আমাদের দেশে কিছু কিছু মানুষ দাবী করে, তারা নাকি যীশুকে স্বপ্নে দেখেছে। যীশু তাকে এই রোগ সেই রোগের চিকিৎসা করতে বলছেন। নানা রকম ভুংগ বাংগ কথা বার্তা। আসলে কি তেমন টা হওয়া সম্ভব? এমন টা অস্বাভাবিক কিছু না, এমন টা হতে পারে। গ্রাম অঞ্চলে অনেক মহিলা মানুষ আছে খুবই ধর্ম ভিরু। শুধু মহিলা না অনেক মানুষ আছে যারা পুরা গোড়া ধার্মিক। শয়নে স্বপনে নিশিথে জাগরনে শুধু যীশু যীশু এবং যীশু। তাদের এই রোগ হবার প্রবল সম্ভাবনা আছে। জেরুশালেম সিন্ড্রোম। পোষ্ট টা চেষ্টা করব যেন ছোট হয়। বড় লেখা অনেকেই পড়তে চায় না।
জেরুশালেম নামটি বেশীর ভাগ খৃষ্টান দের কাছে খুবই পবিত্র একটি নাম ।এই শহরে যিশুকে ঘিরে হাজার ও অনেক কাহিনী জন্ম ।বেশীর ভাগ খৃষ্টান এক বার হলেও জেরুশালেম যেতে চায় । যেহেতু বাংলাদেশের সাথে ইসরাইলের কোন সস্পর্ক না থাকায় ইসরায়েল যাওয়া হয়ে উঠে না ।আমরা বাংগালিরা বড়ই হিপোক্রেট জাতি ।ইহুদিদের সব ব্যবহার করব মাগার ইসরাইলের সাথে কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না ।ইহুদিদের তৈরী ফেসবুকব্যবহার করব, আর সেই ফেসবুকেই ইহুদিদের গালিগালাজ করব।
জেরুশালেম সিন্ড্রোম এই রোগটা শুধু মাত্র জেরুশালেম নগরীতে কিংবা পবিত্র কোন শহরে গেলে হয় ।এই রোগটা নিয়ে সর্ব প্রথম আমাদের জানান হেইনয হারম্যান ১৯৩০ সালে। এই রোগটা আসলে কি ? প্রতিটা খ্রিষ্টান ছোট বেলা থেকে বাইবেল পড়ে কিংবা শুনে বড় হচ্ছে ,কানান নগর ,বেথলেহেম ,জর্দান নদি ,গালিল সাগর ,কালভেরী পর্বত ,গেৎসেমানীবাগান সম্পর্কে।তার উপর আবার যিশুকে কেন্দ্র করে সিমেমা তো আছেই। প্যাশন অফ দ্যা ক্রাইস্ট। যিশুকে কালভেরী পর্বতে পিলাতের দরবার, গেৎসেমানী বাগান,সব আমরা নিজের মনের ভিতরে গেথে নেই। মতিষ্কের সেলের ভিতরে এই চিত্র গুলো জমা হয়ে থাকে। যদিবেশীর ভাগ খৃষ্টান কে যদি প্রশ্ন করা হয় কোথায় যেতে চান আমেরিকা না জেরুশালেম। ৯০% ই বলবে জেরুশালেম ।যখন ছোট বেলা থেকে এই পবিত্র জায়গার কথা শুনে শুনে বড় হয় ,তখন মনের অজান্তে একটা কল্পনার শহর একে ফেলে ।আর যখন কোন মানুষ ,বাস্তবে জেরুশালেম যায় তখন কল্পনা আর বাস্তবের বাস্তব প্রতিফলন ঘটে ।নিজেকে যীশুর মত ভাবতে চিন্তা করে ।
জেরুশালেমের রাস্তা দিয়ে যখন হাটে তখন মনে করতে থাকে থাকে এই পথ দিয়ে যিশু খৃষ্ট হেটে ছিলেন ।মরুভুমিতে গেলে মনে করে যীশু এখানে ৪০ দিন না খেয়ে ছিলেন ।কালভেরীতে গেলে মনে করে যিশুকে এখানে হত্যা করা হয়েছিল।ঠিক তখনই এক জন মানুষ, নিজেকে যিশু ভাবতে শুরু করে । আর সেই জমে থাকা আবেগ ভালোবাসা মতিষ্ক আমাদের সামনে নিয়ে আসে। আমরা হয়ে যাই যীশু খ্রীষ্ট।
যিশুর মত পোষাক পড়ে একা একা পবিত্র স্থান গুলা ঘুরে বেড়াই ।যিশু যা যা করতেন তা তা করে বেড়ায় ,নিজের ভিতরে চিন্তা করে যীশুকে ।পরিবার পরিজন সবাইকে ছেড়ে একা থাকতে ভাল লাগে ।ইন্টার নেট ,মোবাইল সব কিছু ভুলে যায় মানুষ।মানুষের এই পরিবর্তনের নামই জেরুশালেম সিন্ড্রোম ।এই রোগের তিনটা পর্যায় আছে । ১.যারা আগে থেকেই মানুষিক রোগী ছিল ।তাদের এই রোগ বেশি আক্রমন করে ।তারা নিজেদেরকে যিশু ভাবতে শুরু করে ।এবং যীশু যা করত তা করার চেষ্টা করে ।
২.এই রোগিরা আগে থেকেই জেরুশালেম নিয়ে বেশী আবেগ তারিত হয়ে থাকে ।কল্পনা আর বাস্তবতা যখন এক হয়ে যায় তারা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে ।
৩.এই ধাপের রোগিরা কেন যে আক্রান্ত হয় তা এখনো স্পষ্ট না ।এদের কোন ধরনের কোন সমস্যা থাকে না ।তারপর ও এরা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে । এরা সব সময় পবিত্র থাকতে পছন্দ করে। হোটেলে যদি বেড থাকে বেডে না শুয়ে মাটিতে শুয়ে পরে। কারন তারা যিশুর কস্ট গুলো অনুধাবন করতে চায়। নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করে যীশুর যাতনা কেমন ছিল তা বুঝতে চায়।
————————————————————————————–
এই রোগের লক্ষন গুলা কি কি?
১.নিজে অস্থিরতার মাঝে থাকে ।পরকালের চিন্তা বেশি হয় ।সবাইকে বাইবেল এবং যীশুর বাক্য বলতে থাকে।
২.পবিত্র স্থান গুলতে একা একা থাকতে ভাল লাগে ।খালি পায়ে ঘুরাঘুরি করে।
৩.যিশুর মত কাপড় পরতে পছন্দ করে ।
৪.হঠাৎ করে চিৎকার-চেঁচামেচি করে থাকে ।
৫.এবং সবার মাঝে যিশু খ্রষ্টের বানী প্রচার করে থাকে ।
————————————————————————————–
চিকিৎসাঃ সাধারনত এই রোগীকে দ্রুত জেরুশালেম থেকে বের করে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ।
১৯৮০ থেকে ১৯৯৩’সালে প্রায় ১২০০ টুরিস্ট এই বিরল রোগে আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে ৪৭০ জন কে জোর করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রতিবছর ৪০ লক্ষ পর্যটক আসে জেরুজালেম দেখতে। সবাই কিন্তু যীশুকে খুজে পায় না। কেউ কেউ পায়।