা বলুক আর ইচ্ছাকৃত ভুল বলুক ৫৯১ খ্রীষ্টাব্দের পর থেকে ২০১৬ সালের ইস্টার পর্যন্ত ক্যাথলিক চার্চ মেরী ম্যাগডেলিন কে পতিতা বলেই জানত। অবশেষে পোপ ফ্রান্সিস মেরী ম্যাগডেলিন কে সেই কলঙ্ক থেকে মুক্তি দিলেন। এবং স্বীকৃতি দিলেন, গসপেল অফ যুদাস এর ২৩ অধ্যায় ৩৮ থেকে ৩৯ তম পদ কে।”মেরী ওয়াজ দ্য আপোস্টল অফ অল আপোস্টলস “।।অবশ্য এই ধারনা ভাঙ্গতে শুরু করে ১৯৫৯ সালের পর থেকে। পোপ ষষ্ঠ পল ১৯৫৯ সালের ইস্টারের সকাল বেলা ঘোষনা করেন যে,মেরী ম্যাগডেলিন আর মেরী অফ বেথানী এক ব্যক্তি নন।অবশ্য এর জন্য বিভিন্ন ইতিহাসিক দলীল,বিশেষজ্ঞদের মত নিয়েই তিনি এই ঘোষনা দিয়েছিলেন।১৯৮২ সালে মেরী ম্যাগডেলিনকে ক্যাথলিক চার্চ সেন্ট বলে ঘোষিত করেন। শুধু ক্যাথলিক চার্চই নয়,ইস্টান অর্থডক্স চার্চ ও এই ঘোষনা দেন। এবং ২০১৬ সালের ২২ ই জুলাই মেরী ম্যাগডেলিন পেলেন সর্ব উৎকৃষ্ট স্বীকৃতি। পোপ ফ্রান্সিস ঘোষনা করলেন, মেরী ম্যাগডেলিন ওয়াজ আপোস্টল অফ অল দ্য অপোস্টল।আর প্রটেস্টান্ট চার্চ ঘোষনা দিলো যে,মেরী ম্যাগডেলিন, হিরোইন অফ দ্যা ফেইথ।

কেন মেরী ম্যাগডেলিন কে চার্চ বাধ্য হলো এই ঘোষনা দিতে তার কারন কি? কারন অবশ্যই একটা ছিল।পুরুষ শাসিত সমাজে মেয়েরে বরাবরই দ্বিতীয় লিঙ্গের মানুষ।চার্চে কোন মেয়ে যাজক থাকে না,বিশপ থাকে না।অথচ এখন যার কথা লিখতে চলছি,তিনি ছিলেন একটি চার্চের প্রধান। স্বয়ং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট চেয়েছেন নারী পুরুষের সমতা,সেখানে আমাদের চার্চ সেটা মাঝে মাঝে ভুলে যায়।এমন অনেক তথ্য প্রমান আছে,যেখানে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বার বার চাইতেন একজন নারী যেন একজন পুরুষের সমান অধিকার পায়। ৫৯১ সালের আগের ঘটনা, মেরী ম্যাগডেলিন তখন পতিতা বলে আখ্যায়িত হন নি।সেই সময় মেরী ম্যাগডেলিন কে অনুসরণ করে খ্রীষ্টধর্ম প্রচার করেছেন একজন নারী।তার নাম ছিল আকেপ্টাস।৩৯৫ খ্রীষ্টাব্দের দিকে ইস্রায়েলের উত্তর সীমান্তের এক গ্রামে পৌছান।জায়গাটার নাম ছিল কেফার ওতনেয়।যার বর্তমান নাম তেল মেদিগো।।আকেপ্টাসের সাথে সঙ্গী ছিলেনে বেশ কয়েকজন নারী।তারা সেই ঘন বসতিতে নির্ভয়ে প্রচার করলেন যীশু খ্রীষ্টের মহিমা।প্রথমে নানান বাধা বিপত্তির সম্মুখিন হলেও হাল ছেড়ে দেন নি আকেপ্টাস। তার ঐকান্তিক প্রচেস্টায় পাচ বছরের মধ্য গ্রামের সবাই ইহুদি ধর্ম ত্যাগ করে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করে।আর গ্রামের ইহুদী মন্দির হয়ে গেল খ্রীষ্টান চার্চ।তবে একটা কথা অনেকেরই অজানা প্রথম দিকে মাছ ছিল খ্রীষ্টানদের প্রতীক।সেই ইহুদী মন্দিরে স্থাপিত হল মাছ আকৃতির গীর্জা। আর সেই গীর্জায় প্রথম পুরোহিত হলেন আকেপ্টাস।।আর যীশুকে স্থান দিলেন সবার মাঝে,অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে,মেরী ম্যাগডেলিনের স্থান হলো যীশু খ্রীষ্টের ঠিক পাশে।।অন্য কোন শিষ্য নয় এমন কি পীটার ও নয়,মেরী ম্যাগডেলিন ঠিক পাশেই ছিলেন যীশুর।( কিভাবে এই চার্চের খোজ পাওয়া যায় কেউ জানতে আগ্রহী হলে মেসেঞ্জারে নক দিলে রেফারেন্স সহ দিতে পারব, লেখা বড় হচ্ছে বিধায়, লিখলাম না)

এবার আসি মেরী ম্যাগডেলিন কোথায় মৃত্যবরন করেছিল,সেই বিষয়ে।এই বিষয়টা ইতিহাসে দুই রকম মত পাওয়া যায়।একটা হলো- ক)ইস্টান ট্রেডিশনাল মতামত।খ)ফ্রেঞ্জ ট্রেডিশনাল মতামত।

ফ্রেঞ্জ ট্রেডিশনাল মতামত টা অনুমান নির্ভর এবং ড্যান ব্রাউনের মতামতের মত হওয়ায় লিখতে ইচ্ছে করছে না।তাই ইস্টার্ন ট্রেডিশনাল কি বলে সেটা লেখার চেস্টা করছি।এই মতামত টা আমার কাছে বেশী গ্রহনযোগ্য মনে হয়েছে।এবং ক্যাথলিক চার্চ এতেই বিশ্বাস করে।ক্যাথলিক চার্চ বিশ্বাস করে,মা মারীয়ায় মৃত্যু হয় নি।উনাকে স্বর্গে তুলে নেওয়া হয়েছে।আমিও তাই বিশ্বাস করি।ইউটিউবে সার্চ দিলে অনেক ভিডিও পাওয়া যায় যে তুরুস্কে নাকি মা মারীয়ার কবরস্থান আছে।আসলেই কি তাই? এই প্রশ্নের উওর খুজতে যেতে হবে,তুরুস্কের পশ্চিমে একটি ছোট শহর সেলচ্যুকে।মেরী ম্যাগডেলিন কে খুজতে যেতে হবে এই শহরেই।যীশু খ্রীষ্টের পুনরুথানের পরের ঘটনা। রোমান সাম্রাজ্যের সাথে সেন্ট পিটার ভালোই মিলেমিশে যায়।বিশেষ করে যুদেয়া অঞ্চলের গর্ভনরের সাথে। কিন্ত এই মিলমিশটা মেরী ম্যাগডেলিনের জন্য সুখবর ছিল না।মেরী ম্যাগডেলিন আর যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য সাধু যোহন তখন আত্নগোপনে চলে যায়।সাথে তাদের অনুগামী অনেকে।তারা প্রথমে পালিয়ে যান মিশরে । সেখান থেকে যীশু খ্রীষ্টের বানী প্রচার শুরু করলেন। কিন্ত তত দিনে রোমান সম্রাজ্য মিশর দখল করে নিয়েছে।মেরী ম্যাগডেলিন আর যোহনের কথা যখন রোমান গর্ভনর জানতে পারলো তখন তাদের ধরার জন্য লোক পাঠানো হলো।বাধ্য হয়ে তখন মেরী ম্যাগডেলিন আর যোহনকে চলে যেতে হয় তুরস্কে।বাকী শিষ্যরা মিশরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইলেন। মেরী ম্যাগডেলিন আর সেন্ট জন পালিয়ে চলে আসলেন এফেসাস নামে একটি জায়গায়।যা সেলচ্যুক শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে।এখানে তারা স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে থাকে।তবে বলে রাখা ভালো,এখানে প্রচলিত দুই ধরনের কথা আছে।এক, তারা দুই জন আসলেই স্বামী স্ত্রী ছিলেন।এবং তাদের একটি মেয়ে সন্তান ও হয়। তার নাম রাখা হয় সারা।তবে এই গুলো প্রচলিত কাহিনী। কোন এভিডেন্স নাই।কিন্ত ড্যান ব্রাউন সাহেব সেই কন্যা সন্তানকে যীশুর বংশধর বানিয়ে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে নিয়েছেন।এফেসাস শহরে, প্রাচীন ধবংসাবশেষর মধ্যে এখনো আছে,লাইব্রেরি অফ সেলসাস,ট্যাম্পেল অফ আর্তেমিশ আর রয়েছে,হাউজ অফ মেরী ম্যাগডেলিন। আর এই এফেসাসেই মৃত্যু হয় ইতিহাসের এক রহস্য ময় চরিত্রের।।

মেরী ম্যাগডেলিন।।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *