বখতিয়ার খলজি 

সত্য সব সময় সত্যই হয় ।সত্য প্রকাশিত হয় তার আপন মহিমায়।নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধবংশ আমাদের সেই সত্যের মুখোমুখি দাড় করে দিয়েছে ।সম্প্রতি ভারতের উওর প্রদেশের সরকার, যোগী আদিত্যনাথ , উওর প্রদেশে মুঘল শাসক দের ডাকাত কিংবা ভুমি দস্যু উল্লেখ্য করে পাঠ্যপুস্তক প্রনয়নের কথা চিন্তা ভাবনা করছে বলে, বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি।মুঘল বাদশা দের আমাদের পাঠ্যবইয়ে যে ভাবে উপস্থাপন করা হয়, আসলে কি তারা সেই রকম ছিল। আওরঙ্গজেব, হাজার হাজার হিন্দুকে হত্যা করেছে,কয়েক শ হিন্দু মন্দির ভেঙ্গেছে।কয়েক হাজার হিন্দু মেয়েকে উনার হেরেমে যৌন দাসী হিসেবে ব্যবহার করেছে।এই গুলা কেউ বলে না।কোন পাঠ্যপুস্তকে এই সমন্ধে কোন কথা বলা নেই। কেন বলা নেই, কারন নামটা কি,একবার চিন্তা করেন।সুলতান মাহামুদ ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেছে।বার বার লুট তরাজ করেছে।কয়েক হাজার হিন্দু মেয়েকে ধরে নিয়ে যুদ্ধ বন্ধিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে।যৌন দাসী বানিয়েছে।কই এই কথা কি কোন পাঠ্যপুস্তকে পেয়েছেন।পান নি? কেন পান নি। চিন্তা করুন। এবার আসি,বাংলার এক বিশেষ ব্যক্তির কথায়। কিছু দিন আগে আমার এক বন্ধু মুন্সিগজ্ঞ থাকে,চাকুরীর সুবাদে।আমি ফোন দেবার পর বলল,দোস্ত বিক্রম পুর আছি।আমি বললাম দোস্ত, অতিশ দিপংকরের গ্রামের ছবি তোলে পাঠা।বিক্রম পুরের বজ্র যোগিনী গ্রাম। দোস্ত, অবাক হয়ে বলল,অতীশ দিপংকর আবার কে? আমি তার থেকে বেশী অবাক হয়ে বছর বললাম,যে লোক না থাকলে বাংলা সাহিত্যের অনেক কিছুই আমরা জানতে পারতাম না।যাকে তিব্বতে এখনো বুদ্ধের পর সর্বোচ্চ ধর্ম গুরু মানা হয়। যে কিনা ১৬৮ টা বই লিখেছিল আজ থেকে ১২ শ বছর আগে তাকে চিনিস না।পরে চিন্তা করলাম, দোস্তকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। কারন, এই মহান মানুষ টিকে বাংগালী কখনো সম্মান দেয় নাই। উনার নামে নেই কোন ইমারত কিংবা বিখ্যাত কোন রাস্তার নাম কিংবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিক্রম পুরের মানুষ উনার ভিটার নাম দিয়েছে নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা। ভাবা যায়। শুধুমাত্র বৌদ্ধ থাকার কারনে নাস্তিক উপাধী দেওয়া হয়েছে,হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এক বাংগালী কে। ভাবতে পারেন। অতিশ দিপংকরকে নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে তাই আজ উনাকে নিয়ে বিশেষ কিছু লিখলাম না।আজকে যাকে নিয়ে লিখব, উনি বাংলাদেশের ৯৯%মানুষের কাছে দেবতা তুল্য আর আমার কাছে অসুর। যে অশুর ধবংশ করেছে,আমাদের প্রাচীন তম বিশ্ববিদ্যালয়। ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি।বাংলা সাহিত্যের তিনটা যুগ আছে, প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ, আধুনিক যুগ। প্রাচীন যুগ ৬৫০ সাল থেকে ১২০০ সাল।মধ্যযুগ ১৩৫০ সাল থেকে ১৮০০ সাল। আর আধুনিক যুগ ১৮০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চলছে। কিন্তু কথা হল গিয়ে ১২০০ সালের পর থেকে ১৫০ বছরের একটা গ্যাপ। এই দেড়শ বছর কে বলা হয় অন্ধকার যুগ। ১৩০০ সালের পরে অনেক সুলতান সাহিত্য কে এগিয়ে নেবার চেষ্টা করেছেন। ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ, গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ অনেকে বাংলা সাহিত্য কে এগিয়ে নেবার চেষ্টা করেছিলেন যদিও তারা বাংগালি ছিলেন না।আমার প্রশ্ন হচ্ছে ১৫০ বছরের অন্ধকার যুগ নিয়ে। কেন কোন সাহিত্য কর্ম পাওয়া যায় না তখন কার। তখন কি কোন কবি সাহিত্যিক জন্ম নেয় নি? উত্তর টা খুজতে চলেছি। বখতিয়ার খলজি যার পুরা নাম ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি। জন্ম তারিখ অজানা।জন্ম স্থান হেলমান প্রদেশ আফগানিস্তান। মারা যান ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে।

”নালন্দা ধবংশ ”

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধবংশের মূহুর্তএবার বলি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। নালন্দা শব্দ টির অর্থ হল দানে অকৃপন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতের বিহারে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয় ৫ম শতাব্দিতে গুপ্ত সম্রাট কুমার গুপ্ত প্রতিষ্ঠা করে বলে মনে করা হয়। প্রায় ১৪ হেক্টর জমি নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠে। তিব্বত, গ্রীস, তুরস্ক, পারস্য চীন সহ আরো অনেক অঞ্চল থেকে ছাত্র রা এসে এখানে পড়াশুনা করত।১০০০০ ছাত্রর জন্য ছিল ২০০০ শিক্ষক। প্রতি ৫ জনে একজন শিক্ষক। যাই হোক, এই নালন্দ যার হাতে ধবংশ হয় তিনি হলেন বখতিয়ার খলজি।১১৯৩ সালে এই বখতিয়ার খলজি সম্পূর্ণ ধংশ করে দেয় এই প্রাচীন বিদ্যাপীঠ কে। ধবংশ করা হয় এর সম্পূর্ন কাঠামো কে। ৯০ লক্ষ পান্ডুলিপি ৬ মাস ধরে বখতিয়ার খলজির সৈন্যরা পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সম্পত্তি লুট করে। এই ধবংশ যজ্ঞের বিবরন পাওয়া যায় তাবাকাত ই নাসিরী গ্রন্থে যার রচয়িতা ইতিহাসবিধ মিনানাজ ই সিরাজ। তিনি তার গ্রন্থে উল্লেখ্য করেন যে যাদের মাথা কামানো থাকত তাদের ই হত্যা করত বখতিয়ার খলজির সৈন্যরা। অনেক বইয়ের তথ্য সেই ব্রাহ্মণ্ দের কাছে ছিল।কিন্ত তাদের সবাই কে হত্যা করা হয়। হাজার হাজার ছাত্রকে হত্যা করা হয়। অনেক ছাত্র এবং শিক্ষক কে পুড়িয়ে মারা হয়। কারো কারোকে শিরচ্ছেদ করা হয়। বখতিয়ার খলজি,ওড়ন্তপুরী এবং বিক্রমশীলার বৌদ্ধ স্থাপনা গুলো ভেংগে গুড়িয়ে দেন। বখতিয়ায় খলজি ভারতীয় আয়ুবের্দিক ও জ্ঞানকে চীর তরে ধবংশ করার জন্য ৯০ লক্ষ পান্ডুলিপিকে পুড়িয়ে দেবার জন্য বিন্দুমাত্র চিন্তা করে নি। বখতিয়ার খলজি নিজেও কোন দিন জানতেও পারবেনা, উনি আমাদের কত বড় ক্ষতি করে গেছেন। আমাদের শিশুদের যে ইতিহাস পড়ানো হয়, তা যে কত বড় মিথ্যা বানোয়াট কেউ যদি না পড়েন তাহলে বিশ্বাস করতে পারবে না।যাই হোক বখতিয়ার খলজি একটি নালন্দা কে ধবংশ ই করেন নি, তিনি ধবংশ করেছিলেন আমাদের গোটা সাহিত্যকে। ১৫০ বছরের এই অন্ধকার যুগের সুচনা হয়েছিল এই বখতিয়ার খলজির হাত ধরে।কবি রা কবি লিখতে ভয় পেত এই বখতিয়ার খলজির কারনে। আজ যদি নালন্দা ধবংশ না হতো তাহলে আজ আমরা কোথায় থাকতাম কোন দিন কেউ কি ভেবে দেখেছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *