আজ খুব সম্ভবত,সূর্য গ্রহন হয়েছে।সকাল বেলা অফিসে পৌছানোর পর দেখলাম, বিরাট সভা বসেছে,এই সূর্য গ্রহনের সময় কি করা যাবে,কি না করা যাবে।একজন বিজ্ঞের মত বলছে,গর্ভবতী মেয়েদের মাছ কাটা যাবে না,আজকে কোন ভাবেই ঘর হতে বের হওয়া যাবে না,সূর্যের দিকে তাকানো যাবে না।সূর্যগ্রহনের সময় ঘুমানো যাবে না,কিংবা ঘুমালে উঠা যাবে না।বাপরে বাপ,বিশাল এক কান্ড কারখানা।বরাবরই মতই আমি এই সমস্ত কুসংস্কার বিশ্বাস করি না।আমাদের সমাজেও এই ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত আছে।কোন শিশু জন্মনিলে পায়ে আগুনের তাপ নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা যাবে না,জোড় কলা খাওয়া যাবে না অবিবাহিতদের,পরীক্ষার আগে ডিম খাওয়া যাবে না।আমি কোন কালেই এই সমস্ত কুসংস্কার এ বিশ্বাস করি নি, করব বলেও মনে হয় না।আজকের ঘটনায়, সবার সামনেই বলে ফেলছি যে,এই গুলা ফালতু ধ্যান ধারনা।কারন ইউরোপ, আমেরিকাতে, ইসরাইলে তো এরা এইগুলো মানে না।তাহলে ওরা কেন এত উন্নত। ওদের তো, এই বুঝুং বাঝুং করা লাগে না।ওরা পারলে বাঙ্গালী কেন পারে না।যাই হোক,যেহেতু ইসরাইলের কথা বলেছি,এদের নিয়েই আজকের লেখা।

ইসরায়েলের জন্ম থেকে শুরু করে, আজ পর্যন্ত ইসরায়েলের কিচ্ছা কাহিনী সংক্ষিপ্ত আকারে লেখার চেস্টা করেছি,আগ্রহী গন পড়ে নিতে পারেন।লিংক নিচে দিয়ে দিয়েছি।ইসরাইল রাস্ট্র গঠনে যিনি সবচেয়ে বড় ভুমিক পালন করেন, তার নাম ছিল,চেইম উইজম্যান নামের একজন ইহুদী বংশভুত ব্রিটিশ নাগরিক। উনি ১৯১৬ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ এডমিরাল্টির গবেষণাগারে নিয়োজিত ছিলেন।এই লোকটার কারনে ব্রিটেন ইহুদী রাস্ট্র ঘোষনা দিতে বাধ্য হয়। চেইম উইজম্যানের বিষ্ফোরকের কারনে ব্রিটেন জিতে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। অটোম্যান শাসন আমলে থেকে প্যালেস্টাইন ছিল অনুন্নত অঞ্চল এবং অনুর্বর। কিন্ত বেলফোর ঘোষনার পর ইহুদীরা দলে দলে নিজ ভুমিতে ফিরতে শুরু করে।এবং চড়া দামে ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে জমি কিনতে শুরু করে।আর লোভী ফিলিস্তিরা চড়া দাম পেয়ে সেই জমি বিক্রি করতে শুরু করে। এই জমি গুলোতে ইহুদিরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসল ফলাতে শুরু করে।আর শিল্প কারখানা গড়ে তোলে। উইজন্টন চার্চিল এর বেলফোর ঘোষনার পরও উইজন্টন চার্চিল এই ঘোষনা বাস্তবায়ন করে নি। উনি প্যালেস্টাইন থেকে জর্ডানকে বাদ দেন আর জর্দান নদীর পূর্বের ৭৬% শতাংশ আরবদের আর পশ্চিম দিকের ২৪ % ইস্রায়েল কে দেওয়া হয়। এই অসম বন্টন ও কিন্ত ইহুদীরা মেনে নেয়। ২৪ % কেন ইহুদীকে কেন দেওয়া হয়েছে এই বিষয়টি আরবরা মেনে নেয় নি। ১৯২০ থেকে ২১ এ বারবার ইহুদীদের আক্রমণ করে।এবং অর্ধ শতাধিক ইহুদিকে হত্যা করা হয়। এই থেকে ইহুদিরা আত্নরক্ষার স্বীধান্ত নেয়। আর এই কারনে ইহুদী আর আরবদের অনেক গুলো দাংগা হয়। ১৯২৯ সাল পর্যন্ত এই দাংগা গুলো সংঘোটিত হয়ে থাকে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর, দলে দলে ইহুদিরা আমেরিকা,ইউরোপ থেকে আসা শুরু করে।আর আরবদের সাথে ইহুদিদের দাংগার পরিমান বাড়তে থাকে। তার জাতি সংঘ এই দুই জাতীর জন্য দুইটা রাস্ট্র বানানোর ঘোষনা দেয়। সবাই এই স্বীধান্ত মেনে নিলেও মাথামোটা আরবরা সেটা মেনে নেয় নি। ১৯৪৮ সালে ১৪ ই মে ইহুদি রাস্ট্র গঠন করা হয় আর ঠিক এই রাস্ট্র ঘোষনার এক ঘন্টা পরে আরবরা ইস্রায়েল আক্রমণ করে। কিন্ত এমন গো হারা আরবরা হারছে যে জাতিসংঘ যে ভুমি ইস্রায়েল কে দিয়েছিল, ইস্রায়েল সেটার থেকে বেশী জায়গা দখল করে নেয়,এবং ইস্রায়েলের সীমানা বৃদ্ধি করে ফেলে।

এর মাস্টার মাইন্ড ছিল ইস্রায়েলের প্রধান মন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিওন।এইবার আরবদের আম ও গেলে ছালাও গেলে। ওই দিন যদি আরবরা সেই প্রস্তাব মেনে যুদ্ধ না করত তাহলে আজ ফিলিস্তিনিদের এই অবস্থা হত না।বেজ্ঞামিন নেতাইয়ানহু, প্রায়ই বলে ভুল আরব রা করেছে,তাই তারা খেসারত দিচ্ছে।ইস্রায়েল সেই ভুল করবে না। ১৯৪৮ সালের ক্ষত মুছতে ১৯৬৭ সালে আবার আরব রা ইস্রায়েল আক্রমণ করে। মিশর, জডার্ন,সিরিয়া। এই যুদ্ধে ইস্রায়েল বিমান বাহিনীর কাছে খুব চরম ভাবে হারে আরবরা। মাত্র ৬ দিনে হেরে বিড়ালের মত লেজ গুটিয়ে পালায় আরবরা। আর ইস্রায়েল, সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান মাল ভুমি আর মিশরের সিনাই পর্বত আর গাজা দখল করে নেয়।আর এভাবে ইসরায়েলের আয়তন বাড়তে থাকে।

এতো গেল জন্মকাহিনী।আপনি কখনো কি ভেবে দেখেছে,ইসরাইল কোন খেলাধুলাতে কেন এত পিছিয়ে।না ফুটবল না ক্রিকেট কিংবা অলিম্পিক।দরাজায় করা নাড়ছে,বিশ্বকাপ ফুটবল। সেই বিশ্বকাপে ১৯৭০ সালে একবার বিশ্বকাপ খেলতে পেরেছিল ইসরায়েল।এশিয়ার হয়ে খেলেছিল সেবার। বর্তমানে ফুটবল র‍্যাংকিং এ এই দলের অবস্থান ৭৬ তম। শত বছরের প্রাচীন অলিম্পিক এ ইসরায়েল মোট পদক পেয়েছে মাত্র ১৩ টি।যার মধ্যে ৩ টা স্বর্ন পদক,একটি রোপ্য পদক আর ৯ টি বোঞ্চ। এখানে ও এই মেধাবী জাতী মেধার সক্ষমতা কম দেখতে পাচ্ছি।এবার আসি, ক্রিকেট নিয়ে।আই সি সি র ক্রিকেট র‍্যাংকিং এ ইস্রায়েলের অবস্থান ৬১ তম।ইস্রায়েলে যারা ক্রিকেট খেলে তারা অন্য দেশ থেকে গিয়ে খেলে।এত সময় সাপেক্ষ খেলা ইস্রায়েল মনে হয় না পছন্দ করে।গোটা দুনিয়া যখন ফুটবল নিয়ে খেলায় মত্ত,তখন ইস্রায়েল গোটা দুনিয়াকে নিয়েই খেলছে।

নোবেল পুরুষ্কার পাওয়া, সবচেয়ে গর্ভের একটা বিষয়। এই পর্যন্ত ৯৩০ জন এই পুরুষ্কারে ভূষিত হয়েছে।এর মধ্যে ২০৮ জন ই ইহুদি। মোট পার্সেন্টেস অনুযায়ী ২২.৪ %। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার. ২০% হলো ইহুদী। যদি আমরা ধর্মের ভিত্তিতে নোবেল পুরুষ্কার দেখি,তাহলে ৬৫.৪% খ্রীষ্টান, ২১.১% ইহুদি,১০.৫% নাস্তিক, বুডিস্ট ১.১%,মুসলিম০.৮% হিন্দু ০.৭%.এই তথ্যটা ১৯০১- ২০০০ সাল পর্যন্ত।এখন ইহুদীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে।রয়াসনে ৩৬ জন ইহুদী যা মোট রসায়নে জয়ীদের ১৯% অর্থনীতিতে ৩৭ জন যা মোট জয়ীদের ৪০%,সাহিত্যে ১৬ জন যা মোট জয়ীদের ১৩%,শান্তিতে ৯ জন যা মোট জয়ীদের ৮%।পদার্থে ৫৬ জন যা মোট জয়ী দের ২৫% আর চিকিৎসা শাস্ত্রে ৫৮ জন যা মোট জয়ীদের ২৬%। কি বুঝলেন? বললাম না গোটা দুনিয়া যখন এক ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত তখন ইস্রায়েল গোটা দুনিয়াকেই ফুটবল বানিয়ে খেলছে।

জাপানের কোয়াটো পুরুষ্কারের ২৩% জয়ী ইহুদীরা, আমেরিকান ন্যাশনাল মেডেল অফ সায়েন্সে ৩৫ % ইহুদিরা জয়ী।ফ্রান্স একাডেমি অফ সায়েন্স ৪৮% ইহুদীরা জয় লাভ করেছে,ব্রিটিশ রয়েল সোসাইটির ২৬% পদক ইহুদিদের।জ্ঞান, বিজ্ঞানে ইহুদিরা ব্যাপক এগিয়ে গেলেও, কোথাও কোন ধর্ষন হলে আমরা ইহুদীদের ষড়যন্ত্র খুজে বেড়াই।ইহুদীদের খেয়ে তো আর কাজ নাই।কোথায় কোন ধর্ষন হলো, কে ৫০১ নাম্বার রুমে গিয়ে ধরা খেল সব তাদের চক্রান্ত?

ইউক্রেনের প্রসিডেন্ট জেলোনোস্কি তিনিও একজন ইহুদি,এই লোকটাকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কত অনুরোধ করেছিলেন, উনি নিজ দেশ থেকে চলে যান নি। রাশিয়ার মত একটা দেশকে রীতিমত নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছেন।যুদ্ধের নয় মাস পর পুতিন কাকু এখন দিশেহারা হয়ে গেছে,একা হয়ে গেছেন তিনি।জেলেনেস্কির দেশ প্রেম রীতিমতো আমাকে মুগ্ধ করেছে।আলবার্ট আইস্টাইন, উনি কে ছিলেন? একজন ইহুদী।সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের মাঝে তিনি একজন। আপনি গুগলে কস্ট করে একটু সার্চ করে দেখুন। টপ সায়েন্টিস্টদের মধ্যে কত জন ইহুদী পান।অবাক হয়ে যাবেন। আরো অনেক কিছু লেখা যেত।লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে,তাই আর না লিখি।

আসলে, আমরা এই গুলো দেখে কি করব,আমরা না হয় চিন্তা করি সূর্যগ্রহনের সময় ঘুমানো যাবে কিনা।মাছের মাথা কাটা যাবে কিনা।আর বিজ্ঞান নিয়ে, প্রযুক্তি নিয়ে চিন্তা না হয় ইহুদীরাই করুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *