জেনারেল জ্যাকব

                                                     

বাংলাদেশীদের ইহুদি নাম শুনলে তীব্র ঘৃনা জেগে উঠে। মনে মনে এক প্রতিশোধ নেবার  আকাংক্ষা তৈরী হয়। বাংলাদেশে কোন কিছু হলেই বলে, সব ইহুদীদের ষড়যন্ত্র। মানে বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যে দেশ নিয়ে সারাক্ষন ইহুদীরা পরে আছে কিভাবে এই দেশ কে  ক্ষতি করা যায়।১৯৭২ সালের ৪ ঠা ফেব্রুয়ারিতে  ইসরাইল বাংলাদেশ কে স্বীকৃতি দিয়েছিল।কিন্ত ততকালীন সরকার সেই স্বীকৃতি  গ্রহন করে নি। আজও পর্যন্ত বাংলাদেশের পার্স পোর্টে লেখা থাকে পৃথিবীর সব জায়গায় যেতে পারবেন কিন্ত ইসরাইল যেতে পারবেন না। যাই হোক এই রাজনীতি নিয়ে কথা বললে আজকের মূল টপিক নিয়ে বলা আর হবে না। 

জেনারেল জ্যাক ফারাজ রাফায়েল জ্যাকব

                                               

জেনারেল জ্যাকব, যার পুরো নাম জ্যাক ফারাজ রাফায়েল জ্যাকব। উনার জন্ম ১৯২১ সালের ২ রা মে ভারতের কলকাতা তে। উনার পরিবার ছিলেন ধর্মভীরু ইহুদী। এবং ইরাকের মত মুসলিম প্রধান দেশের। যেখান থেকে ১৮ শ শতাব্দীর মাঝামাঝি তে উনার পরিবার ভারতে স্থানান্তরিত হয়।  ৭ জুন১৯৪২ সালে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন  সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে। এবং সর্বশেষ সব গুলো ধাপ শেষ করে ১৭ ই জুন ১৯৭২ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে অবসরে যান। ভারতের রাজনীতির কারনে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদ উনি পান নি।উনার  বিখ্যাত একটা বই আছে, বার্থ অফ এ ন্যাশন (surrender at dacca).বই টি প্রকাশ করা হয় ১৯৯৭ সালে। তিনি লিখেছিলেন কোন ধোকার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। 

১৯৭১ সালে ১৫ ডিসেম্বর হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা ঘিরে রেখেছে। জেনারেল জ্যাকব দিল্লীর সাথে কোন আলোচনা না করে একটা স্বাধীনতার খসড়া করে

কোন প্রকার প্রটোকল ছাড়াই জেনারেল নিয়াজীর কাছে এসে হাজির হন। অথচ দিল্লীর চিন্তা ছিল ভিন্ন। দিল্লীর চিন্তা ছিল ইউ এন রেগুলেশনের আওতায় যুদ্ধ বিরতী করা। যেটা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। যাই হোক, জেনারেল জ্যাকব নিয়াজীকে জানিয়ে দিলেন যুদ্ধ বিরতী নয়, আত্ন সমর্পন করতে হবে পাকিস্তান কে, তাও আবার ৩০ মিনিটের মধ্যে। এর বেশি দেরী হলে ঢাকায় পাকিস্তানীদের  ঘাটিতে বোম্বিং করা হবে। মারা পরবে পাকিস্তানি সৈন্য আর তাদের স্ত্রী সন্তান রা। আর আত্নসমর্পণ করলে সম্পুর্ন দায়িত্ব উনি নিবেন। 

অথচ, তখন ভারতীয় মাত্র ৩০০০ সেনা ছিল ঢাকাতে আর পাকিস্তানের ছিল ২৭ হাজার। নিয়াজী চাইলেই মুক্তিযুদ্ধ আরো কয়েক মাস চালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্ত জেনারেল জ্যাকব এর আত্নবিশ্বাস দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়ে ছিলেন  নিয়াজী। নিয়াজীর সামনে নিজের তৈরী করা আত্ন সমর্পনের দলিল, দিয়ে বলেছিলেন, যদি আপনি চুপ করে থাকেন তাহলে ধরে নিব আপনি সেটা মেনে নিয়েছেন। আর আত্নসমর্পণ করতে হবে পাবলিক প্লেসে। এই কথা বলে পাকিস্তানের ব্যারাক থেকে বীর দর্পনে বের হয়ে আসলেন জেনারেল জ্যাকব। 

 Birth of A nation – জেনারেল জ্যাকব

                                                        । 

পরের ইতিহাস সবার ই জানা। আমেরিকার ৭ ম নৌবহর, পাল্টা রাশিয়ার বাংলাদেশের দিকে যাবার হার্ডলাইন। পাকিস্তানের বর্তামান বাপ চীনের বাংলাদেশের বিরুদ্ধ এ  যাওয়া, সব ই বর্তমান প্রযন্ম জানে তাই আর বললাম না।

কিন্তু সেদিন যদি জেনারেল জ্যাকব ধরা পরতেন, তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পেতে আরো বেশি দেরী হত আর মারা যেত আরো কয়েক লক্ষ লোক। 

জেনারেল জ্যাকব ২০১৬ সালে ১৩ ই জানুয়ারি মারা যান। বাংলাদেশ নামক দেশটার ৫০ তম বিজয় দিবসের প্রাক্কালে  একজন  ইহুদিকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরন করছি। যার জন্য এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *