গনহত্যায় স্বীকার মানুষের জন্য নির্মিত সৌধ

স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় ২৫ শে মার্চ রাতে যে গনহত্যা পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের উপর করেছিল সেটা আমাদের সব গুলো পাঠ্য পুস্তকে বড় বড় করে ছাপানো হয়,পড়ানো হয়। কিন্ত কিছু কিছু গনহত্যার কথা আমাদের কে জানানো হয় না,কিংবা ধামা চাপা দেবার প্র‍য়াস সব সময় ই থেকে যায়। সরকার এবং রাজনীতিবিদরা, তা করে যায় অতি সংগোপনে। তেমনি একটি গনহত্যা হচ্ছে, গোলাহাট গনহত্যা।

১৯৭১ সালে ১৩ ই জুন ইতিহাসের এই নির্মম গনহত্যার স্বীকার হয় ৪৭৮ জন হিন্দু মাড়োয়ারী সদস্য কে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর কিছু সংখ্যক মাড়োয়াড়ি পরিবার স্বীধান্ত নেয় যে, তারা বাংলাদেশে থেকে যাবে। বর্তমান রংপুরের, নিলফামারীর জেলায় সৈয়দ পুরে থেকে যায় সেই পরিবার গুলো। দেশ ভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানের বিহারীরা এসে আস্তানা গাড়তে শুরু করে সেই জায়গায়। এক সময় দেখা গেল যে সৈকতে পুরের ওই অঞ্চলটিতে ৭৫ % বিহারী এবং সবাই উর্দু ভাষী।১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় দেখা গেল যে,পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী( বর্বর, জগন্য, কাপরুষ) উর্দু ভাষাভাষীদের কাছ থেকে ভালই সাহায্য সহযোগীতা পাচ্ছিল। সাথে ছিল এই দেশের কিছু রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনী। ১৯৭১ সালের ১২ ই এপ্রিল এই রাজাকার আলবদর এবং বিহারীদের সহযোগীদের মাধ্যমে তুলসীরাম আগরওয়াল, যমুনা প্রসাদ, রমেশ্বর লাল আগরওয়াল নামের এই লোক গুলোকে হত্যা করা হয়।এবং এই হত্যা কান্ড মাড়োয়াড়িদের মনে ভয়ের সঞ্চার করে। তারা স্বীধান্ত নেয় যে তার ভারতে চলে যাবে।

১৯৭১ সালে পহেলা জুন ১৮৫ জন মাড়োয়াড়ি হিন্দুকে পাকিস্তানী মেজর গুলের নেতৃত্বে সৈয়দপুর পাক ক্যান্টনমেন্ট এ নিয়ে আসা হয়,এবং তাদের দিয়ে গর্ত করা হয়, বলা হয় যে যুদ্ধের পরীখা খনন করা হচ্ছে।জুন মাসের ৫ তারিখে সমস্ত মাড়োয়াড়ি জনগন কে বলা হয় যে, তাদের কে চিলহাটি বর্ডার দিয়ে ভারতের জলপাইগুড়িতে পৌছে দেওয়া হবে।১৯৭১ সালের ১৩ জুন সকাল ৬ টায় মাড়োয়ারি পরিবার গুলোকে সৈয়দ পুর রেল স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। পরিবার গুলোর মানুষের বেচে যাবার আশায় ট্রেনে ঊঠল।তবে মাড়োয়াড়ি পুরুষদের আলাদা করে ফেলা হলো পরিবার গুলোর কাছ থেকে। এক দিকে রাখা হলো মেয়েদের অন্য দিকে পুরুষদের।সকাল ৮ টার সময় এক স্পেশাল ট্রেন এসে থামে সৈয়দ পুর রেল স্টেশনে। মেয়েদের কে আলাদা এবং ছেলেদের কে আলাদা করে কামড়ায় তোলা হয়। তবে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ২০ জনের মত মেয়েকে, যারা দেখতে সুন্দরী ছিল তাদের কে সেই ট্রেনে উঠতে দেয় নি। তাদের কে পাকিস্তানী ক্যান্টনমেন্ট এ পাঠানো হয়।

সকাল ১০ টায় সেই স্পেশাল ট্রেন ১০ টায় ছেড়ে যায় জলপাইগুড়ির উদ্দেশে। কিন্ত দুই কিলোমিটার যাবার পর সেই ট্রেন গোলাহাট নামক জায়গায় দাঁড়িয়ে পরে।।একে একে নামানো হয়, মাড়োয়াড়ি হিন্দুদের।পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে ছিল ধারালো বন্দুক আর বিহারী, আলবদরদের হাতে ছিল ধারালো রামদা। সেই দিন পাকিস্তানী বাহিনী কোন গুলো খরচ করে নি। মাড়োয়াড়ি হিন্দুদের রাম দা দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। শিশু, মহিলা কাউকে ছাড় দেওয়া হয় নি। মোট ৪৭৮ জন কে হত্যা করা হয়। আমরা যেটাকে জানি গোলাহাট গনহত্যা নামে, সেটিকে পাকিস্তান বাহিনী নাম
দিয়েছিলো অপারেশন খরচাখাতা।

এত সহজে স্বাধীনতা আসেনি।স্বাধীনতা আনতে অনেক রক্ত ঝরাতে হয়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *