একটা মেয়ের মানুষ কি দেখে প্রেমে পরে ? হয় চেহারা ,চুল,চোখ ।কিন্ত আমার একটা মেয়ের হাসি দেখে ভাল লাগে ।মেয়েটা যখন হাসে ,তখন মনে হয় বুকের বা পাশ টা কে যেন ধুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে।হালকা ব্যাথা অনুভব করি ।খুব গভীর ভাবে বিশ্লেষন করতে গেলে ,মানুষ এই টাইপের মেয়েদের প্রেমে পরার কথা না ।এই টাইপের মেয়েদের একটা নির্দিষ্ট ,আলাদা জগৎ থাকে ।সেই জগৎ এর রানী সে একাই থাকে ।তার রাজার কোন প্রয়োজন হয় না ।হয়ত বা হয় কিন্ত প্রকাশ করে না ।যাই হোক আমি একে কিভাবে পছন্দ করলাম নিজেই বুঝি নাই ।দুই এক দিনের পরিচয়ে কাউকে ভালো লাগতে পারে আমি নিজেই কোন দিন বিশ্বাস করি নি ,তথা কথিত প্রথা কোন দিনও বিশ্বাস করি না আমি ।কিন্ত এই প্রথম কোন মেয়েকে প্রথা টথা ভেংগে বলতে মন চায় ,আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্ত সবাই তো আর আমার মত এই মতে বিশ্বাসী না ।প্রতিটি মানুষের নিজস্ব কিছু ধ্যান ধারনা আছে ,নিজস্ব কিছু বিশ্বাস আছে ।মানুষ তার সেই বিশ্বাস ,ধ্যান ধারনা থাকে বের হতে পারে না।
মেয়েটার সাথে আমার পরিচয় কর্মক্ষেত্রেই ।এক দুইটি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও প্রায়ই দেখা হয় ।মাঝে মাঝে মেয়েটাকে বলতে মন চায় ,চল না উন্মুক্ত ,বিশাল পদ্মার বুকে হারিয়ে যাই ।পদ্মা আমাদের দুই জনের কর্মস্থল থেকে খুব বেশী দূরে না ।মাঝে মাঝে বলি ফেলি ,তুমি আমার কপিলা হয়ে যাও ,আমি না হয় কুবের হয়ে তোমার মনের পদ্মা নদীর মাঝি হই ।আমি জানি মেয়েটা রাজী হবে না ,কারন এরা এদের পরিবার ,সমাজ কে ,প্রথাকে বুডো আঙ্গুল দেখিয়ে আমার কাছে আসবে না ।আচ্ছা ,মেয়েটার নাম ই তো বলা হল না , শশী প্রভা ।পুরো নাম শশী প্রভা মজুমদার ।সনাতন ধর্মাবল্বী ।কিন্ত প্রেম কি কোন বাধা মানে? যুগে যুগে কত ভালোবাসাই তো সব প্রথাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে ।এ কি রাজী হবে ?
তবে কেন জানি মনে হয় ,তার কিছুটা হলেও অনুভবে আমি আছি ।তার সেই তাকানো ,সেই হাসি অনেক কিছুই ভাবুক মন কে ভাবিয়ে তোলে ।আমাদের এক কলিগের বিয়ে ছিল কিছু দিন আগে।দাওয়াত আমাদের দুই জনেরই ছিল ।শাড়িতে সব সময় বাঙ্গালী নারীকে সুন্দর লাগে সেটা সব বাঙ্গালী লেখকগনই বলে গেছেন ।আমি আনারী লেখক সেটা না হয় নাই বলি ।হলুদ শাড়ীতে শশীকে এতটা সুন্দর লাগবে আমি কখনো ভাবি নি ।শ্যামলা মেয়েদের কাজলে নাকি অনেক সুন্দর লাগে ,এটা বিভিন্ন গল্প উপন্যাসে পড়েছি ,কিন্ত বাস্তবে কোন দিন দেখি নি।বাঙ্গালী নারী এখন কাজল দিতে ভুলে গেছে ।শাড়ী পরাও ভুলে গেছে ।আমি কল্পনাতে আমার হবু জীবন সঙ্গীকে যে ভাবে কল্পনা করি ঠিক সেই ভাবেই আজ শশীর আগমন ।হলুদ শাড়ী ,চোখে কাজল ,খোপায় বেলী ফুলের মালা,হাত ভর্তি চুড়ি।যে কোন ছেলের এই রুপে দেখলে মাথা নষ্ট হবার উপক্রম হবে সেটা আমি ১০০% নিশ্চিত। আমি বরাবরই পোষাক টোষাকের প্রতি উদাসীন ।কে কি বলল কখনো মাথা ঘামাই নি ।কিন্ত এই মেয়েটার পাশে এই পোষাকে আমাকে একে বারেই মানাচ্ছে না ,সেটা ঠিক বুঝতে পারছি।বিরিয়ানীর ভিতর নিজেকে এলাচ মনে হচ্ছে ।
কি নির্জন ,কেমন আছেন ? অনেক দিন ধরে দেখিনা আপনাকে ।মেসেজ ও দেন না ।ফোন ও করেন না ।কি হলো আপনার ?পিছন দিক থেকে কথাটা আসলো বিধায় চমকালাম ।একটা গান মনে পরে গেলে তাহাকে দেখে ,’’আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি ,আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি’’।গলা দিয়ে কেন জানি কোন কথা বের হচ্ছিল না ।
মেয়েটা আবার বলল,কি ? কথা বলছেন না কেন ?
আমি আমার থতমত ভাবটা কাটাতে চাইলাম ।এই পরিস্থিতিতে আমার এক্সট্রা দাঁতের হাঁসি দিয়ে ব্যাপারাটা সামলানোর জন্য চেষ্টা করলাম ।বুঝতে পারলাম না ,ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রন করতে পারছি কিনা।বললাম ,তাতে তো কারো অসুবিধার হবার কথা না ,তাই না ?
এবার মেয়েটা হকচকিয়ে গেল ।নিজেকে সামলে বলল,তা অবশ্য ঠিক ই বলেছেন?আমার কেন কোন অসুবিধা হতে যাবে ?তবে সারাক্ষন কেউ মেসেজ দিলে ,ফোন দিলে ।এরপর হঠাৎবন্ধ করে দিলে কেন জানি নিজেকে অপরাধী মনে হয় ,নিজেকে কেন জানি একা একা লাগে ।সেটা আপনি বুঝবেন না ?
আমি হেসে বলি ,এতটা অবুঝ নিশ্চয়ই আমি নই যে বুঝবো না ।
মেয়েটা আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল,আপনি প্রতিদিন আমাকে মেসেজ দিতেন ,সকাল সাতটায় ,বিকাল পাঁচ টায় আর রাত দশ টায় ।এখন দেন না কেন?
আমি বলি,কেউ তো মেসেজের উত্তর দেয় না।আর সকালের মেসেজের উত্তর রাত দশটায় দিলে কার আর ইন্টারেস্ট থাকে বলেন ?
মেয়েটা বলল,যে সময়ই দেখ না কেন ,দেয় তো নাকি ।আর কেউ কি জানে সে আজ চার দিন সাত ঘন্টা ৪৬ মিনিট ধরে মেসেজ দেয় না ।কেউ একজন মেসেজের অপেক্ষা করে থাকে।বার বার মেসেজ্ঞারে গিয়ে চেক করে কোন মেসেজ আসছে কিনা ? অনেকের মেসেজ আসে কিন্ত স্পেশ্যাল কারো মেসেজ আসে না ।
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বলি,মিনিট পর্যন্ত মনে রাখছেন দেখি?
মেয়েটা বলল,সেটা জেনে আপনি কি করবেন ?
তাও অবশ্য ঠিক ,আমি জেনে কি করব ।
মেয়েটা আবার বলল,রাত কয়টা বাজে দেখছেন ঘড়িতে? এটা হিন্দু বিয়ে এত রাতে খাওয়া কি কেউ রাখে ,আপনি এখনো খান নাই কেন ,সেটা বলেন ?
আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ,আসলেই রাত তিন টা বাজে ।সত্যি কথা বলতে কি ,মদ্যপ অবস্থায় কয়টা বাজে ,খাওয়া আছে কি ,না আছে মনে থাকে না ।আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,ড্রিংক্স করেন ভালো কথা ।মাঝে মাঝে করা যায় কিন্ত এতটা অবহেলা নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি তো করা ঠিক না, তাই না ?
আমি বুঝতে পারলাম ,আমি যে খাই নি মেয়েটা এটা মেয়েটা প্রথম থেকেই নজর রেখেছে,এও বুঝতে পারছি ,মেয়েটা আমার প্রতি দুর্বল।
মেয়েটা বলল,আপনি নিজে খান নি তাই বলে কি অন্য কাউকে ক্ষুধার্ত রাখবেন ,এটা কেমন কথা?
আমি মেয়েটার চোখের দিকে তাকালাম ,বুঝতে পারলাম ,প্রচন্ড একটা টান অনুভব করে সে আমার জন্য ।বুঝতে পারছি ,মেয়েটার ভিতরে অবস্থা খুবই খারাপ,পারছেনা শুধু কাঁদতে ।
আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম ,কেমনে রাখিবে প্রিয়া প্রান ,বাইরে তার উদ্যত শ্রাবন ।আপনি না খেয়ে আছেন অথচ যার জন্য না খেয়ে আছেন তারে একবার ও বলতে পারেন না, তাকে আপনি ভালোবাসেন ,কেন?
মেয়েটা বলল,কিছু কিছু কথা কোন দিন বলা যায় না ।উপলদ্ধি করতে হয় ।নারীর এক রুপ পুরুষেরা জীবনের অপর প্রান্তে না পৌছাইলে দেখতে পায় না ,সেটা জানেন তো?
আমি বললাম ,এত উচ্চ ভাবার্থের কথা সব সময় আমার মাথার উপর দিয়ে যায় ।আমি ভোলাবালা মানুষ এত তাত্নিক কথা বুঝি না ।খাবার নিয়ে আসলে দেন ,খেয়ে বিদায় হই?
মেয়েটা বলল,আমি কি আমার শাড়ির নীচে খাবার নিয়ে ঘুরবো নাকি ? বাড়ির পিছনে যান ,একা যাবেন ।কেউ যেন না দেখে ,কারন আপনার বন্ধুদের খাবার ব্যবস্থা আমি করতে পারি নি।ইন ফেক্ট উনাদের খাবারের ব্যবস্থা উনারা নিজেরাই করেছেন ।নিজেরা আপনাকে রেখে আগেই খেয়ে ফেলেছে।আপনি গাধা তো ,তাই আপনারটা আমাকেই ব্যবস্থা করতে হলো ।এখন যান ,গিয়ে দাঁড়ান,আমি আসতেছি ।
আমি সুবোধ বালকের মত মেয়েটার কথা মেনে নিলাম ,আসলে প্রচন্ড খুদা পেয়েছিল আমার।আকাশের পূর্নিমার চাঁদটাকে রুটি মনে হচ্ছিল ।বাড়ির পিছনের দিক টা মোটামুটি নিরব।সবাই বিয়ে বাড়ি কাজ শেষ করে যার যার মত ঘুমাতে গেছে ।কিন্ত আশ্চর্য এক কারনে মেয়েটা ঘুমায় নি ।কিছুক্ষন পর দেখলাম মেয়েটা একটা প্লেটে খাবার নিয়ে এসেছে ।
মেয়েটা এসে বলল,খাবার নিয়ে এসেছি ।কিন্ত একটা শর্ত আছে ?
আমি বলি, কি শর্ত?
মেয়েটা বলল,আপনি নিজের হাতে খেতে পারবেন না ?
আমি বললাম ,কেন ?চামচ দিয়ে খাবার অভ্যাস আমার নেই ?
মেয়েটা বেশ রাগী সুরে বলল,আমি কি একবার ও বলেছি যে ,আপনাকে চামচ দিয়ে খেতে হবে ,আপনি না সব সময় একটু বেশী বুঝেন ?
আমি হাসলাম ,বললাম ,তাহলে খাব কি ভাবে ?
মেয়েটা কেমন করে যেন তাকালো ।চাঁদের আলোয় মেয়েটার চোখ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।চোখ গুলো ছল ছল করছে।প্রিয় জনকে নাকি খুব কাছে পেলে মেয়েদের চোখ অকারনে ভিজে যায় ,হয়তবা তাই?
মেয়েটা বলল,আমার না অনেক দিনের একটা ইচ্ছা ছিল ,আপনাকে খাইয়ে দিব ।ভগবান মনে হয় সেই ইচ্ছা আজকে পুরন করবেন?
আমি থতমত খেয়ে ফেলি ,বলি ,ভগবান আজ তোমার ইচ্ছা অবশ্যই পুরন করবেন ।
আজ এত দিন পর মেয়েটাকে তুমি করে বলেছি।মেয়েটার চোখে মুখে অন্য রকম এক তৃপ্তিময় আভা দেখতে পাচ্ছি ।মেয়েটা ভাত মাখিয়ে আমার মুখের কাছে দিয়ে বলল,কেন জানি নিজেকে আজ খুব সুখি মনে হচ্ছে এই মূহুর্তে ।
মেয়েটা মনে হয় কাঁদছে,চাঁদের আলোয় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।পুর্নিমার চাঁদের আলোর একটা বিশেষ গুন আছে ,চাঁদের আলো আর পুর্নিমার জ্যোৎস্নাকে থেকে চোখের জলকে আলাদা করা যায় না ।
আমি মেয়েটা বলি,যাকে এত ভালোবাসেন তারে কেন দূরে দূরে রাখেন ?
মেয়েটা এই প্রশ্নের উত্তরে চুপ করে রইলো ।আমি বলি ,চুপ করে আছেন যে?
মেয়েটা বলল,এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই ।
জানা আছে ,কিন্ত বলবেন না ,সেটা আমি জানি ,আমি বললাম ।পুরাটা খেতে পারব না ।
মেয়েটা অভিমানের সুরে বলল,পুরাটা শেষ করতে হবে আপনাকে ।
আমি বলি ,আমার পেটের আন্দাজ আমি জানি ।
মেয়েটা বলল,প্লিজ ,এই কথাটা রাখুন ।
অজ্ঞেত ,আমার পুরাটা শেষ করতে হলো।ঝামেলা হলো হাত ধোবার পর ,কোন কাপড় পাচ্ছিলাম না।মেয়েটা তার শাড়ির আঁচলটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,এটাতে না হয় আজকের মত ব্যবহার করুন ।
আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম ,অসম্ভব সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে ।পুর্নিমার আলোয় দৃষ্টিবিভ্রম হয় ,আমার ও মনে হচ্ছে তাই হচ্ছে ।চাঁদের আলোয় এই এক সমস্যা ।আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম ,এটা আমাকে না দিলে হতো না শশী?
মেয়েটা এবার নিজেকে ঘুরিয়ে নিলে ,যেন আমি তার চোখের জল দেখতে না পাই ।
আমি মুখ আর হাত মোছার পর বললাম ,আমার শেষ ।বিয়েও শেষ এর পর কি করবে শশী ।
মেয়েটা উল্টো দিকে তাকিয়েই বলল,শশী প্রিয়ারা তো একটা সময় প্রকৃতির নিয়মেই ঝরে যায় ।বলেই দৌড়ে সেস্থান ত্যাগ করল ।আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম ।
এরপর ,অনেকদিন ওকে দেখি নি ।মোবাইল অফ ,মেসেজ্ঞারে ব্লক ,হোয়াটস আপে ,ইমো তে কোথাও পেলাম না ।একদিন হঠাৎ অচেনা এক নাম্বার থেকে ফোন আসলো ।রাত মোটামুটি দেড়টা ।ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ।একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন ।সাধারনত এত রাতে ফোন রিসিভ করি না।কেন জানি আজ করলাম । ওই পাশের হ্যালো শব্দটা শুনে আমি পুরা নিথর হয়ে গেলাম ,এই স্বর শুনার জন্য আজ প্রায় এক মাস অপেক্ষা করেছিলাম ।
ওই পাশ থেকে বলল,নির্জন আপনি কি একটু আসতে পারবেন ?আমার বাবা খুব অসুস্থ ,রক্ত লাগবে। দিতে পারবেন?
আমি কাঁপ কাঁপ সুরে বললাম ,শশী ,এত দিন পর কোথা থেকে?কোথায় আপনি ?
মেয়েটা বলল,আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ।আসবেন আপনি,প্লিজ রক্ত লাগবে আমার ।
আমি বললাম ,এত রাতে আমি যাব কিভাবে ,আর এখান থেকে একশ কিলোমিটার ,যাব কিভাবে ? আমি যেতে পারব না ,আপনি আজকের দিনটা ম্যানেজ করুন ,আমি কাল আসছি ।বলেই রেখে দিলাম ।
আমি যখন ,রাজশাহী মেডিকেল পৌছালাম,তখন মোটা মুটি সাড়ে তিনটা বাজে ।প্রধান গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখি মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে।পরনে হালকা আকাশী রংগের সালোয়ার কামিজ ।চোখের নীচে কালো দাগ পরে গেছে ।বুঝা যাচ্ছে অনেক দিন ধরে ঘুমায় না মেয়েটা ।
মেয়েটা বল,তোমার এতক্ষন লাগলো আসতে ।আমি কতক্ষন ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছি ।তুমি যখন না বলেছিলে ,তখনই আমি জানতাম তুমি আসবে ।আমার নির্জন আমাকে একা বিপদে ফেলে থাকতে পারে না ।তাকে তার শশী প্রিয়ার কাছে যে আসতেই হবে ।আমি ভুল ছিলাম না ,তুমি ঠিকই এসেছো ।
এতদিন পর মেয়েটার মুখ থেকে তুমি সম্ভোধন শুনে মন টা যেন কেমন করে উঠল ।প্রচন্ড ভাবে জরিয়ে ধরতে মন চাচ্ছিল।কিন্তু পারলাম না ।শুধু বললাম ,শশী আমি রক্ত দিতে এসেছি ,রক্ত দিয়ে চলে যাব ।।আর তোমার লোক দেখানো ভালোবাসা আমার ভালো লাগে না ,চল।
মেয়েটার মুখ কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে গেল ,মাথা নিচু করে বলল,চল ।
আমি মেয়াটাকে অনুসরন করি ।
যখন রক্ত দিয়ে বের হচ্ছিলাম ।তখন প্রায় চারটা বাজে বাজে ।
শশীও আমাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে আসলো ।লক্ষ্য করলাম মেয়েটা কোন কথা বলছে না ,চুপচাপ আমার পাশে পাশে হাটছে ।গেটের কাছে আসার পর ,আমি বললাম, আমি যাই ।তুমি তোমার বাবার কাছে চলে যাও।
মেয়েটা চাপা কন্ঠে বলল,চলেই তো যাব ,কাউকে আটকে রাখার ক্ষমতা কি আমার আছে?যে যাবার সে যাবেই ,আর যে থাকার সে থাকবেই ।যাও চলে ।
আমি আর কথা বাড়ালাম না ।যখন গেট দিয়ে বের হলাম ,তখন লক্ষ্য করলাম ,গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে ,ঝড়ের পূর্বাভাস ।মেয়েটা দেখলাম দাড়িয়েই আছে ।গাড়িতে যখন উঠলাম ,তখন মুষল্ধারে বৃষ্টি হচ্ছে ।এই অঞ্চলে এই ধরনের বৃষ্টি আমি খুব কমই দেখেছি ।মেয়েটাকে যখন ফোন দিলাম ,তখন ও শুধু একটা কথাই জিজ্ঞেস করলাম ,কই তুমি?
মেয়েটা শুধু বলল,নির্জন তার শশীকে যেখানে রেখে গেছে ,সেখানেই আমি ।
আমি বললাম ,পাগলের মত করো না ,বাবার কাছে যাও।
মেয়েটা বলল,বাবা সুস্থ হয়ে গেছে ,কাল নিয়ে যাব ।কিন্তু কেউ আমাকে জোর করে অসুস্থ করে দিচ্ছে ,সে সেটা জানে না ।
আমি যখন আবার পৌছালাম ,দেখি মেয়েটা একা একা সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে ,আমিও ভিজতে ভিজতে সামনে দাঁড়ায়ে বলি,কেন শশী কেন ?ভালোবাসবে আমায়?
মেয়েটা বলল,আমি জানি না নির্জন ।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না ।
আমি বললাম ,তাহলে আপন করে নাও?
মেয়েটা বলল,আমি আমার পরিবার ছাড়া থাকতে পারব না ।ওদের কষ্ট দিতে পারব না ।
আমি বলি তাহলে,আমাকে ভুলে যাও?
মেয়েটা বলল,জীবন থেকে কেউ তোমাকে কেড়ে নিতে পারবে না ।
আমি বললাম,তাহলে আমি কি করব ?বলে দাও তুমি?
মেয়েটা বলল।আমি জানি না ,আমি জানি, আমি তোমাকে আর আমার পরিবারকে ,দুইটাই চাই।
আমি বললাম ,ঠিক আছে এর ফয়সালা একমাত্র উমত্ত পদ্মাই দিতে পারে ।তুমি কাল দুইটায় ,দুপুরে একবার পদ্মার পাড়ে আসবে ।আমি অপেক্ষা করব।এবার বাবার কাছে যাও ।ড্রেস চেঞ্চ কর ।
মেয়েটা বলল,আমি যাব না ।তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভেজা আমার অনেক দিনের আশা ,আমি ভিজবো তোমার সাথে ।কিন্ত ,ঠিক সেই সময় মেয়েটার মা এসে পড়ল ।এমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো ,আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না ।মেয়েটা বাধ্য মেয়ের মত মার সাথে চলে গেল।
দুপুর দুইটা ।আমি উমত্ত পদ্মার সামনে দাঁড়িয়ে ।পদ্মা তার জীবনে অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছে আবার অনেক কিছু গড়ে দিয়েছে ।আজ হয় প্দ্মা গড়ে দিবে না হয় ভেঙ্গে ফেলবে ।আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি ,তার থেকে একটু দূরে পদ্মার ঠিক পাড়েই একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ ।গাছটাতে ফুলে ভরে আছে,মনে হচ্ছে কেউ যেন গাছটাতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে ।মেয়েটা আসছে,পরনে তার সেই বিয়ে বাড়ির শাড়ী।খোপায় সেই বেলী ফুলের মালা ।অবিকল সেই দিনের মত করে সেজেছে সে।
আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি।অপলক দৃষ্টি যার নাম।শশী তুমি কি আমাকে ভালবাস ?
মেয়েটা মাটির দিকে তাকিয়ে বলল,জীবনের থেকেও বেশী।
আমি বলি,তাহলে সমস্যা কি ,আমিও তোমাকে ভালোবাসি ।
আমি আমার পরিবার ছেড়ে থাকতে পারব না ,তাদের আমার লাগবে।
আমি বললাম ,ওদের কে ছাড়তে বলছে।তুমি আমাকে ,তাদের নিয়েই থাকবে ।
মেয়েটা বলল,এই সমাজ সেটা মেনে নিবে না ।আমাকে তাজ্য করে দিবে বাবা মা ।ওদের মুখ কোন দিন দেখতে পারব না আমি।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলি,তাহলে আমাকে ভুলে যাও।।
মেয়েটা বলল,আমি নিজেকে ভুলে যাব ,তবু তোমাকে ভুলতে পারব না ।আমার শরীরে তুমি ছাড়া কেউ স্পর্শ করবে সেটা ভাবতেই আমার ঘিন লাগে ,আমি পারব না ,অন্য কার হতে ।
আমি বেশ জোরেই বললাম ,তাহলে আমি কি করব ?সেটা তো বল?
মেয়েটা এবার কাঁদছে ,ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছে ।কিছু বলছে না ।
আমি বললাম ,সব সমস্যার সমাধান তোমার খোঁপার বেলী ফুলের মালা করে দিবে।আমি নিজ হাত দিয়ে ওর খোঁপার মালাটা খুললাম ,ওর হাতে দিয়ে বললাম ,পদ্মার পাড়ে কৃষ্ণচূড়া গাছটায় যদি এই বেলী ফুলের মালা রেখে আস তাহলে বুঝব তুমি আমার ।আর যদি পদ্মায় ভাসিয়ে দাও তাহলে বুঝব ,তুমি কখনো আমার ছিলে না ,আমি নিজেই চলে যাব তোমার জীবন থেকে?
মেয়েটা এবার জোরে জোরে কাঁদছে ,অনেকটা শিশুদের মত ।বলল,নির্জন আমি হাত জোড় করি ,এত বড় শাস্তি তুমি আমাকে দিয়ো না ,আমি পারব না ,তোমাকে ছাড়া থাকতে ।
আমি বলি ,তাহলে গাছের নিচে রেখে আসো মালাটা?
মেয়েটা আবার বলল,আমি আমার পরিবার ছাড়া থাকতে পারব না ।
আমি বলি ,তাহলে ভাসিয়ে দাও মালাটা ।তবু ,আজকে এর বিহিত করতেই হবে তোমাকে।শশী ,স্বীধান্ত তোমার হাতে। যে কোন একটা কর ,প্লীজ।
মেয়েটা এগিয়ে যাচ্ছে।হাতে তার বেলী ফুলের মালা ।অতিদূরে পদ্মা আর কৃষ্ণচূড়া গাছটা দাঁড়িয়ে। মেয়েটা একটা কঠিন স্বীধান্ত নিয়ে ফেলেছে।কোন কঠিন স্বীধান্ত নেবার আগে মেয়েদের চোখ অকারনে ভিজে যায়।