হায়া সোফিয়া নিয়ে, লিখতে বলল এক ছোট ভাই।আসলে এই বিষয় টা নিয়ে আমাদের খ্রিষ্টান সমাজ কেন জানি কথা বলতে বিব্রত হয় অথবা ভয় পায়। আরে ভাই, হায়া সোফিয়া খ্রিষ্টানদের এবং শুধুই খ্রিস্টানদের। হায়া সোফিয়া কোন কালেই বিক্রি হয় নি। যারা এই ধরনের অপ প্রাচার চালায় তাদের ইতিহাস বিকৃতি করার স্বভাব। হায়া সোফিয়া এক নির্মম, হৃদয় বিধারক কাহিনীর মাধ্যমে দখল করা হয়। কোন কালেই তা ক্র‍য় করা হয়নি।খ্রিস্টান দের চার্চ বিক্রি হয়, হায়া সোফিয়া ও বিক্রি হয়েছিল। এই সমস্ত ফালতু খোড়া, গাজাখুড়ি কথাবার্তা বিশ্বাস করবেন না। হায়া সোফিয়ার ইতিহাস, না হয় নাই বললাম। শুধু মাত্র দখল কিভাবে হয়েছিল সেটা বলি। হায়া সোফিয়া মূলত একটা অর্থডক্স দের গীর্জা।এই গীর্জার নির্মান কাজ শুরু হয় ৫৩২ খ্রীস্টাব্দে।বাইজান্টাইনদের সম্রাট প্রথম জাস্টিয়ান আদেশে এর নির্মান কাজ শুরু হয়।

এটি ছিল মুলত কনস্টান্টিনোপল বা বাইজেন্টাইনদের রাজধানী। ভূমধ্যসাগর এর আশে পাশে এলাকা থেকে মোজাইক, মার্বেল পাথর এনে এর মেঝে আর পিলার নির্মান করে প্রকৌশলীরা। হায়া সোফিয়া অর্থডক্স খ্রিষ্টানদের প্রধান কার্যালয় এবং উপাশনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হত। বাইজেন্টাইনদের বিয়ে, অভিষেক, শব যাত্রা এখান থেকেই হতো।এবার আসি মুল কথায়। ১৪৫৩ সালের ১৪ ই মে কনস্টান্টিনোপল আক্রমন করে দ্বিতীয় সুলতান মেহেমুদ। অটোম্যানদের কাছে পরাজিত হয় বাইজেন্টাইন রা। এবং সুলতান মেহমুদ হায়া সোফিয়ার ভিতরে নামাজ এবং খুতবা আদায় করেন। এবং তিনি তার সৈন্যবাহিনীকে (লুটেরা বাহিনী) কে বিজিত দের ধন সম্পদ লুট করার নির্দেশ দেন। এবং তিন দিন তার সৈন্য রা বাইজেন্টাইন সম্রাজ্য লুট করে।এবং তিন দিন পর সুলতান মেহেমুদ বাকী সম্পদের মালিক হোন। সুলতান মেহমুদের সৈন্য রা যত অর্থডক্স গীর্জা ছিল সেগুলাতে লূতরাজ চালায়। মেয়েদের কে যৌন দাসী হিসেবে বন্ধী করা হয়। পুরুষদের হত্যা করা হয়। শিশুদের কে দাস হিসেবে বিক্রি করা হয়।হায়া সোফিয়াকে সর্বশেষ আক্রমন করা হয়। কারন সুলতান মেহেমুদের ধারনা ছিল হায়া সোফিয়া হচ্ছে সম্পদের আধার।

তার সৈন্যরা হায়া সোফিয়ার প্রধান দরজা ভেংগে চালায় অন্তিম লুট তরাজ। হায়া সোফিয়ার ভিতরে তখন আটকে পড়েছিল অনেক পুরোহিত। তারা প্রার্থনা করছিল। তাদের সাথে সুলতান মেহেমুদের কাছ থেকে বাচতে অনেক মানুষ আশ্র‍য় নিয়েছিল। বিশেষ করে নারী,শিশু এবং বয়স্ক রা।গীর্জার ভিতরে যখন আক্রমন হয়, তখন বৃদ্ধদের কে হত্যা করা হয়। শিশুদের বন্ধি করা হয় আর মহিলাদের কে যৌন দাসী হিসেবে ভোগ করা হয়।যখন এই হত্যাযজ্ঞ চলছিল তখন পুরোহিত রা তাদের খ্রীষ্টযাগ চালিয়ে যাচ্ছিলো। তাদের ভিতর অনেক কে হত্যা করা হয়।আরেক টা ঘটনা না বললেই নয়, একটি মেয়েকে বেদির উপরে,তার বাবা মার সামনে ধর্ষন করা হয়।এবং ধর্ষন এর পর তাকে হত্যা করা হয়। ম্যাথিয়াস ডারিং, লিওনার্দো বেনভোগিয়েন্ট, ফিলিপ্পো দা রমনী ওনাদের গবেষনায় এই ধরনের আরো কাহিনী উঠে এসেছে।

বলতে জানি কেমন ঘৃন ঘৃন লাগছে, তাই অন্য কাহিনী গুলা বললাম না। আক্রমনের পর সুলতান মেহেমুদের এক সাহাবী যার নাম ছিল ওলামা তিনি হায়া সোফিয়ায় চুড়ায় উঠে আজান দেন। আর এই ভাবেই হায়া সোফিয়া মসজিদে পরিনত হয়। কোন ক্র‍য় বিক্রয় কিছুই হয় নি। এই ঘটনা টা ছোট করে লিখলাম। আপনার কি মনে হয়এই নির্দয় ঘটনার পর কোন প্যাট্রিয়ার্ক তার নিজের উপাসনালয় বিক্রি করতে পারবে? আপনার কি মনে হয় এই ঘটনার পর খ্রিষ্টান রা ধেং ধেং করে নাচতে নাচতে সুলতান মেহমুদ কে বলছে, আসো আমারা চার্চ বিক্রি করব,কিনে নিয়ে যাও। যারা এই সমস্ত ফালতু কথা বলে তারা ইতিহাসের কিছুই জানে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *