প্রথম কথা বলে রাখা ভালো যে,আমি কোন দিন ও ভারত বর্ষে মোঘল শাসনকে ভালোভাবে দেখি না।প্রথম কথা হচ্ছে,মোঘলরা কোন ভাবেই ভারতীয় ছিল না।দ্বিতীয় কথা হচ্ছে,এরা প্রচুর হিন্দু নারীকে ভোগের বস্তু বানিয়েছিলেন। সোজা কথায় হচ্ছে,এরা এদের হেরমে নারীদেরকে ভোগ্য পন্য হিসেবে ব্যবহার করত।এখন অনেকে বলতে পারেন,রাজা বাদশারা এই কাজ হার হেমেশা করত। এটা দোষের কিছু না।।ইতিহাসের মহান অনেক সম্রাট রাজাদের এমন হেরেমের সন্ধান পাওয়া যায়।। আমিও মেনে নিলাম যে,ইতিহাসে সম্রাটদের যৌন লালসা মেটানোর জন্য হেরম থাকত।।এটা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল। জাত পাত না দেখেই মেয়েদের হেরমে ব্যবহার করত। কিন্ত মুঘলরা তাদের হেরেমে হিন্দু নারীদেরকে বন্দি করে রাখত।হিন্দুদের গনিমতের মাল মনে করে ভোগ করত।সম্প্রতি সময়ে আমার কর্মক্ষেত্রে, ১৫ ই আগষ্টের শোক সভায় একজন দাবী করল,সিরাজদৌল্লার মত দেশ প্রেমিক নাকি কেউ ছিল না।।টিভিতে যে ভাবে সিরাজদ্দৌল্লাকে যেভাবে দেখায়, আদো সিরাজদ্দৌল্লাহ কি এমন ছিল?নিজে হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করে, মুসলিম বানিয়েছে,হেরেমে ৫০০ এর মত যৌন দাসী ছিল।আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে,যে সিরাজদ্দৌল্লাহ কোন কালেই বাঙ্গালী ছিল না।উনি ঠিক মত বাংলায় কথা বলতে পারত কি না সন্দেহ আছে।কারন উনার মার্তৃভাষা ছিল ফার্সী।।এমন কি সিরাজ আর ইংরেজরা যখন যুদ্ধ করছিল, পলাশীর অম্রকাননে তখন এক দল কৃষক ক্ষেতে কাজ করছিল।তাদের কাছে এই যুদ্ধ কোন স্বাধীনতার জন্য ছিল না।এই যুদ্ধ ছিল বহিরাগত দুই শক্তির মাঝে।।তারপরেও সিরাজ কে বাঙ্গালী প্রমান করার জন্য পাঠ্যক্রমে বারবার তার দেশপ্রেমের কথা বলা হয়।। বার বার বলে বলে একজন ভিনদেশীকে হিরো বানানোর চেস্টা বহু কাল থেকেই করে আসছে বাংলাদেশ আর পশ্চিম বংগের বুদ্ধিজীবিরা।। যাই হোক, এই গুলো বললে অনেক কথা হয়ে যাবে।।মূল কথাটায় আসি।।

সম্রাট আকবরকে আমি মোটামুটি মন্দের ভালোহিসেবে মনে করি।।উনি কিছুটা সেক্যুলার মনে করি।সম্রাট আকবর,একটা নতুন ধর্মের প্রচলন করেছিলেন।এবং ১৩ জনের মত সেই ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন।কিন্ত তিনি কাউকে জোর করে ধর্ম চাপিয়ে দেন নি।যেমন টা দিয়েছিল সম্রাট আওরঙ্গজেব। উনার বিরুদ্ধে শত শত মন্দির ভাঙ্গার অভিযোগ আছে।সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে তেমন কোন অভিযোগ ছিল না।উনি হিন্দু, বৌদ্ধ, ইসলাম ধর্ম থেকে মানবতার জন্য কল্যানকর বানী গুলোকে একত্রিত করে একটি ধর্ম বানিয়ে ছিলেন।নাম দিয়েছিলেন দীন ই এলাহী।।এমনকি তিনি একধরনের কর,যার নাম জিজিয়া, সেই কর ও হিন্দুদের থেকে উঠিয়ে নিয়েছিলেন।

এবার আসি খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতি সম্রাট আকবরের মনোভাব কি ছিল?সম্রাট আকবরের আমলে তিনি জেজুইট ফাদারদের তার দরবারে আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন। তিনি খ্রীষ্ট ধর্ম সমদ্ধে জানতে আগ্রহী ছিলেন বিধায়, এই আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন।১৫৮০ সালের ১৮ ই ফেব্রুয়ারিতে, তিন জন জেজুইট ফাদার সম্রাট আকবরের দরবারে এসেছিলেন।ফাদার রুডলফ, ফাদার আন্তনী এবং ফাদার ফ্রান্সিস হেনরিক।।তখন ফাদারদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা,এবং ধার্মিকতা দেখে সম্রাট আকবর মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে তিনি তাদের ভারত বর্ষে ধর্ম প্রচারের অনুমতি দেন।। সেই সময় খ্রীষ্টানদের পদচারনায় ভারত মুখরিত হয়ে উঠেছিল।এদের বেশীর ভাগই ছিল ব্যবসায়ী।।তবে এরা বেশীর ভাগ ছিল আর্মেনীয় খ্রীষ্টান।ঢাকায় এখনো আর্মেনীয় খ্রীষ্টানদের চার্চ আছে। আস্তে আস্তে খ্রীষ্টানদের সংখ্যা বাড়ার কারনে জেজুইটরা একটা চার্চ করার জন্য সম্রাটের কাছে প্রস্তাব দেন।। সম্রাট আকবর সেই প্রস্তাব সানন্দে গ্রহন করেন এবং সেই সাথে তিনি জমি দান করেন গীর্জা তৈরীর জন্য।

সাল ১৫৮০।। আগ্রার ওয়াজিরপুরের, সিভিল লাইনস কমলা নগরের প্রতিষ্ঠিত হয় চার্চ অফ পিয়েটা।কিন্ত সম্রাট আকবর যেহেতু এই চার্চ প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক সহোযোগিতা করেছেন তাই সেখান কার লোক জন সেটাকে চার্চ অফ আকবর বা আকবরের গীর্জা নামে পরিচিতি লাভ করে। শুধু আকবর নয়, এমনকি সম্রাট জাহাঙ্গীর ও এই গীর্জা নির্মানের জন্য প্রচুর অর্থ প্রদান করেছিলেন।এখানেই কাহিনী শেষ হয় নি, আমরা অনেকেই জানি না যে,মুঘোল সম্রাজ্যের কয়েকজন রাজকুমার ১৬১০ সালে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করেছিল।রাজপুত্র দানিয়েল খ্রীষ্ট ধর্ম খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করেছিলেন কিনা সেটা নিশ্চিত ভাবে বলা না গেলেও তার তিন সন্তান যে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করেছিলেন সেই সমন্ধে জানা যায়।বলে রাখা ভালো যে,দানিয়েল মির্জা ছিলেন সম্রাট আকবরের ছেলে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের ভাই।। দানিয়েলের যে সন্তান খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করেছিলেন, তাদের নাম হলো,তাহমুরাস মির্জা ,বৈসানঘর মির্জা ,এবং হোশান মির্জা।খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহনের পর তাদের নাম হয় যথাক্রমে, ডন ফিলিপ,ডন কার্লোস, এবং ডন হেনরিক।।কোন দিন সময় পেলে অবশ্যই এই রাজ পুত্রের খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহনের কাহিনী লিখব।। তবে উনারা সবাই কি পরবর্তী তে ইসলাম ধর্মে ফিরে গিয়েছিলেন কিনা, সেই সমন্ধে না জানা গেলেও ধারনা করা হয় চার বছর পর উনারা নিজ ধর্মে ফেরত যান।।

সম্রাট আকবরের গীর্জা ঠিক মত চলছিল।কিন্ত জেজুইট ফাদার এবং খ্রীষ্টানদের মত বিরোধের কারনে সম্রাট শাহ জাহান ১৬৩৫ সালে সমস্ত খ্রীষ্টানদের এবং জেজুইদের বন্দি করে।।(এই বিষয়ে আমার একটা লেখা আছে,আমি কমেন্টে দিয়ে দিচ্ছি।)এবং আকবরের গীর্জা প্রায় ধবংশ করে।১৬৩৬ সালে জেজুইটরা ক্ষমা প্রার্থনা করলে সম্রাট শাহজাহান তাদের ক্ষমা করে দেন এবং নিজের তহবিল থেজে অর্থ দিয়ে গীর্জাটি পুনরায় নির্মান করে দেন।১৬৩৬ সালের ৮ ই সেপ্টেম্বর প্রথম খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করা হয়।। চার্চ অফ পিয়েটা বা আকবরের গীর্জা ১৭৬১ সালে পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধে আহমেদ শাহ আবদালী আবারো এই চার্চ ধবংশ করে দেন।লুট করে নিয়ে যায়,চার্চের অনেক মূল্যবান সম্পত্তি। তারপরেও ১৭৬৯ সালে জেজুইট ফাদার ওয়েন্ডেল সেটাকে আবার পুন:রায় নির্মান করেন।উনাকে সাহায্য করে ওয়াল্টার রেনহার্ট নামের একজন পর্যটক।যিনি একজন প্রটেস্টান হয়েও ক্যাথলিক চার্চ নির্মানে সাহায্য করেন।

আর এই ভাবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে,চার্চ অফ পিয়েটা বা আকবরের গীর্জা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *