কাস্মীরী পন্ডিত- যাদের কথা বলা পাপ সোনার বাংলা দেশে। যাদের গনহত্যা নিয়ে কেউ কথা বলে না।আমাদের এই দেশে অনেক কিছু নিয়ে কথা বলা পাপ। আপনি পলাশীর যুদ্ধ নিয়ে সিরাজ উদ্দোলাহর বিপক্ষে বলবেন সেটা পাপ,১৯৪৬ সালের নোয়াখালীর দাঙ্গা নিয়ে কথা বলবেন সেটা পাপ, আপনি আর্মেনিয়ান গনহত্যা নিয়ে কথা বলবেন সেটা পাপ, এমন কি আপনি সংখ্যা লঘু নির্যাতন নিয়ে কথা বলবেন সেটা বলা তো মহাপাপ। দেখেন না,এক প্রিয়া সাহা কথা বলেছে,সে আর দেশে আসতে পারছেনা।প্রিয়া সাহা কি মিথ্যা বলেছিল? ১৯০১ সালে মোট জনসংখ্যার ৩৩% হিন্দু বাংলাদেশে বাস করতে।১৯৪১ সালে তা দাঁড়ায় ২৮%, দেশ ভাগের পর মানে ১৯৪৭ এর পর তা দাঁড়ায় ২২.৫%। মুক্তিযুদ্ধের আগে ১৮.৫% যুদ্ধের পর ১৯৭৪ সালে হয় ১৩.৫%। আর ৫০ বছর পর এখন ৯%.হিন্দুরা কি বাচ্চা জন্ম দিতে ভুলে গেছে নাকি? তাহলে কেন ওদের সংখ্যা কমছে। ১৯৪৬ সালের অক্টোবরে রায়েটের সময় ৭৫ থেকে ১লক্ষ হিন্দুকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।৩০০ এর উপর নারীকে ধর্ষন করা হয়েছে।৫০০০ মানুষ কে হত্যা করা হয়েছে।যেমন টা আজ আফগানিস্তান এ করা হচ্ছে।
যে কাস্মীর নিয়ে এত কথা সেই কাস্মীরের পন্ডিত দের কথা তো আমাদের বলাই হয় নি।বাংলাদেশের ইতিহাসের বই গুলাতে কখনো কি কাস্মীরী পন্ডিতদের কথা দেখেছেন।এই প্রজন্ম জানেই না কাস্মীরী পন্ডিত কারা ছিল। আর কিভাবে এই কাস্মীর, থেকে পন্ডিত দের বিতারিত করা হয়েছিল। কাস্মীরী পন্ডিতদের নিয়ে বলার আগে, কাস্মীর নিয়ে কিছু বলার দরকার। কাস্মীর, মুলত সম্রাট অশোকের আমল থেকেই কাস্মীরি পন্ডিত দের দখলে ছিল।সম্রাট অশোক এই অঞ্চল টাতে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশ ঘটান। সম্রাট আকবরের আমল থেকে শুরু করে আরঙ্গজেব মানে ১৫৮৭ সাল থেকে ১৭৫২ সাল পর্যন্ত মোঘলদের অধীনে ছিল কাস্মীর। আর ১৭৫২ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে আফগান শাসকদের অধীনে চলে যায় কাস্মীর।আসলে এটাকে অধীনে না বলে ডাকাতদের অধীনে চলে যায় বলা ভাল।১৮১৯ সালের দিকে কাস্মীর দখল করে নেয় শিখ রা। কিন্ত সেই সময় মোটামুটি ভাবে ইংরেজরা ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করা শুরু করে। তাই কাস্মীর এর স্বাধীনতা আবার হারায় ব্রিটিশদের কাছে।আমি একটু ছোট করস ঘটনার বর্ননা করছি,কারন লেখা না হলে বড় হয়ে যাবে।কাস্মীর কিভাবে কেনা হয়েছিল ব্রিটিশদের কাছ থেকে সেটা আরেক দিন বলা যাবে।১৮ ৪৬ সালে হিন্দু ডোগরা রাজা গোলাব সিং ৭৫ লক্ষ রুপীতে ইংরেজদের কাছ থেকে কাস্মীর কিনে নেন।আজকের আজাদ কাস্মীর যা পাকিস্তানের আর ভারতের কাস্মীর পুরাটা কিনে নেন তিনি।১৮৪৬ সাল থেকে মহারাজা গোলাব সিং,তারপর রনবীর সিং,তারপর প্রতাপ সিং আর সর্বশেষ মহারাজা হরি সিং কাস্মীর শাসন করে।
১৯৪৭ সালে যখন দেশ ভাগ হয়,তখন রাজা হরি সিং কে তিনটা অপশন দেওয়া হয়, ১.পাকিস্তানের সাথে যাওয়ার২.ভারতের সাথে যাওয়া আর সর্বশেষ স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে বেচে থাকার। কিন্ত রাজা হরি সিং খুব ভাল ভাবেই জানতেন যে পাকিস্তানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাকে কোন ভাবেই স্বাধীন দেশ হিসেবে থাকতে দিবে না।তাই তিনি কিছু দিন সময় নিলেন। কিন্ত জিন্নাহ্ র আংগুল হিলানিতে ২২ শে অক্টোবর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আর কাস্মীর উপজাতীয় নেতারা কাস্মীর আক্রমন শুরু করলে নিরুপায় হরি সিং নেহেরুর কাছে আর্জি নিয়ে আসল যে, তিনি ভারতের সাথেই থাকতে চান। তবে বিশেষ মর্যাদা নিয়ে।২৬ শে অক্টোবর ১৯৪৭ সালে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন কে সামনে রেখে instrument of accesion চুক্তি সাক্ষরিত হল। এবং কাস্মীর কে ৩৭০ ধারা অনুযায়ী বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হল।চুক্তি সাক্ষরিত হবার পর,নেহেরু ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিলেন যে, কাস্মীর উদ্ধারের।ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান বাহিনীর কাছ থেকে যখন দুই তৃতীয়াংশ জমি দখল করে নেয়, এবং বর্তমান পাকিস্তানের গিলগিট, বালেতেস্তান উদ্ধারে এগিয়ে যাবে ঠিক তখন ই কোন এক অদৃশ্য কারনে সেই যুদ্ধ বন্ধ করে দেন নেহেরু।আর নেহুরুর সেই ভুলে পাকিস্তানের কাছ থেকে সম্পুর্ণ কাস্মীর আর উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি।আর আজ সেটার নাম আজাদ কাস্মীর।কিসের আজাদ কাস্মীর।বাস্তবিক পক্ষে আজাদ কাস্মীর পাকিস্তানের এক নির্যাতিত অঞ্চলের নাম।পাকিস্তান কোন দিন ও এই কাস্মীরের আশা ছাড়ে নাই।১৯৬৫ সালে, ১৯৭১ সালে ১৯৯৯ সালে কাস্মীরকে পাবার ব্যাকুলাতায় যুদ্ধ হয়েছে পাকিস্তান আর ভারতের মধ্যে।এর পর সিমলা চুক্তির মাধ্যমে সেটা মিটিয়ে নিয়েছে দুই দেশ। যা সম্পাদন হয় ১৯৭১ সালে। বার বার মার খাবার পরও পাকিস্তান ভারতের কাছ থেকে কাস্মীর ছিনিয়ে নেবার চেস্টা করে। আসলে পাকিস্তানের সামরিক খাতের যে বাজেট তা ভারতের তুলনায় অনেক কম।ভারত ৮ বিলিয়ন ডলারে ফ্রান্সের কাছ থেকে রাফায়েল কিনেছে,আর পুরা পাকিস্তানের সামরিক বাজেট ৮ বিলিয়ন ডলার।যাই হোক,রুশ আফগানিস্তান যুদ্ধের সময়, আমরিকার সহযোগিতায়, আজাদ কাস্মীরে এক মুজাহিদ বাহিনী গড়ে তুলে পাকিস্তান। যাদের কে দিয়ে আফগানিস্তান এ রুশ বাহিনীর উপর হামলা চালানো হত। সেই বাহিনী ই আজকের তালেবান। রুশ বাহিনী, এই তালেবানদের নিকট পরাজিত হলে,এই বাহিনীকে নিয়ে মহামুস্কিলে পরে পাকিস্তান। তখন এই বাহিনীকে পাঠানো হয়, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাস্মীরে।এত দিন ধরে চলে আসা,কাস্মীরী পন্ডিত আর মুসলিমদের সম্পর্ক আস্তা আস্তে খারাপ হতে শুরু করে।১৯৯০ সালের পর থেকে কাস্মীরি পন্ডিতদের তাড়ানো শুরু হয়। সেই বছর তিন লক্ষ কাস্মীরী কে কাস্মীর ছাড়তে বাধ্য করা হলো।বেশীর ভাগ আশ্রয় নিল জম্বুতে আর বাকীরা ভারতের বিভিন্ন শহরে প্রান বাচাতে পালালো। বিত্তশালী কাস্মীরী পন্ডিতেরা হয়ে গেল চাকর। আর এদিকে ফেলে আসা সম্পদ দখলের মহাউৎসব চলে কাস্মীরে।এত বড় ঘটনা ঘটার পর ভারত সরকার কাস্মীরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে।আর শুরু হয় এক প্রকার যুদ্ধ। যা আজও বিরাজমান। পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী এক তা কথা প্রায়ই বলত,হাম হাজার সাল ঘাস খায়েঙ্গে, লে কিন কাস্মীর লেকে রাহেঙ্গে। মানে আমরা ঘাস খেয়ে বাচব, তবুও কাস্মীর নিয়েই ছাড়ব।আর এখনো পর্যন্ত পাকিস্তান, কাস্মীর দখলের চিন্তায় মত্ত।কাস্মীর বানেঙ্গা পাকিস্তান।
কাস্মীরী পন্ডিত দের ১৯৯০ সালের ২০ জানুয়ারী তিনটি অপশন দেওয়া হয়। রালিভ, গালিভ, সালিভ।রালিভ শব্দটার বাংলা বলতে চাচ্ছি না ,আগ্রহীরা খুজে দেখতে পারেন, নয় মরো, না হয় কাস্মীর ছাড়ো।বিত্তশালী কাস্মীরী পন্ডিতদের হত্যা করে,বাড়ির দরজায় ঝুলিয়ে রাখা হত। তিন লক্ষ পন্ডিতের পরিবারের মাঝে এখন মাত্র অবশিষ্ট আছে মাত্র কয়েক টি পরিবার। ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিন থেকে চার হাজার কাস্মীরী পন্ডিত কে হত্যা করা হয়েছে।অনেক মহিলাদের ধর্ষন করা হয়েছে।যেমন টা এখন আফগানিস্তানে হচ্ছে।তবে নরেন্দ্র মোদী, এই দিক দিয়ে কাস্মীর কে এক প্রকার ঠান্ডাই করে রেখেছেন।৩৭০ ধারা উঠিয়ে দিয়ে। আর এখন আবার কাস্মীরী পন্ডিতরা কাস্মীরে ফিরে যাচ্ছে।কাস্মীরী পন্ডিত রা নরেন্দ্র মোদীর জন্য আবার নতুন করে শুরু করতে পারছে।কিন্ত আফগানিস্তানের মানুষ কি পারবে তালেবান দের হাত থেকে বেচে নতুন করে শুরু করতে।