বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস কোন টি? এখানে একটা টুইস্ট আছে।আপনাকে যদি বলা হয় প্রথম উপন্যাস, তাহলে হবে প্যারী চাঁদ মিত্রের, আলালের ঘরে দুলাল আর যদি জিজ্ঞেস করা হয় প্রথম সার্থক উপন্যাস তাহলে হবে দুর্গেশ নন্দিনী – বঙ্কিমচন্দ্রের। ঠিক যেমন টা বাংলার সর্বশেষ স্বাধীন নবাব কে – সিরাজ উদ্দোলাহ, আবার সর্বশেষ নবাব কে তখন হবে নিজামোউদ্দোহ।। যাই হোক, আজকে যাকে নিয়ে আলাপ করব তিনি হচ্ছেন, বাংলা সাহিত্যে দাবী করা প্রথম উপন্যাসিক হতে পারতেন। উপন্যাসের সাইজ এবং অনান্য কিছু কারন থাকার কারনে উনার নামটা ও বাংলা সাহিত্যে উল্লেখ্য করা হয় না।।বাংলা সাহিত্য যদি একজন বহিরাগত কে মেনে নিতো তাহলে বোধ করি বাংলা সাহিত্যের আহামরি তেমন কোন ক্ষতি হতো না। ফুল মনি ও করুনার বিবরন নামের যে উপন্যাস উনি লিখেছিলেন সেটাই হয়ত প্রথম উপন্যাস হতো।।

হ্যানা ক্যাথরিন মূলেন্স, কলিকাতায় জন্মগ্রহন করেন। উনার জন্মসাল, তারিখ নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তী আছে।তবে পহেলা জুলাই ১৮২৬ সালে জন্ম তারিখটা আমার কাছে বেশী গ্রহনযোগ্য বলে মনে হয়। উনার বাবা এবং মা দুই জনই এই উপমহাদেশে এসেছিলেন খ্রীষ্টবানী প্রচার জন্য।যদিও উনার মা ডাচ কোলনীর বাসিন্দা ছিলেন। মূলত, উনার বাবা প্রটেস্টাইন মিশনারী ছিলেন, লন্ডন মিশনারী সোসাইটির হয়ে এই উপমহাদেশে কাজ করতে এসেছিলেন। হ্যানা ক্যাথরিন মূলত, বাবা মার পথ ধরেই এই বাংলায় বানী প্রচার করেছেন। উনার যে লেখা, যেটাকে প্রথম উপন্যাস হিসেবে দাবী করা হয় সেটাও অনেক টা খ্রীষ্টানীটি নিয়েই।। হ্যানা ক্যাথরিন খুব কম বয়সেই বাংলা শিখেছেলন এবং মোটামুটি বাংলা পান্ডিত্য ছিল উনার।। শুধু মাত্র যে বাংলায় পারদর্শী ছিলেন ব্যাপারটা এমন না, এই বাংলায় মিশে যাবার জন্য সংস্কৃতের মত কঠিন ভাষা ও আয়ত্ব করেন। তিনি যে ভাবেই হোক,সত্যি কথা বলতে কি খ্রীষ্ট ধর্মের মাহাত্ন্য প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। অত্যন্ত পক্ষে উনার লেখায় আমার সেটাই মনে হয়েছে। হ্যানা ক্যাথরিন এর একটি সৌভাগ্য ছিল যে,১৮৪৫ সালে উনার যার সাথে বিয়ে হয় – যোসেফ মূলেন্স উনিও একজন মিশনারীই ছিলেন।এমন কি ১৮৫৫ সালে প্রথম বাংলা মিশনারী কনফারেন্স হয় যেখানে রেভারেন্ড জন ফরডিস নামে একজন হ্যানা ক্যাথরিন কে মহিলাদের মাঝে বিশেষ করে হিন্দু বিধবা এবং মেয়েদের মাঝে বানী প্রচার জন্য বিশেষ ভাবে মনোনীত করেছিলেন।ততকালীন হিন্দু মেয়েদের কাছে, ভারতীয় খ্রীষ্টানদে কাছে উনি পরিচিত ছিলেব বাইবেল ওমেন নামে। হ্যানা ক্যাথরিন, ১২ বছর বয়সেই বাংলা ভাষা রপ্ত করে। এমন কি উনি নিজের ফরম্যাল শিক্ষা সেটা বাংলায় ই নিয়েছিলেন। তিনি এত টাই বাংলায় পারদর্শী ছিলেন যে মাত্র ১২ বছর বয়সে ভবানীপুরে মিশন স্কুলে রীতিমতো বাংলা শিক্ষার ক্লাস নিতেন।।

১৮৪১ সালে , ১৫ বছর বয়সে তিনি মিশনারী শিক্ষা নেবার জন্য, লন্ডন পাড়ি জমান।। সেখান থেকে ফিরে আসার পর উনি যোসেফ মূলেন্স কে বিয়ে করেন, এবং চার সন্তানের জননী হন। ফুলমনি ও করুনার বিবরন,এটি মূল একটি খ্রীষ্টান পরিবারের খ্রীষ্টিয় ধ্যান ধারনা জীবন যাপনের উপর লিখিত একটি উপন্যাস।আমার কাছে যে পি ডি এফ আছে, তাতে পৃষ্টা সংখ্যা ২১৮ কিন্ত মূল বইয়ের পৃষ্টা ৯৮।। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ৫ বছর আগে ১৮৫২ সালে ফুলমনি ও করুনার বিবরন এই উপন্যাস প্রকাশিত হয়। তিন হাজার বই ছাপানো হয় এবং পরবর্তীতে ১২ টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।। আমেরিকান মেসিগ্যান লাইবেরীতে ইংরেজী ভার্সনটি বইটি সংরক্ষন করা হয় ১৮৬৫ সালে।। যাই হোক,বইটিকে বাংলাভাষায় স্বীকৃতি দেওয়া হয় না,প্রথম উপন্যাস হিসেবে। এটিকে বাদ দেওয়া হয়েছে,উপনাসের লেন্থ বিবেচনায় এবং এই যুক্তি দেখানো হয়েছে যে,এটি একটি ইংরেজী গল্পের ছায়া গল্প হিসেবে।। তবে আমার কাছে বইটি পড়ার পর মনে হলো,উনি যে মতাদর্শে বিশ্বাস করেন, সেই মতাদর্শ তুলে ধরে যদি কিছু লেখেন তাহলে সেটিকে নিচ্ছক ছায়া গল্প হিসেবে বাদ দেওয়া,অনেক টা অন্যায়।।যাই হোক, খ্রীষ্টানদের অনেক অবদানই এই ভারতীয় উপমহাদেশে স্বীকার করা হয় না। অথচ এই অঞ্চলের শুধু মাত্র শিক্ষা ক্ষেত্রে এখনো যে অবদান রেখে গেছেন খ্রীষ্টানরা তা,এত সহজে মানুষ ভুলে কি ভাবে?

One thought on “হ্যানা ক্যাথরিন মূলেন্স – খ্রীষ্টান হওয়াই কি বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাসিক স্বীকৃতি পান নি?”
  1. উপযুক্ত বিষয় নির্বাচন। ভালো লাগলো জানতে পারার সুযোগ লাভ করে। ধন্যবাদ এমন জানার সুযোগ সৃষ্টির কর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *