ইরানে ১৮১৪ বা ১৮১৭ সালে তাহেরী ঘোরাতোলেইন নামের একজন নারী জন্মগ্রহন করেন।মাত্র ৩৫ বছরে তাকে ইরান সরকার তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন। ওনার দুইটা দোষ পাওয়া গিয়েছিল,এক, উনি খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করেছিলেন আর দ্বিতীয় উনি হিজাব পরতে অস্বীকার করেছিলেন।উনাকে যখন হত্যা করা হয়,উনি বলেছিলেন আপনারা হয়ত আমাকে হত্যা করতে পারেন, কিন্ত নারী শক্তিকে কখনো দমিয়ে রাখতে পারবেন না।১৮৫২ সালের ১৬ থেকে ২৭ আগষ্ট উনাকে হত্যা করা হয়। উনাকে হত্যা করার ঠিক ১৭০ বছর পর উনার কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাচ্ছে। ইরান জ্বলছে।আমি এটাকে ইরান জ্বালানো বলব না,বলতে চাই ইরানীর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এইটা।
মাশা আমিনী নামের এক ২২ বছরের নারীকে, ঠিক মত হিজাব না পরার কারনে নির্মম ভাবে অত্যাচার করে খুন করা হয়েছে।মোটামোটি এই নারীর কাহিনী ইন্টারনেটের এই যুগে আমরা জেনে গেছি।১৯৭৯ সালের ইরানের ইসলামিক বিল্পব হবার পর থেকেই নারী দের উপর অত্যাচার শুরু হয়।বাধ্য করা হয়,খামেনিরদের পছন্দের পোষাক পরতে। যা, ওই নারীরা কখনো পরতে চাই নি।জোর পূবক এই পোষাক তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীর ইচ্ছায় চলে ইরানের জীবন যাপন।উনার স্বেচ্ছাচারিতার কারনে ইরান আজ ধবংশের দিকে ধাবিত হচ্ছে।ইরানের যেই অর্থনৈতিক অবস্থা তাতে দেশটা উঠে দাড়াতে পারছে না।আমি যখন এই পোষ্ট করছি,তখন এক কাপ চা বানিয়ে লিখছিলাম।ধরে নেই, এক কাপ চায়ের দাম, চা পাতা,দুধ,চিনি,পানি মিলিয়ে দশ টাকা। ঠিক একই চা ইরানে সেটার দাম চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা।বাংলাদেশের মত একটা দেশের টাকার মান ইরানের থেকেও অনেক বেশী।এক টাকা সমান প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ ইরানী রিয়েল।
বাংলাদেশের ২০২২ সালে দারিদ্র্য সীমানায় নিচে বসবাস কারী মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৪.৩%। একবারেই হত দরিদ্র ১২.৯%।যাদের দৈনিক ইনকাম ২.১৫ ডলার থেকেও কম। এবার তথা কথিত ইরানের দিকে নজর দেওয়া যাক, ইরানের দারিদ্র্য সীমা নীচে বাস করে ৩০% মানুষ। ১৭.৮০% মানুষ অতি দরিদ্র। বিপুল তেল থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার করতে পারছে না ইরান সরকার।। এই কোভিডের সময় ইরানে চিকিংসার অভাবে মারা গেছে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ।ইরান প্রথমে কোভিডের টিকা নিতে অস্বীকার করে,ইহুদী নাসাদের টিকা নিতে চায় নি ইরান। কিন্ত মৃত্যুর হার বাড়তে থাকায় অবশেষে বাধ্য হয়ে ঠিকা আমদানী করতে বাধ্য। সেটাও ভারত না থাকলে পারত কিনা সন্দেহ। অর্থনৈতিক ভাবে চরম বিপর্যস্ত একটা দেশ, যখন নিজেদের প্রশাসনের নিয়ম কানুন চাপিয়ে দিতে থাকে, আর জনগনের পিঠ যখন দেওয়ালে ঠেকে যায় তখনই মানুষ জীবনের মায়া ত্যাগ করে আন্দোলন করে।মানুষ বুঝে যায়, মারাই তো যাব,না হয় একবার যুদ্ধ করেই দেখি না!!
একটা কথা বাংলাদেশের কোন প্রত্রিকায় আপনারা পাবেন না।খুব ভালোভাবেই এই কথাটা গোপন করে যায়, বাংলাদেশের মিডিয়া। ইরানের আসলে কোন ধর্মের মানুষের সংখ্যা বেশী।আমাদের বেশীর ভাগের ধারনা ইরানে শিয়া মুসলিমদের সংখ্যা বেশী।বিষয় টা মোটেও ঠিক না।যেখানে ইরানে ২০১১ সালে ০.৩% মানুষ নিজেদের কে নাস্তিক দাবী করেছিল, ২০২২ সালে সেটার পরিমান দাঁড়ায় ৮.৮%। ৬০ % মানুষ নিজেদেরকে মুসলাম দাবী করে না।ইরান ইন্টারন্যাশনাল তাদের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করে যে,৩২% মানুষ নিজেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেয়। ৯% নিজেদের নাস্তিক দাবী করেছে,২২ % কোন ধর্মেই বিশ্বাসী না।৬% মানুষ নিজেদের অন্য ধর্মে দীক্ষিত করেছে বা ধর্মান্তরিত হয়েছে।ইরানে ৬১% মানুষ ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহন করে।৬০% মানুষ নামাজ আদায় করে না।৭১% মানুষ বিশ্বাস করে ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। চাপিয়ে দেওয়াতে বিশ্বাসী না।৪২% মানুষ বিশ্বাস করে পাবলিক প্লেসে ধর্ম প্রচার বন্ধ করা উচিত ৭৩% মানুষ হিজাব বাধ্যতামূলক করার পক্ষপাতিত্ব না।এবং ৫৮ % মানুষ ই হিজাবে বিশ্বাসী না।আরো মজার বিষয় হলো ইরানে মদ্যপান নিষিদ্ধ থাকলেও ৩৭% মানুষ নিয়মিত কিংবা অকেশনালী মদ্যপান করে।ইরানে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম হচ্ছে,খ্রীষ্ট ধর্ম। ৬০০০ এর বেশী চার্চ আছে ইরানে, ১৫ লক্ষের বেশী মানুষ যীশু খ্রীষ্টতে বিশ্বাসী। এমন কি প্রাচীন পারস্য বা বর্তমান ইরানের যে ধর্ম ছিল জুরথুরুষ্ট সেই ধর্মেও ফেরত যাচ্ছে।এখন,যখন জোর করে কোন পোষাক নিজের ধর্মে না থাকা সত্ত্বেও পরতে বাধ্যকরা হয়, তখন সেটা অপমান জনক।ইরানের জনগন যে বিষয় টা মানে না বিশ্বাস করে না,সেই মানুষ গুলোকে জোর করে ধর্মীয় পোষাক চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।খ্রীষ্টানদের কে জোর করে অন্য ধর্মের পোষাক পরতে বাধ্য করা হচ্ছে।মানুষ আর কত সহ্য করবে? এই পরিসংখ্যান দেবার মানে হলো,ইরানের মানুষ কি চায়।। জোর করে তো আর দাবায়ে রাখা যায় না।।
ইরান আবারো পুড়বে,আগুন ছড়িয়ে যাবে ইরানের সব খানে।আগুন লাগবে খামেনীর সিংহাসনে।সেদিন হয়তবা,আমার এই কথাটাই ঠিক হবে।ইরান পুরছে,খামেনী বাশী বাজাচ্ছে।