আক্রান্ত মক্কা ১৯৭৯ সালের ২০শে নভেম্বর ।

১৯৭৯ সালে সালের ২০ শে নভেম্বর। একদল মানুষ দখল করে নেয় মুসলমানদের পবিত্র ধর্ম স্থান মক্কাকে।। জুহাইমান আল ওয়াইবি নামের এক লোক তার শ্যালক মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল কাহতানিকে ইমাম মেহেদী হিসেবে পরিচিত করিয়ে দখল করে কাবা শরীফ।প্রায় ৩০০ থেকে ৬০০ মানুষের এক গ্রুপ কাবা শরীফ দখল করে নেয় ১৯৭৯ সালের ২০ শে নভেম্বর।।

ইমাম মেহেদী। খ্রীষ্ট ধর্ম অনুযায়ী আমরা যেমন বিশ্বাস করি যীশু খ্রীষ্ট আবার আসবেন,ঠিক তেমনি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করা হয় ইমাম মেহেদী নামের একজনের আবির্ভাব হবে।জুহাইমান আল ওয়াইবি নামের এই লোকটা সৌদি আরবের রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে মোটামুটি অসন্তোষই ছিলেন।বিভিন্ন কারনে তাকে জেলে যেত ও হয়েছে।এই জেলে তার সাথে পরিচয় ঘটে মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ কাহতানির সাথে।তিনি তাকে বুঝাতে সক্ষম হন যে,আসলে তিনি আসলে ইমাম মাহাদী। কারন তার বাবার নাম আব্দুল্লাহ। যা কিনা নবী মোহাম্মদের বাবার সাথে মিলে যায়।। এই বেন ওয়াশে পরে উনি সত্যি সত্যি নিজকে ইমাম মেহেদী ভাবতে শুরু করলেন।জেল থেকে ছাড়া পাবার পর এই দুই জন মসজিদে মসজিদে নিজেদের মতাদর্শ প্রচার করতে শুরু করলেন।।সৌদি সরকার ঘূর্নাক্ষরেও টের পায় নি এই গ্রুপ টা আসলে কি করতে চাচ্ছে।।আসলে সৌদি সরকার এদের তেমন আমলে নেয় নি। ওরা লাশের খাটিয়া ব্যবহার করে আস্তে আস্তে খাদ্য,অস্ত্র পাতি মক্কা শরীফে ঢুকাতে শুরু করে। প্রচুর খেজুর এবং খাদ্য সামগ্রী এরা জমাতে পারে মক্কা শরীফের ভেতরে।সৌদি সরকার এই সমন্ধে কিছুই জানতে পারলনা।

২০ শে নভেম্বর ১৯৭৯ সাল। হিজরী মাসের প্রথম দিন। ফজরের নামাজ পরেছেন ৫০ হাজার মানুষ। ঠিক নামাজের পরই ইমামের কাছ থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে জুহাইমান ঘোষনা দিলেন যে ইমাম মেহেদী এসে গেছে।এবং বিভিন্ন হাদিস বর্ননা করার পর শ্যালক কাহতানিকে ইমাম মেহেদী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন।। ততক্ষনে সৌদি সরকারের কাছে মক্কা দখলের খবর পৌছে যায়।কিন্ত সেই সময় সৌদি বাদশা ফাহাদ ছিলেন তিউনিসিয়াতে। আর ন্যাশনাল গার্ড প্রধান প্রিন্স আব্দুল্লাহ ছিলেন মরক্কোতে। তাই এই কথিত ইমাম মেহেদীর নির্মুলের দায়িত্ব দেওয়া হয় ততকালীন প্রতিমন্ত্রী প্রিন্স সুলতানের উপর আর প্রিন্স নায়েফের উপর, যিনি ছিলেন ততকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।

তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়, ধর্মীয় বাধার উপর। কারন মক্কা শরীফের ভিতর মুসলিম মতাদর্শ অনুযায়ী রক্ত পাত করা হারাম। এখানে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতারা দ্বিধা দ্বন্ধে ভুগতে শুরু করলেন। কারন ইমাম মেহেদীর আসার অনেক ভবিষ্যৎ বানী মিলে যাচ্ছিল এই ঘটনার সাথে।আসলেই যদি এই লোক ইমাম মেহেদী হয় তাহলে বিষয়টা খুবই ন্যাকারজনক হবে।তবে ধর্মীয় নেতাদের সেই দ্বিধা থেকে মুক্ত করেন সেই ইমাম যার কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।ইমাম মোহাম্মদ আল সুবাইল। তিনি নারীদের পোষাক পরে,মক্কা থেকে বের হতে সক্ষম হয়েছিলেন।তিনি যখন এই ঘটনা সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাদের বললেন, তখন ধর্মীয় নেতারা বুঝতে পারলেন এটা একটি সন্ত্রাসী আক্রমণ। তখন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতারা মক্কার ভিতরে অপারেশন চালানোর অনুমতি দিলেন।

সৌদি আরবের পুলিশ বাহিনী মক্কা শরীফ উদ্ধারে চেস্টা চালায়। প্রায় একশ জন পুলিশ এই উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়।কিন্ত সন্ত্রাসীরা স্নাইপারের সাহায্যে প্রায় সবাইকেই হত্যা করে।এর পর সৌদি আরব সাহায্য চায় পাকিস্তানের কাছে,সাথে নিজেদের সেনাবাহিনী।। সৌদি আরবের সেনা বাহিনীর সাথে যোগ দিয়ে পাকিস্তান স্পেশাল ফোর্স এই উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দিলেও, কোন ভাবেই সন্ত্রাসীদের কাবু করা যাচ্ছিল না।কারন সৌদি সরকার ভেবেছিল যে এদের খাদ্য বন্ধ করে দিবে।কিন্ত সন্ত্রাসীরা বিপুল পরিমান খেজুর মজুত করেছিল।আর পানির উৎস ছিল জমজমের কুপ।

অবশেষে সৌদি সরকার সাহায্য নেয় ফেঞ্চ সরকারের।National Gendarmerie intervention Group.বা GIGN. এই গ্রুপের তিন জন চৈকস কমান্ডোকে পাঠালো ফ্রান্স সরকার। মক্কা নগরীতে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষেধ।তাই তাদের কে সাময়িকভাবে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করা হলো।সৌদি এবং পাক বাহিনী এই আক্রমনের তীব্রতা বুঝতে পারেনি। তাই অনেক সৈনকে প্রান হারাতে হয়েছিল। তত কালীন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ভ্যালেরী গিস্কার্ড কে সৌদি বাদশা অনুরোধ করলেন তাদের সাহায্যের জন্য। তখন প্রেসিডেন্ট ভ্যালেরী সেই ডাকে সারা দিয়ে সেই তিন জন কমান্ডোকে পাঠান মক্কা উদ্ধারের জন্য।কারন প্রেসিডেন্ট বুঝতে পারছিলেন যে,এই আক্রমনের সাথে তেল ব্যবসাও জড়িত। সেই তিন জন কমান্ডো, সৌদি আরব আর পাকিস্তানের তিন হাজার সেনার নেতৃত্ব দিলেন। যাকে বলে সামনে থেকে নেতৃত্ব। গ্রানেটের সাহায্যে ৫০ মিটার গর্ত খনন করে সেখানে এক ধরনের গ্যাসের ব্যবহার করা হয়।যার ফলে সন্ত্রাসীরা নিজেদের বাচাতে অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই আত্নসমর্পণ করেন। ফরাসী দলটি যেদিন দায়িত্ব নিয়েছিল তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মক্কা উদ্ধার করা হয়।

৪ ঠা ডিসেম্বর ১৯৭৯ সালে মক্কা পুনঃউদ্ধার করা হয়। তথাকথিত ইমাম মেহেদী যুদ্ধে নিহত হন, আর জুহাইমান সহ ৬৭ জন গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে তাদের মৃত্যদন্ড কার্যকর করে সৌদি সরকার। সেই দখলের ঘটনায় ২৫৫ জন মারা যায়, আহত হয় ৫৬০ জন।আর সেনাবাহিনীর মারা যায় ১২৭ জন আর আহত হয় ৪৫১ জন।।

আর এভাবেই শেষ ইমাম মেহেদীর অধ্যায়।এই ঘটনা আমাদের মানুষ জানে না।।জানার চেস্টাও করে না।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *