দেশে আজ পাকিস্তানী বংশ ধরদের দাপট দেখে খারাপ লাগে।। আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম।এই বাংলাদেশ না চাইলে ও এই বাংলাদেশ আমাদের দেখতে হচ্ছে।চলন্ত বাসে,শুধু মাত্র হিন্দু মেয়েকেই বেছে বেছে সবার সামনে ধর্ষন,কিংবা গত কয়েক দিনে কয়েকশ ধর্ষন, এই গুলা দেখতে দেখতে আর ভাল লাগে না।২১ শে ফেব্রুয়ারিতে লাথি মেরে শহীদ মিনার ভাঙ্গা দেখতে আমার ভালো লাগে না।যারা দেশের স্বাধীনতায় চায় নি,তাদের হাতে দেশের পতাকা দেখতে ভাল লাগে না।পাকিস্তান নামক দেশটা কে আমি কোন দিন ও সাপোর্ট করতে পারি না।হুমায়ুন আজাদ স্যারের একটা কথা আমি বিশ্বাস করি,” পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, তারা যখন গোলাপ নিয়ে আসে তখন ও”।

শরনার্থী হয়ে দেশের ভিতরে কিংবা ভারতে যাত্রা।

যশোর জেলার পুলিশ লাইনের পাশে ফাতেমা হাসপাতাল আর যশোর ক্যাথলিক চার্চ ছিল।প্রায় তিন একর জমির উপর দুই প্রতিষ্ঠান, যা ক্যাথলিকদের দ্বারা পরিচালিত হত।।যা এখন আর খুব কমই অবশিষ্ট আছে।১৯৬৪ সালের দিকে ফাদার মারিনো রিগন এই চার্চ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানী সৈন্যরা যশোর সেনানিবাস থেকে বের হয়ে নিরীহ মানুষের উপর নির্মম অত্যাচার করে।এদের কাছ থেকে বাচার জন্য, লোক জন সীমান্ত পারি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।।তবে, ২৫ শে মার্চ ঢাকায় অপারেশন সার্চ লাইট নামে গনহত্যা আর অপারেশন বিগ বার্ড নামে বঙ্গবন্ধু কে গ্রেফতার ইপি আর সদস্যরা মেনে নেয় নি।।যশোরে স্থানীয় জনগন এবং ইপি আর সদস্যরা মিলে প্রতিরোধের মাধ্যমে ৩১ মার্চ সেনাবাহিনীকে সেনানিবাসের ভিতর অবরুদ্ধ করে রাখে।।

অবাধে বাঙ্গালী নিধনে মেতেছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী।

২রা এপ্রিল সেই প্রতিরোধ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের সামনে টিকতে পারে নি।যশোর সেনানিবাসের পাশেই ছিল খারকি পাড়া। এই খাড়কি পাড়ার লোক জন ইপি আর সদস্যেদের খাবার থেকে শুরু করে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দেয়। যার ফলে প্রতিরোধ ভেঙ্গে যাবার পর, এই খাড়কি পাড়ার লোকজনের পর নেমে আসে, অত্যাচারের খড়ক।।জীবন বাচাতে অনেক লোক আশ্রয় নেয় যশোর ক্যাথলিক চার্চে।সবার ধারনা ছিল,ধমীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা হবে না।৪ ঠা এপ্রিল ১৯৭১।তালপাতা রবিবার।সেদিন প্রায় চার হাজার মানুষ গীর্জায় অবস্থান করেছিলো।পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যশোর দখল করার জন্য, নির্বিচারে গুলি বর্ষন করে।আশে পাশে বাড়ি ঘর গুলোতে চালানো হয় অগ্নিসংযোগ। যেদিন যশোরে কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়।।

যশোরে পাকিস্তানী সৈন্যদের নির্মমতা যশোর জেলার ঝিকর গাছা থানার শিমুলিয়া মিশনের পুরোহিত ফাদার মারিও ভেরোনেসি কানে পৌছায়। তিনি যশোর ক্যাথলিক চার্চের পুরোহিত ফাদার ফ্রান্সিসের সঙ্গে আলোচনা করে আশ্রিত মানুষ গুলোকে শিমুলিয়াতে স্থানান্তরের স্বীধান্ত নেন।ফাদার মারিও ফাতেমা হাসপাতালের এম্বুলেন্স নিয়ে সারা যশোর শহরে আহতের ফাতেমা হাসপাতালে নিয়ে আসেন।। বিকেল।চারটায় আহত এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে এসে,ওনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।বিকেল পাচটায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি, গীর্জার পাশে এসে দাঁড়ায়। গীর্জার দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করে,সেনাবাহিনী গালিগালাজ শুরু করে।ফাদার মারিও সৈন্যদের দু হাত তুলে বোঝানোর চেস্টা করলেও, এক পাকিস্তানি সৈন্য ফাদার কে নির্মম ভাবে গুলি করে।ফাদারকে গুলি করতে দেখে লোকজন দিক বিদেক ছুটাছুটি করে। সেদিন গীর্জা চত্ত্বরে ছয় জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানী সৈন্যরা ছয়টার দিকে গীর্জা থেকে বের হয়ে সেনানিবাসে চলে যায়। ফাদার কে পাচ এপ্রিল গীর্জা চত্বরে কবর দেওয়া হয়।আর ছয় জনকে কোন মতে গর্ত করে কবর দেওয়া হয়।সেদিন যারা মারা যান – ফাদার মারিও ভেরোনেসি,শহীদ অনিল সর্দার,শহীদ স্বপন পল বিশ্বাস,শহীদ প্রকাশ বিশ্বাস,শহীদ পবিত্রা বিশ্বাস,শহীদ ফুলকুমারি তরফদার,শহীদ ম্যাগদেলেনা তরফদার।

ফাদার মারিও ভেরনেসি এস এক্স এর সমাধীস্থল ।

যেহেতু খ্রিস্টান গনহত্যা।রাস্ট্র সব সময়ই নীরব থাকে, এবং ছিল।।এই শহীদদের জন্য কোন স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান করেনি। খ্রীষ্টানরাই গন কবর টিকে পাকা করে,আজো তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা :১। রঞ্জনা বিশ্বাস – মুক্তিযুদ্ধের খ্রীষ্টান সম্প্রদায়।
২। লে.কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতিক – ১৯৭১ সালে যশোরে গনহত্যা।

One thought on “যশোরের খ্রীষ্টান গনহত্যা, যে কথা ছিল অজানা।”
  1. লেখাটি অনেক ভাল লেগেছে | জেরী মার্টিন তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য তা না হলে আমার কাছে বিষয়টি অজানাই থেকে যেত |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *