এক ধরনের শিরোনামে লিখতে হচ্ছে,কারনটা যেহেতু সত্য, তাই।সত্য কথা না হয়, অপ্রিয় ই হোক। আমার চার্চের নাম তুমিলিয়া সাধু যোহনের ধর্মপল্লী। তুমিলিয়াতে কিভাবে খ্রীষ্টধর্মের বিস্তার লাভ করেছে, সেটা জানার আগ্রহ অনেক দিনের ছিল। ছোট বেলায় পুরাতন গীর্জায় যাওয়া আসা করতাম।গীর্জার বাউন্ডারীর ভিতরে প্রাইমারী স্কুলে পড়তাম। সবই এখন স্মৃতি। আমাকে এখনো সেই পুরাতন চার্চটা অনেক কিছু মনে করিয়ে দেয়।কিন্ত তুমিলিয়াতে কিভাবে চার্চ আসলো?কেন আসল?অনেকের মতই এই ইতিহাস আমার ও অজানা ছিল।বর্তমানে তথ্যের সহজলভ্যতার কারনে অনেক কিছুই জানা যায়।
তুমিলিয়া ধর্মপল্লী আসলে নাগরী ধর্মপল্লীর একটা অংশ। এবং এই অঞ্চলের খ্রীষ্ট ধর্ম যার মাধ্যমে প্রসার লাভ করেছিল, তার নাম আমাদের ভাওয়াল অঞ্চলের ৯০% লোক ই জানে না।এই লোক না থাকলে এই অঞ্চলে এত খ্রীষ্টান থাকত না।দোম আন্তনী ডি রোজারিও। এই লোক না থাকলে এত বিশাল এলাকা জুড়ে খ্রিস্টানদের বসবাস থাকত না।অথচ আমরা
এমনই এক অকৃতজ্ঞ যে, উনার নামে একটা চায়ের দোকানও স্থাপন করতে পারি নি, এই চারশ বছরে।অথচ এই লোকটা আমাদের খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করার জন্য শায়েস্তা খার আমলে জেলে পর্যন্ত গিয়েছিল।দুই বছরে ৩০ হাজার মানুষকে খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করেছিল।বাংলা ভাষায় তিনি একটি গ্রন্থ ও রচনা করেন,ব্রাহ্মণ ক্যাথলিক সংবাদ এই নামে।এই অমীমাংসিত চরিত্রটিকে নিয়ে অবশ্যই এই দিন লিখবো।
যাই হোক,যে কথা বলছিলাম,এই ভাওয়াল অঞ্চলে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে দুই যাজক সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক বাক বিতন্ডা হয়েছে।এমন কি পোপের আদেশ কেও মান্য করা হয়নি। কোন দিন সময় হলে এই ইতিহাস লেখারও ইচ্ছে আছে।তুমিলিয়া ধর্মপল্লীর অধিকাংশ জমি যার নামে ছিল তার নাম ছিল রবাট দূস্যে।অতিরিক্ত মদ্যপান এবং খ্রীষ্টিয় রীতিনীতি না মানার কারনে উনাকে ততকালীন নাগরী ধর্মপল্লীর অন্তর্ভুক্ত পর্তুগীজ ফাদার উনাকে খ্রীষ্ট প্রসাদ দিতে অস্বীকার করেন। উনি এমন একটা সুযোগের জন্য ছিলেন যে,উনাকে এই অপমানের বদলা নিতে সুযোগ করে দেয়।
সেই সু্যোগ উনার এসে গিয়েছিল ১৮৩৫ সালের বড়দিনের গীর্জার সময়। আমাদের, ভাওয়াল অঞ্চলের লোকদের ভুলে গেলে চলবে না যে,আমরা নিম্ন হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হওয়া খ্রীষ্টান।আমাদের শরীরে, মুচি মেথর, কামার, কুমারের রক্ত বইছে।তবে এও সত্য আমাদের পূর্ব পুরুষেরা ভালোবেসেই খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করেছিল। এই কারনে অনেক নিজ ধর্মে ফেরত গেলেও আমাদের পূর্বপুরুষেরা যায় নি।এই কারনে আজো আমরা খ্রীষ্টান থাকতে পেরেছি।১৮৩৫ সালে এক সন্ধ্যায়, তুমিলিয়া এবং রাঙ্গামাটিয়ার অনেক মানুষ মদ্যপ অবস্থায় নাগরী ধর্মপল্লীতে নিশি খ্রীষ্টযাগে অংশ গ্রহন করে। কিন্ত যেহেতু মদ্যপদের খ্রীষ্ট প্রসাদ করা উচিত না, সেহেতু ততকালীন পর্তুগীজ ফাদার এই অঞ্চলের মানুষ জনকে খ্রীষ্ট প্রসাদ দিতে অস্বীকার করে। এতে করে চরম অপমানিত হয় এই অঞ্চলের মানুষ।এবং তারা মোটামুটি একধরনের বিদ্রোহ করে।এবং নাগরী ধর্মপল্লী থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছিলেন।তাদের এই কর্মকান্ডের পালে হাওয়া লাগায় সেই পর্তুগীজ ভূ স্বামী রবাট দ্যুসে।লোকেরা তার কাছে গেলে তিনি আগুনে ঘি ঢেলে দেন।তিনি তখন কলিকাতার আপস্টলকের কাছে চিঠি লিখে তুমিলিয়ার জন্য ফাদার চান।আপস্টলক তার ডাকে সারা দিয়ে ১৮৩৬ সালে পহেলা জুলাই হিপোলাইট নামক এক জেজুইট ফাদার কে তুমিলিয়ার জন্য পাঠান।এবং একদিন রাত ১০ টার সময় ৪০ জন তুমিলিয়া এবং রাঙ্গামাটিয়ায় মাতব্বর শ্রেনীর লোকের সাথে কথা বলেন। ফাদার তাদের কথা দেন তিনি তাদের ছেড়ে যাবেন না। ১৮৩৬ সালের বড়দিনের দিন তুমিলিয়াতে একটি ছনের গীর্জাতে ফাদার প্রথম তুমিলিয়া এবং রাঙ্গামাটি বাসীর জন্য প্রথম খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করেন।
তবে ১৮৩৭ সালে এই তুমিলিয়া এবং রাঙ্গামাটিয়াকে আবারো নাগরী ধর্মপল্লীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।১৮৪৪ সাল পর্যন্ত তুমিলিয়াতে কোন ফাদার আর খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করেন নি।সেই সময় এই অঞ্চলে প্রায় দুই হাজার খ্রীষ্টানের বাস ছিল।এই বিপুল সংখ্যক খ্রীষ্টানদের জন্য স্থায়ী চার্চ করার জন্য রবাট দুস্যে ১৮৪৪ সালে ১৩ বিঘা জমি দান করেন। এবং সেখানে একটি চার্চ নির্মিত হয়। ১৮৬৪ সালে সেই চার্চে প্রচন্ড ঝড়ের কবলে পরে ধবংশ হয়। পরে তা আবার নির্মান করা হয়। এখানে আরেকটি তথ্য দেওয়া উচিত, একটা সময়ে পারারটেক আর আরাগাও তুমিলিয়া ধর্মপল্লী অধীনে ছিল আর দড়িপাড়া ছিল নাগরী ধর্মপল্লীর অধীনে।১৯৫১ সালে পাড়ারটেক এবং আরাগাওকে নাগরীর নিকট এবং দড়িপাড়াকে তুমিলিয়ার নিকট হস্তান্তর করা হয়। এখানে এও বলে রাখা ভাল সাতানী, রাজনগর, এবং দেউলিয়া এই তিন গ্রাম ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তুমিলিয়ার অধীনে ছিল।১৯৫৫ সালে যা রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
১.ফাদার আলবার্ট রোজারিও- বাংলাদেশে খ্রীষ্টধর্ম ও খ্রীষ্ট মন্ডলীর কথা।
২.লুইস প্রভাত সরকার -বংগদেশে খ্রীষ্টধর্ম ও খ্রীষ্টিয় সম্প্রদায়।
৩.ফাদার দিলীপ এস কস্তা – বাংলাদেশের খ্রীষ্ট মন্ডলীর পরিচিতি।
৪.শ্রী তারাপদ মুখোপাধ্যায় -ইতিহাসে উপেক্ষিত।
৫.জেরম ডি কস্তা -বাংলাদেশে ক্যাথলিক মন্ডলী।
৬.যোয়েল সামুয়েল কোড়াইয়া