আমাদের গ্রামে কীর্তনে আমরা কয়েকটি গান, অনেক বছর ধরে গেয়ে আসছি।আমার বাবাও যে গান গেয়েছেন,আমিও সেই গান গেয়ে যাচ্ছি।গানের কথাটা অনেকটা এ রকম” দেখে নব তারা তিন পন্ডিতেরা, চলে গেলে বেথলেহেমে হয়ো মাতোয়ারা,”আমরা এই তিন পন্ডিতের কাহিনী বাইবেলে পেয়েছি। তিন পন্ডিত যীশু খ্রীষ্টের জন্মের পর তাকে পূজা করতে বেথলেহেমে পৌছেছিল, আকাশের তারা দেখে। আকাশের তারা তাদের পথ দেখিয়ে দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।গোয়াল ঘরের উপরে যখন থামল,তখন পন্ডিতেরা বুঝতে পারল,যে,এখানেই সমগ্র মানব জাতীর মুক্তিদাতা জন্মেছেন, এখানেই জন্ম নিয়েছেন,রাজাদের রাজা, মহান যীশু খ্রীষ্ট।। এখন কথা হচ্ছে,আমাদের এই তিন পন্ডিতের কথা বলা হয়, কিন্ত এই তিন পন্ডিত সমন্ধে আমরা কতটুকু জানি?

যীশুর জন্মের ১২ দিন পর এই তিন পন্ডিত শিশু যীশুকে দেখতে গিয়েছিলেন। দিনটা ছিল জানুয়ারী মাসের ৬ তারিখ। এই দিনটা থ্রী কিংস ডে নামে সমগ্র খ্রীষ্টান বিশ্বে পরিচিত।ইউরোপে,ল্যাটিন আমেরিকা,আফ্রিকার কিছু দেশে এই দিনটা বড়দিনের মত পালন করা হয় এমন কি সরকারী ছুটিও থাকে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও এই দিনটা জাকজমকপূর্ন ভাবে পালন করা হয়। কিন্ত অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়,এই দিনটা সমন্ধে আমাদের দেশের খ্রীষ্টানরা জানেই না।পালন তো করবে দূরের কথা।আমাদের মন্ডলী গুলোতেও এই দিনটা নিয়ে বিশেষ কোন দিবস পালনের কোন উৎসাহ ও দেখি না।যাই হোক,এই তিন পন্ডিত কে ছিল,আজকে তাদের নিয়েই কিছু বলি।


১.সাধু ম্যালশিওর হালিদঃউনার জন্ম প্রাচীন পারস্যে,যা ইরান নামে পরিচিত।তিনি ছিলেন প্যারসের ধন্যাঢ ব্যাক্তি। তিনি ছিলেন তিন পন্ডিতের ভিতর সবচেয়ে বয়োজেষ্ঠ পন্ডিত। নতুন নিয়মে তিন পন্ডিতের নাম উল্লেখ্য করা নেই,কিন্ত এই তিন পন্ডিত সমন্ধে জানা যায় প্রাচীন গ্রিসের কিছু পান্ডুলিপি থেকে। যা ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করা হয় যীশুর জন্মের ৫০০ বছর পর। সেন্ট বেদে যিনি ৬৭৩ সালে জন্ম গ্রহন করেছিলেন ইংল্যান্ডের নর্থ এম্বেরিয়াতে জন্মগ্রহন করেছিলেন, তিনিই প্রথম সাধু ম্যালশিওর সমন্ধে ধারনা দেন। তিনি বলেন,তিনি ছিলেন সবচেয়ে প্রাচীন একজন ব্যক্তি,সাদা চুল আর দীর্ঘ মোচ ছিল তার।এবং তিনি পারস্যের রাজা ছিলেন। তিনি যিশুকে উপহার সামগ্রী প্রদান করেন। রাজা হেরোদ যীশুকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল,তখন তিন পন্ডিত রাজাকে কিছু না বলে অন্য পথে নিজ দেশে চলে গিয়েছিল।তবে সাধু ম্যালশিওর ৫৪ খ্রীষ্টাব্দে বাকী দুই পন্ডিতের সাথে আরমেনিয়াতে দেখা করেছিলেন।উনি ১১৬ বছর জীবিত ছিলেন। ৫৫ খ্রীষ্টাব্দের জানুয়ারীর এক তারিখে উনি মারা যান।

২.সেন্ট ক্যাসপারঃ উনাকে গ্যাস্পার, জ্যাস্পার নামে ও ডাকা হয়ে থাকে। তবে আমি নিজে যখন উনার সমন্ধে পড়তে গেলেন, খুবই অবাক হয়ে গেলাম।কারন উনি ছিলেন একজন ভারতীয়।এনসাইক্লোপিডিয়াতে উনাকে ভারতের রাজা হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।ধারনা করা হয় উনি দক্ষিন ভারতের লোক ছিলেন।কেরালার পিরাভম নামক জায়গা থেকে উনি যীশু খ্রীষ্টকে দেখতে গিয়েছিলেন।পিরাভমে উনার নামে চার্চ ও আছে।তিনি ছিলেন বয়সের দিক থেকে মাঝারো,তিন পন্ডিতের মাঝে। সাধু ম্যালশিওর এর পর উনিই যীশুকে উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।তিনি তার মাথার মুকুট খুলে ফেলে যীশুর পায়ের কাছে রাখেন।ধারনা করা হয়,উনি শহীদ হয়েছিলেন।এও ধারনা করা হয়, বাকী দুই পন্ডিত কেও হত্যা করা হয়েছিল।তাদের দেহাবশেষ পারস্য থেকে, তুরস্ক হয়ে, তারপর ইতালীর মিলানে নেওয়া হয়।এর পর জার্মানীর কোলন ক্যাথিড্রালে তাদের দেহাবশেষ রাখা হয়।১১ ই জানুয়ারী উনার স্মরনে দিবস পালন করা হয়। উনিও ৫৫ খ্রীষ্টাব্দের ১১ ই জানুয়ারী ১০৯ বছর বয়সে মারা যান।।

৩.সেন্ট ব্যালথাজারঃ উনি আরবের লোক ছিলেন।উনি ছিলেন তিন পন্ডিতের ভিতর সবচেয়ে কম বয়স্ক। এবং উনি সবার শেষে যীশুখ্রীষ্টকে উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।উনার সমন্ধে তেমন কিছু জানা যায় না।দুই পন্ডিতের সাথে উনিও জার্মানীর কোলন ক্যাথিড্রালে সমাধিস্থ আছেন বলে ধারনা করা হয়ে থাকে। সাধু বেডের মতে,উনি কালো চামড়ার অধিকারী ছিলেন।উনিও ৫৫ খ্রীষ্টাব্দের ৬ ই জানুয়ারী মারা যান, ১১২ বছর বয়সে।।

যাই হোক,আমরা এই পন্ডিতের উপহার দেবার কথা জানি,কিন্ত তাদের পরিচয় আমরা জানি না।আশা করি ভবিষ্যৎ এ কোন দিন, এই বাংলাদেশে আমরা থ্রী কিংস ডে পালন করব, মহাসমারোহে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *