ভারতের মনিপুর জ্বলছে,আর মোদী সাহেব বাশী বাজাচ্ছেন।মেইতে আর কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে চলছে, এক স্বাধীন দেশে বেচে থাকার এক লড়াই।।মেইতেরা হিন্দু আর কুকিরা খ্রীষ্টান।।মেইতেরা মনিপুরে সংখ্যা গরিষ্ট।। প্রায় ৫০% শতাংশ মনিপুরের বাসিন্দা মেইতে সম্প্রদায়ের আর ২৫% শতাংশ কুকি সম্প্রদায়ের।। এখন পর্যন্ত ২০০ এর উপর গীর্জা মনিপুরীতে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।।কুকি সম্প্রদায়ের দুই নারীকে নগ্ন করে, রাস্তায় ঘুরানো হয়েছে।।আরো অনেক ধরনের নির্যাতন হচ্ছে,খ্রীষ্টানদের উপরে।। যেহেতু সমসাময়িক ব্যাপার, এই বিষয় গুলো বেশীর ভাগ মানুষ জানে বিধায়, আমি আর লেখার প্রয়োজন বোধ করছিনা।খ্রীষ্টানরা কোথায় মার খাচ্ছে না? খ্রীষ্টানরা মার খাচ্ছে, ভারতে,মার খাচ্ছে সিরিয়ায়, মার খাচ্ছে উত্তর কোরিয়ায়, মার খাচ্ছে চীনে,মার খাচ্ছে সৌদি আরবে, মধ্যপ্রাচ্যে।।মার খাচ্ছে সোনার বাংলাদেশে।।
বাংলাদেশে দেশে নাকি খ্রীষ্টানরা খুব সুখে আছে।কতিপয় ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ হাছিলের জন্য দেখলাম বিবৃতি দিয়েছে।।আমরা সুখে আছি।।হ্যা,আমরা অনেক সুখে আছি!!কোটালী পাড়ায় গীর্জায় ভিতরে বোমা হামলা করে,খ্রীষ্টানদের হত্যা করা হলো,সুনীল গমেজ কে দিনে দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হলো,সাওতালদের গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হলো,জি জনাব, তারপরেও আমরা সুখে আছি।।তবে আমি এই কথা বিশ্বাস করি,বর্তমান সরকারের সময়ে অন্য যে কোন সরকার থেকে তুলনামূলক কম অত্যাচার হয়েছে খ্রীষ্টনদের উপর।। আমরা খ্রীষ্টান এম পি পেয়েছি,খ্রীষ্টান মন্ত্রী ও পেয়েছিলাম।।বর্তমান সরকার এই দিক থেকে সাধুবাদ পেতেই পারে।।
খ্রীষ্টান নির্যাতনের পরিস্থিতি দেখলে অবাক হতে হয় আমাদের।।৩৬০ মিলিয়ন খ্রীষ্টান ২০২২ সালে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে শুধুমাত্র তাদের বিশ্বাসের কারনে।।। সংখ্যাটা কম নয়।। প্রতিদিন ৮ জন খ্রীষ্টান কে হত্যা করা হয়, তাদের ধর্ম বিশ্বাসে জন্য। প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৮২ টি চার্চে হামলা করা হয়,প্রতি মাসে গড়ে ৩০৯ জন খ্রীষ্টান কে অন্যায় ভাবে বন্ধী করা হয়। ভাই আমি বলি নাই এইগুলা।এই তথ্য দিয়েছে,ওয়ার্ল্ড ওয়াচ লিস্ট,আর ওপেন ডোরস ইন্টারন্যাসনাল।খ্রীষ্টানদেশ হিসেবে যে সব দেশ কে আমরা চিনি, তাদের দেশে সংখ্যালঘুরা কি ভাবে রাজার হালে থাকে তা আমরা দেখি।।ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে, মরু ভুমি, বন জংগল পাড়ি দিয়ে লাখ লাখ অখ্রীষ্টান ঢুকঁছে, তাদেরকে জামাই আদর করা হচ্ছে।অথচ পাকিস্তানের মত দেশে হাজার হাজার খ্রীষ্টানদের হত্যা করা হচ্ছে,জোর করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে,সেদিকে কোন খেয়াল নেই তথাকথিত মানবতা ফেরিওয়ালা ইউরোপ আমেরিকার দেশ গুলোতে।। মানবতা দেখাতে গিয়ে, এরা কবে যে জায়গা মত লাথি খাবে,সেই দিনটার প্রত্যাশায় আছি।।
খ্রীষ্টানরা নির্যাতনের স্বীকার যে দেশ গুলোতে সবচেয়ে বেশী,তার মাঝে প্রথমে আছে উত্তর কোরিয়া।। নাস্তিক, কমিউনিস্ট দেশে খ্রীষ্টানরা নির্যাতনের স্বীকার সবচেয়ে বেশী।।পঞ্চাশ হাজারের বেশী খ্রীষ্টানকে শুধু মাত্র বন্দি করা হয়েছে শুধু মাত্র তাদের বিশ্বাসের জন্য। ২০১৩ সালে যেখানে ১২০০ খ্রীষ্টানকে হত্যা করা হয় সেখানে ২০১৪ সালে এসে ২৪০০ খ্রীষ্টানকে হত্যা করা হয়েছে শুধু মাত্র তাদের বিশ্বাসের কারনে।।
আফগানিস্তানে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার পুরোপুরি নিষিদ্ধ।অথচ খ্রীষ্টানদেশ গুলোতে গলি গলিতে মসজিদ, মন্দির, গড়ে উঠছে।।আফগানিস্তানে কি পরিমান নির্যাতন করা হলে, খ্রীষ্টানরা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয় তার জ্বলন্ত উদাহারন হলো,৪১ বছর বয়সী ব্যক্তি আব্দুল রহমান নামের এক ব্যক্তি।উনি ক্যাথলিক খ্রীষ্টান হয়েছিলেন, উনাকে মৃত্যদন্ড দেওয়া হয়।।জি,শুধু মাত্র ধর্ম পরিবর্তন করার কারনে মৃত্যদন্ড।।
এর পর আসে আরেক মুসলিম দেশ সোমালিয়ার নাম।সোমালিয়াতে কেউ যদি ধর্ম ত্যাগ করে খ্রীষ্টান হয় তাকে প্রকাশ্যে গলা কেটে হত্যা করা হয়।। বুঝেন কি অবস্থা।।২০১১ সালে শুধু মাত্র খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহনের কারনে দুই জন খ্রীষ্টানকে প্রকাশ্যে গলা কেটে হত্যা করা হয়।।
সুদান, একটা সময় আকারের দিক থেকে অন্যতম বৃহত্তম দেশ ছিল। তবে সুদান এখন দুই ভাগে বিভক্ত। এক টা সুদান অন্যটি দক্ষিন সুদান।। সুদানের দক্ষিন অংশ স্বাধীন হবার অন্যতম প্রধান কারনই ছিল ধর্ম। সুদানের দক্ষিন অংশের বেশীর ভাগ মানুষই খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়।। আর তখন থেকেই আস্তে আস্তে খ্রীষ্টানদের উপর নির্যাতন বাড়ায় সুদান সরকার।।দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যা হয় তাই হয়েছিল সুদানে।খ্রীষ্টানরা বাধ্য হয়েই প্রতিবাদ করেছিল,যার ফলশ্রুতিতে দক্ষিন সুদানের জন্ম হয়।। বর্তমান সুদানের মানুষ, বেশী নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে দক্ষিন সুদানীদের চেয়ে।।
এর পর আসে পাকিস্তানের নাম।যে নাম টা শুনলে প্রচন্ড ঘৃনা জাগে আমার মনে।২০০৫ সালে ফয়সালাবাদে গীর্জায় আগুন দিয়ে পুরিয়ে দেওয়া হয়। স্কুল গুলোতে আগুন দেওয়া হয়। শুধু ধর্ম অবমাননার অজুহাতে। ২২ শে সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে পেশয়ার রে অল সেন্ট চার্চে আত্নঘাতী বোমা হামলা করা হয়। ১২ জন মারা যায় আর আহত হয় ২৫০ জনের বেশী। কারন টা যেহেতু বাংলাদেশে আছি নিরাপত্তার জন্য বলতে পারছি না। ১৫ ই মার্চ লাহোরে ২০১৫ সালে ইউহানাবাদ শহরে রোমান ক্যাথলিক চার্চে বোমা হামলা করা হয় ১৫ জন নিহত হয় ৭০ জন আহত হয়। কোয়াটায় ২০১৬ সালে গীর্জায় আবারো আই এস জংগী দারা বোমা হামলা করা হয়। মারা যায় ৯ জন। আহত অনেকে।এই রকম আরো হামলা র কথা বলতে পারব। লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে সেই জন্য বলছিনা। ২০১৭ সালে ওপেন ডোর স নামে একটি জরিপে বলেছে যে ২০১৫ এর পহেলা নভেম্বর থেকে ২০১৬ এর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বে র মধ্যে সবচেয়ে বেশী খ্রিষ্টান ধর্মীয় কারনে হত্যা করা হয়েছে পাকিস্তানে। সংখ্যা টা ৭৬। এই সময়ে সারা বিশ্বে ১৩২৯ টি গির্জায় হামলা করা হয় যার মধ্যে পাকিস্তানে ই ছিল ৬০০ টি। ভাবেন। ভাবার সময় এসেছে। পাকিস্তানে প্রতি দিন খ্রিস্টান মেয়েদের কে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়।
আছিয়া বিবি র কথা হয়ত সময় হলে পোস্টের মাধ্যমে জানাবো। আপনারা শাহাবাজ ভাট্টির নাম শুনেছেন? তিনি ছিলেন পাকিস্তান এর একমাত্র খ্রীষ্টান মন্ত্রী। নির্মম ভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয় কারন উনি ব্লেসফেমী আইনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন দেখে। পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী বলেন যে, ভারতের সংখ্যা লঘু নির্যাতন হচ্ছে। কেদে কেটে বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মত বিছানা বালিশ কম্বল সব ভিজিয়ে ফেলছেন অথচ নিজ দেশের সংখ্যা লঘুরা কেমন আছে এই বলদ বলতে পারবেনা। এই বলদ, ফ্রান্সে কার্টুন ছাপানোর প্রতিবাদ করে,জাতীসংঘে গিয়ে আর চীনের উইঘুরে মুসলিমদের মেরে একাকার করে ফেলছে সেটা নিয়ে কোন কথা তো বলেই না উল্টো আরো চীনকে উৎসাহ দিচ্ছি মুসলিম নির্যাতনের জন্য। কারন বাপকে সাহায্য না করলে বাপ ঋন দিবে না।২০০৯ সালের পহেলা আগস্ট গুজরাতে, ৪০ টি খ্রিস্টান বাড়ি ও গির্জার ভিতরে যখন ৮ জন খ্রিস্টান কে পুড়িয়া মারা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ছিল চারজন মেয়ে ( একজন ছিল গর্ভবতী) পুলিশ তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তালি দিচ্ছলো। ইমরান খান রা কোন দিনও এই হত্যা কান্ড গুলার প্রতিবাদ করে না,কারন নিয়াজী র বংশধরদের শরিরে বেইমানীর রক্ত বইছে।
এর পর আসে ইরিত্রিয়ার নাম।ইরিত্রিয়া আফ্রিকা মহাদেশের একটি দেশ।। এই দেশে ইরিত্রিয়ান ক্যাথলিকদের বাস।বলে রাখা ভালো, পৃথিবীতে ২৩ ধরনের ক্যাথলিক আছে।যাদের মধ্যে ইরিত্রীয়ান ক্যাথলিক একটি।।কোন এক সময়, এই ২৩ ধরনের ক্যাথলিকদের নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।এই ইরিত্রিয়াতে খ্রীষ্টান হয়ে জন্মানো মানেই পাপ।।
এর পর আসে লিবিয়ার নাম।।এই দেশেও খ্রীষ্টানদের উপর চরম নির্যাতন করা হয়। মাত্র ৪০ হাজার খ্রীষ্টান ৭০ লক্ষ মানুষের মাঝে।।কিছুদিন আগেও লিবিয়াতে ছয় জন কে হত্যা করা হয় খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহনের কারনে।।
এর পর যে দেশ সেই দেশটা হলো ইরাক।।ইরাক এক সময় জরথুরুস্ট ধর্মে বিশ্বাসী একটা দেশ।জরথুরুষ্ট প্রাচীন একটা ধর্ম যা এখন আর নেই।সেই ইরাকে এক সময় বিশাল সংখ্যক খ্রীষ্টানদের বসবাস ছিল।ইসলামিক স্টেট দখল নেবার পর হাজার হাজার খ্রীষ্টান কে হত্যা করা হয়,এবং মহিলা এবং শিশুদের যৌন দাসী হিসেবে বিক্রি করা হয়।। গত দুই দশকে ৮০% খ্রীষ্টানদের সংখ্যা কমেছে ইরাকে।।। বর্তমানে ২৫০০০০ লক্ষ খ্রীষ্টানদের বাস ইরাকে।।
এর পরের দেশ টি হলো ইয়ামেন।। এই দেশ একটা সময় খ্রীষ্টানদের পদচারনায় মুখর ছিল।বর্তমানে ইয়ামেনে খ্রীষ্টানদের সংখ্যা কমতে কমতে তলানীতে এসেছে।মাত্র ২৫ হাজার খ্রীষ্টান বাস করে ইয়ামেনে।।
সর্বশেষ দেশটি হলো ইরান।।। ইরানে নিয়ে কিছু বলার থাকে না।এরা কোন দেশের কাতারে পরে বলে মনে করি না।এক হিজাব ইস্যুতে নিজেদের দেশের মানুষকে পাখির মত গুলি করে মেরেছে,ফাসী দেওয়া হয়েছে কয়েক শ মানুষকে। তবে আশার কথা হচ্ছে যে,ইরানে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম হচ্ছে,খ্রীষ্টান।।
আমি যে লিস্টটা প্রকাশ করেছি,সেটা মন গড়া নয়। ভ্যাটিকান নিউজ এবং অনেক গুলো সাইটের তথ্য নিয়েই এই লেখা।।