আমি আসলে মাইকেল মধুসূদন দত্ত কি লোভে পরে খ্রীষ্টান হয়েছিলেন এই কথাটার জবাব দেবার জন্য দুই দিন ধরে অনেক গুলো আর্টিকেল আর আর কয়েটা গবেষনা ধর্মী বই পড়ছিলাম ইন্টার নেটে।হঠাৎ করে ফাদার স্ট্যানের মৃত্যু সংবাদ টা কেমন জানি সব কিছু কে উলট পালট করে দিলো।প্রথমে ভেবেছিলাম মনে হয় ভুয়া সংবাদ। পরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানলাম যে ফাদার স্ট্যান আজ ৫ ই জুলাই ২০২১ সালে হলি ফ্যামেলি হাসপাতাল,মুম্বায়ে মারা গেছেন,কোরনায় আক্রান্ত হয়ে। জামশেদপুর জেজুইট প্রভিন্স উনার মৃত্যু খবর নিশ্চিত করেছে।ফাদার পার্কিসন ডিজিসে ভুগছিলেন। যে রোগে মতিষ্ক কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়,হাটা চলায় সমস্যা হয়,ভারসাম্য রাখতে পারা যায় না,এবং ধীরে ধীরে কথা বলা এবং হাটার সমস্ত শক্তি নস্ট হয়ে যায়। ফাদার স্ট্যান ২৬ শে এপ্রিল ১৯৩৭;সালে ব্রিটিশ ভারতে জন্মগ্রহন করেন। জন্মস্থান তিরুচিরাপ্ললি, মাদ্রাজ। উনি বিশ বছর বয়সে জেজুইট ফাদার সম্প্রদায়ে যোগদান করেন। ফাদার প্রায় ৫০ বছর যীশু সংঘের যাজক ছিলেন। ১৯৭০ সালে ফাদার ঐশ্বতত্ত্ব পড়তে ফিলিপাইন যান। সেখানে ২৬ শে জানুয়ারি ১৯৭০ সালেমার্কোস স্টেট ন্যাসন অডেস প্রটেস্ট শুরু হয়। মুলত ছাত্ররা এই আন্দোলন শুরু করে।ফাদার স্ট্যান এই আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন। কারন যেখানেই অন্যায় অত্যাচার হয়েছে সেখানেই ফাদার সবার আগে প্রতিবাদ করেছেন।
ফাদার যখন ১৯৭৫ থেক ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত জেজুইট পরিচালিত ইন্ডিয়ান সোশ্যাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক ছিলেন তখন ই ফাদার ভারতীয় সংবিধানের ৫ম ধারা নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। যা ছিল উপজাতী অধ্যষিত এলাকা গুলোতে এক প্রকার স্বৈর শাসনের মত। যার মাধ্যমে ওই এলাকা গুলোতে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এবং আদিবাসীদের জমি অন্যদের নিকট বিক্রি করার অনুমোদন দেওয়া হয়। ফাদার স্ট্যান এই আইনের বিরোধিতা করেন এবং পরবর্তীতে আদিবাসী মহাসভা,এবং ঝাড়খান্ড পার্টির সভাপতি জয়পাল সিং মুন্ডা এর বিরোধীতা করলে আদিবাসীদের জমি অ আদিবাসীদের কেনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আসে।যার নেপথ্যের নায়ক ছিলেন ফাদার স্ট্যান।
এই আদিবাসী আন্দোলনের জন্য সমাজের অনেক বিশিষ্ট্য জনদের মত ফাদার কেও জেলে যেতে হয়েছিল।তবে ফাদার হাসি মুখেই সেদিন জেলে গিয়েছিলেন।নিরব দর্শক ছিলেন না তিনি। জেলে থেকে ফাদার তার জেজুইট ফাদারদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন, “এই আদিবাসীরা জানে না তাদের উপর কি ধরনের চার্জ গঠন করা হচ্ছে, তাদের উপর কি ধরনের চার্জ শীট দেওয়া হচ্ছে তারা তা জানে না। কোন ধরনের আইনের সহায়তা ছাড়াই কারাগারে থাকতে হচ্ছে বছরের পর বছর। ” ফাদার শেষে লিখেছিলেন ” But we will still sing in chorus.S caged bird can still sing “তবুও আমরা স্বমসুরে উচ্চরিত কন্ঠে গাইবো,একটি খাচার পাখি, খাচায় থেকেও গান গাইতে পারে।ফাদার ঝাড়খন্ডে আদিবাসীদের অধিকারের পক্ষে নিরন্তন কাজ করে গেছেন।প্রান্তিক, অবহেলিত,নির্যাতিত, মানুষের জন্য স্কুল পরিচালনা করতেন ফাদার। ফাদার নিপিড়ীত বন্দি সংহতি কমিটির সহ প্রতিষ্টাতা ছিলেন। যাদের কাজ ছিল বিনা বিচারে যারা জেল খানায় বন্ধি ছিল তাদের সাহায্য করা। ভারতের ৭০% মানুষ এখন এর আওতায় আছে।২০২০ সালে ৮ ই অক্টোবর ফাদার কে ভারতীয় জাতীয় তদন্ত সংস্থা গ্রেফতার করে।এটি নাকি ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী টাস্কফোর্স। এদের হাতে ফাদার গ্রেফতার হন।ফাদারের অপরাধ, ফাদার নাকি মাওবাদী গোষ্ঠীর সাথে জড়িত।যারা কিনা ২০১৮ সালে পহেলা জানুয়ারীতে ভিমা কোরেগাও সহিংসতার জন্য দায়ী। সেই খানে প্রায় ২৫০ বহুজন গ্রুপ এলগার পরিষধের ব্যানারে একত্রিত হয়েছিল।পহেলা জানুয়ারী প্রতিবছরের মত দলিত হিন্দুরা মিলিত হয়েছিল সেই মিছিলে।দলিত রা তাদের দাবীদাওয়া তুলে ধরে যা নিয়ে উত্তেজনা তৈরী হয়। ভীমা আর কোরগাও পঞায়েতের সকল কিছু বন্ধ ঘোষনা করা হয়, এবং ওই অনুষ্ঠান বাতিল করার জন্য আহবান করা হয়। কিন্ত দলিত রা মহারাষ্ট্রের সব রাস্তা অবরোধ করে, এবং পুলিশের সাথে বিক্ষোভের সময় ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর মারা যায়। ৩০ জন পুলিশ আহত হয় এবং ৩০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এই মামলায় ফাদারকে আসামী করা হয়। একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধকে আসামী করে নোংরামী চরম সীমা অতিক্রম করে মোদী সরকার। কত টা বর্বর হলে, মোদী আর অমিত শাহ জুটি এই কাজ করতে পারে। ভেবে দেখেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থা ফাদারকে মুক্তি দেবার জন্য অনুরোধ করেন।কিন্ত গোয়ার্তুমির চরমে থাকা অপদার্থ মোদী সরকার এই আবেদন অগ্রাহ্য করে। ফাদার পার্কিনসন রোগী ছিলেন, হাত পা কাজ করত না ফাদারের।ঠিক মত গ্লাস ধরে পানি পান করতে পারতেন না ফাদার। গ্রেফতারের ৫০ দিন পর্যন্ত ফাদার কে কোন প্রকার চিকিৎসা সহযোগিতা দেয় নি নিলজ্জ মোদী সরকার।একজন পার্কিনসন রোগীকেও হাত কড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল। ভারতের ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন, আর কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বার বার অনুরোধ করেছিলেন মোদীকে, যেন ফাদার কে মুক্তি দেওয়া হয়। সেই কথা রাখে নি, বুচার অফ গুজরাট। যাই হোক,ফাদার আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্ত ফাদার ঠিকই বিপ্লব তৈরী করে গেছেন। যেই বিপ্লব মানবতার বিপ্লব। ওপারে ভাল থাকবেন ফাদার স্ট্যান।