জুলিয়ানা ডায়েস ডি কস্তা

                       

উপমহাদেশে খ্রীষ্টধর্ম প্রচারে এবং প্রসারে এবং টিকে থাকার ক্ষেতে এক খ্রীষ্টান নারীর হাত ছিল। সেটা হয়ত অনেকে জানে না কিংবা উনার নাম টাও হয়ত আমরা ভুলে গেছি।কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরন করা উচিত ছিল আমাদের। কিন্ত উনার নাম আমাদের ইতিহাসে মলিন। জুলিয়ানা ডায়েস ডি কস্তা।এক পর্তুগিজ নারী। যার কথা আমরা ভুলে যেতে বসেছি।আমাদের খ্রীষ্টান ইতিহাস এই নামটা ভুলে যেতে বসেছে।১৪৮৭ সালে বার্থেলেমিয় দিয়াজের হাত ১৪৯৮ এ পর্তুগীজ নাবিক ভাস্কো ডা গামা কালিকট বন্দরে হাজির হন।সেই সাথে পর্তুগীজ রা আসা শুরু করে আমাদের ভারত বর্ষে।কে এই জুলিয়ানা ডায়েস ডি কস্তাঃআগষ্টিন ডায়েস ডি কস্তা, জুলিয়ান ডায়েস ডি কস্তার বাবা যিনি ছিলেন ডাক্তার।ডাচরা কোচিন দখল ( বর্তমান কেরালার) করলে প্রান ভয়ে ডাক্তার সাহেব প্রথমে কোলকাতা তারপর হুগলী তে আশ্র‍য় নেন। কিন্ত পর্তুগীজদের ডাকাতী লুট তরাজের কারনে ১৬৩২ সালে পর্তুগীজদের আবাস স্থল ধবংশ করা হয়।এবং ৪০০০ হাজার পর্তুগীজ কে আটক করে আগ্রায় নিয়ে যাওয়া হয়। জুলিয়ানা ডায়েস ডি কস্তার সঠিক জন্মসাল নিয়ে মতবেদ আছে।অনেকে ধারনা করেন উনার জন্ম ১৬৪৫ আবার অনেকে মনে করেন ১৬৫৮। যাই হোক এই ৪০০০ জন বন্ধীর ভেতর জুলিয়ানা এবং তার পরিবার ও ছিল। জুলিয়ানার বাবা ডাক্তার হবার সুবাদে মোঘল হেরেমে দাসত্ব থেকে কিছুটা ছাড় পায়। মোঘলদের ধারনা ছিল ইউরোপীয়রা চিকিৎসা শাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী এই কারনে এই ছাড়।জুলিয়ানার বাবার মৃত্যুর পর জুলিয়ানা বড় হন,এক জেজুইট ফাদার আন্তনিও ডি,ম্যাগালহানেসের কাছে।আর উনার মাধ্যমে জুলিয়ানা দিল্লী মোঘল দরবারে প্রবেশের পথ টা অনেক টা সুগম করে নেন। বাল্য কালে জুলিয়ানা বিয়ে হয়েছিল এবং খুব কম বয়সেই তিনি বিধবা হয়েছিলেন। যাই হোক,জুলিয়ানা নবাব আওরঙ্গজেবের কাস্মীরী বংশদ্ভুত রাজাউরি রাজপুতের মেয়েকে দেখাশুনার দ্বায়িত্ব পান। যার নাম ছিল নবাব বাই।এই নবাব বাইয়ের এক সন্তান যার নাম ছিল মোহাম্মদ মুয়াজ্জেম,কিংবা শাহ আলম তার সাথেই এক গভীর প্রেমে জড়িয়ে পরেন জুলিয়ানা। এই শাহ আলম পরবর্তীতে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন। নাম ধারন করেন বাহাদুর শাহ।আজকে ২৩ তারিখ, আর আজ থেকে চার দিন আগে মানে ১৯ শে জুন ১৭০৭ সালে উনি দিল্লীর সিংহাসনে বসেন। আওরঙ্গজেব ১৬৮৭ সালে তার স্ত্রী নবাব বাইকে কারাদন্ড দেন ৭ বছরের জন্য( কারাভোগের কারন অন্য দিন ব্যখ্যা করব)।এই সাত বছর জুলিয়ানা নবান বাইয়ের সাথে সেচ্ছায় কারাবরন করেন। ১৬৯১ সালে নবাব বাই মারা যান। কথিত আছে,জুলিয়ানা এক বিরল রত্ন বাহাদুর শাহের নির্দেশে পাচার করেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে বাহাদুর শাহ তাকে জায়গীর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

সম্রাট বাহাদুর শাহ

১৭০৭ সালে আরওঙ্গজেব মৃত্যু বরন করেন। আর ১৭০৭ সালে জাজুয়ার যুদ্ধে বাহাদুর শাহ তার ভাই মুহাম্মদ আযম কে পরাজিত করে এবং হত্যা করে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন। এই যুদ্ধের মাস্টার মাইন্ড ছিলেন জুলিয়ানা। বাহাদুর শাহ যে হাতীতে করে যুদ্ধ করে ছিলেন সেই হাতীতে সাদা ক্রশ চিহ্ন একে দিয়েছিলেন জুলিয়ানা।আর সমস্ত খ্রীষ্টানদের অনুরোধ করেছিলেন বাহাদুর শাহ জয়ী যেন হয়। এবং যেহেতু জুন মাস যোহন দ্যা বাপটিস্টের মাস সেহেতু যোহনের নিকট প্রার্থনা করা হয় বাহাদুর শাহের জয়ের জন্য।আর সম্রাট বাহাদুর শাহ যোহনের পর্ব দিনের দিন জুলিয়ানার হাতে মুকুট পড়েছিলেন। সম্রাট বাহাদুর শাহ প্রকাশ্যে বলতেন, যদি জুলিয়ানা যদি পুরুষ হতেন তাহলে তিনি তাকে মন্ত্রি করতেন। জুলিয়ানা ছিলেন অত্যন্ত খ্রীষ্টভক্ত একজন মানুষ।তিনি প্রতিদিন ৪ ঘন্টা রোজারী মালা করতেন। রাজ কোষ থেকে দরিদ্রদের মাঝে অর্থ দান করতেন। মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখন নবাব বাই জুলিয়ান কে অনুরোধ করেছিলেন সে যেন তার সন্তানের জন্য প্রার্থনা করে।জুলিয়ানা যোহনের নিকট প্রার্থনা করেছিলেন, তাই বাহাদুর শাহ যখন সিংহাসনে বসেন তখন যোহনের নামে কোরবানী দিয়ে সিংহাসনে আরোহন করেন। জুলিয়ানার অনেক প্রভাব ছিল সম্রাট বাহাদুর শাহের উপর।পর্তুগিজ রাজা ভারত বর্ষে অবস্থানরত পর্তুগীজদের নিরাপত্তার জন্য জুলিয়ানাকে অনুরোধ করেছিলেন। জুলিয়ানা বাহাদুর শাহের মাধ্যমে সে অনুরোধ রক্ষা করেছিলেন। জুলিয়ানা শুধুমাত্র যে পর্তুগীজদের রক্ষা করেছিলেন তাই নয়,১৭১১ সালে লাহোরে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বিপদে পরেছিল। জুলিয়ানা কোন প্রকার উপহার ছাড়াই তাদের হেল্প করেছিলেন। এবং ডাচদের দিল্লীতে রাজ দরবার ঘুরিয়ে দেখেয়েছিলেন। জুলিয়ানা, অনেক জেজুইট ফাদার কে আর্থিক ভাবে সাহায্য করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিল, ইপ্পোলিটো দেশীদারী।উনি ১৭১৪ সালে তিব্বত খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচার করতে গিয়েছিলেন, উনাকে জুলিয়ানা প্রচুর অর্থ সাহায্য করেছিলেন। কথিত আছে এই জেজুইট বাহাদুর শাহকে প্রায় ই খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করে ফেলেছিলেন। এক গল্প প্রচলিত ছিল। এক বার রাজ দরবারে আগুন লেগেছিল। জুলিয়ানা তখন পাম ট্রী (যেটাকে খেজুর পাতা হিসেবে আমরা চিনি) নিক্ষেপ করে আগুন নিভিয়ে ছিলেন। এই ঘটনার পর সম্রাট বাহাদুর তার শোয়ার ঘরে সব সময় তালপাতা ঘরে রাখতেন। জুলিয়ানা সম্রাট বাহাদুর কে অনুরোধ করে জিজিয়া কর (মুসলিম প্রধান দেশে ভিন্ন ধর্মের মানুষ কে নত জানু হয়ে এই কর দিতে হয় মুসলিম শাসকদের)রহিত করেন। কথিত আছে,সম্রাট বাহাদুর শাহ ইপ্পোলিটো নামের জেজুইট ফাদারের কাছে মৃত্যু সজ্জায় দীক্ষাস্নান গ্রহন করেন,এবং খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করেন। এবং তা জুলিয়ানার হাত ধরেই। জুলিয়ানা ১৭০ একর জমিতে এক সরাইখানা তৈরী করেছিলেন। মহিশগড়ে একটা গীর্জাও নির্মান করেন। এই গীর্জা এখনো বিদ্যমান। এই গীর্জা ১৯১৮ সালে পুনঃ রায় নির্মান করেন। জুলিয়ানা ১৭৩৪ সালে মারা যান। তখন তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *